২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেয়াদোত্তীর্ণ টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টে নতুন তারিখ বসিয়ে বিক্রি

তিন প্রতিষ্ঠানের গ্রেফতার ৯
আটক মেয়াদোত্তীর্ণ টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্ট বিক্রেতারা : নয়া দিগন্ত -

করোনা মহামারীতে মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মাঠে নেমেছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। করোনা পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কিটসহ অন্যান্য উপাদান মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরে নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়ে বাজারজাত করছিল চক্রটি। শুধু করোনা নয়, ক্যান্সার, এইডস, জন্ডিস, ডায়াবেটিস ও নিউমোনিয়া রোগের কিটও তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে র্যাবের অভিযানে জালিয়াতিতে জড়িত এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানের ৯ জনকে গ্রেফতারের পর বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। চক্রটির কাছ থেকে প্রায় চার ট্রাক অনুমোদনহীন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ নকল টেস্ট কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মোহাম্মদপুরের বছিলায় র্যাব-২ এর কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার লালমাটিয়ায় বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বনানী এলাকায় অবস্থিত এক্সন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস ও হাইটেক হেলথকেয়ার নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউজে র্যাবের নির্র্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় অভিযান চালায়। এ সময় ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী শামীম মোল্লা (৪০), ব্যবস্থাপক শহীদুল আলম (৪২), প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল বাকী ছাব্বির (২৪), অফিস সহকারী জিয়াউর রহমান (৩৫), হিসাবরক্ষক সুমন (৩৫), অফিস ক্লার্ক ও মার্কেটিং অফিসার জাহিদুল আমিন পুলক (২৭), সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার সোহেল রানা (২৮), এক্সন টেকনোলজিস্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি মাহমুদুল হাসান (৪০), হাইটেক হেলথ কেয়ার লিমিটেডের এমডি এস এম মোজফা কামাল (৪৮)।
র্যাব জানায়, প্রতিষ্ঠানগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ এবং সহসা মেয়াদোত্তীর্ণ হবে এরূপ টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টগুলো দেশী-বিদেশী আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে অতি স্বল্পমূল্যে সংগ্রহ করে পুনরায় তাতে বর্ধিত মেয়াদের তারিখ বিশেষ মুদ্রণ যন্ত্রের সাহায্যে মুদ্রণ বা টেম্পারিং করে এই সব টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টগুলো বাজারজাত করে আসছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্টও তারা নিয়মিতভাবে সরবরাহ করে আসছিল।
র্যাব-২ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে- কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান অননুমোদিত মেডিক্যাল ডিভাইস আমদানিকরণ, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ করোনার টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টসহ অন্যান্য রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন রোগের টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্ট মজুদ ও বাজারজাত করে আসছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকায় অবস্থিত বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বনানী এলাকায় অবস্থিত এক্সন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড এবং হাইটেক হেলথকেয়ার লিমিটেড নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
অভিযানে দেখা যায়, তিন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশেষ ধরনের প্রিন্টিং মেশিনের সাহায্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার খুব অল্প সময় রয়েছে, এমন বিভিন্ন টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর কাজ চলছে। পরে তাদের ওয়্যারহাউজগুলোতে তল্লাশির সময় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সেখানে মজুদকৃত বেশির ভাগ মেডিক্যাল ডিভাইস অননুমোদিত, প্রায় সব ধরনের টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্টের ব্যবহারের মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা দ্রুতই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। করোনা ছাড়াও এইডস নির্ণয়ের জন্য নির্ধারিত প্যাথলজিক্যাল টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টও রয়েছে এই তালিকায়।
চক্রটি ২০১০ সাল থেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে বিদেশ থেকে বিভিন্ন রোগের কিট এনে তা টেম্পারিং করে মেয়াদ বাড়াত। এই তিন প্রতিষ্ঠান করোনা, ক্যান্সার, এইডস, জন্ডিস, ডায়াবেটিস ও নিউমোনিয়া রোগের টেস্ট কিটের মেয়াদ বাড়িয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করত।
এক প্রশ্নের উত্তরে লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, চক্রটি এসব মেয়াদোত্তীর্ণ কিট বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করত। বিদেশ থেকে আমদানি-রফতানি চ্যানেলের মাধ্যমে এসব সামগ্রী আনত। এ ছাড়া জার্মানি ও ইউরোপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকেও এসব সামগ্রী এসব কিট আনা হতো। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। শিগগিরই জড়িতদের বিষয়ে পুরোপুরি তথ্য পাওয়া যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement