২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিত্যপণ্যের বাজারে ডাকাতি!

-

গত বুধবার। রমজানের পয়লা দিন। অপর দিকে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন চলছে। বিকেলে রাজধানীর মানিকনগর মডেল স্কুলের সামনের রাস্তায় বের হয়ে দেখা যায় কয়েক হাজার মানুষ। মনে হলো বড় আকারের কোনো মিছিল। দু-একটি তরিতরকারির দোকান খোলা আছে। মানুষ ওই দোকানগুলোর ওপর যেনো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। যে যা হাতে নিতে পারছে ওগুলো ছাড়ছে না। একটু দেরি হলে যে আর কিছুই পাওয়া যাবে না! এটাই ছিল বাস্তব চিত্র। লকডাউনের অজুহাতে বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস উধাও। আর এই সুযোগে ৪০ টাকার টমেটো ১৪০ টাকা। ৪০ টাকার শসা ১২০ টাকা। তা নিয়েও মানুষের মধ্যে কাড়াকাড়ি। ক্রেতারা বলেছেন, এ যেন দিনে দুপুরে ডাকাতি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বেশ দেখা মিললেও কমেনি দাম। অনেকটা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকার নিচে বাজারে কোনো সবজি নেই। কলার দাম হয়েছে দ্বিগুণ। ক্রেতারা বলেছেন, এমন কোনো নিত্যপণ্য নেই, যার দাম বাড়েনি। এমনকি দুই-তিন গুণ বেড়েছে অনেক পণ্য।
সিদ্দিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানালেন, পয়লা রমজান তিনি একটি ডাব কিনেছেন ৯০ টাকায়। বাসায় নিয়ে কেটে দেখেন তাতে এক পোয়ার মতো পানি আছে। তিনি জানান, সেই হিসাবে এক লিটার ডাবের পানির দাম পড়ছে ৩৬০ টাকা। তিনি বলেন, একটি আনারস কিনেছেন ৪০ টাকায়। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এমন একটি আনারস ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। তাও কেটে দেন বিক্রেতা। অথচ রমজানের প্রথম দিনে সেই আনারসটি কিনেছেন ৪০ টাকায়। যারা দুটো কিনেছেন তারা ৭০ টাকায় পেয়েছেন।
গত বুধবার প্রথম রোজা, বাংলা নববর্ষ ও একই সাথে কঠোর লকডাউনের কারণে বাজারের যে উত্তাপ শুরু হয় তা গতকালও ছিল। অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এক দিন আগেও শসা বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। সেই শসা একেবারে ফ্রেশটি এখন ১২০ টাকা। আর দু-এক দিন আগের পুরনো শসাও বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি। যে টমেটো এক দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়; বুধবার সেই টমেটোই বিক্রি হলো ১৪০ টাকায়। ৪০ টাকার বেগুনের কেজি এখন ১০০ টাকা।
গতকাল কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পয়লা রমজানে যেভাবে পণ্যের জন্য হাহাকার ছিল গতকাল সেই পরিস্থিতি নেই। বাজারে সব পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। কিন্তু দাম অনেক। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৮০ টাকার নিচে কোনো পণ্যই নেই। রোজার আগেও আলুর কেজি ছিল ২০ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা।
পয়লা রমজানের দিন কঠোর লকডাউনের কারণে বেশির ভাগ এলাকায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা দোকানিদের বসতে দেয়নি। যে কারণে হঠাৎই বাজারে নিত্যপণ্যের সঙ্কট সৃষ্টি হয়। সেই সুযোগে যাদের কাছে কিছু পণ্য মজুদ ছিল, তারা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অথবা তাদেরকে ম্যানেজ করে আড়ালে আবডালে দোকান বসায়। আর সঙ্কটের কারণে মানুষের কাছে অধিক দামে সেসব পণ্য বিক্রি করে। মানিকনগর বাজারের একাধিক সবজি বিক্রেতা গতকাল জানান, যারা পুলিশকে ম্যানেজ করতে পেরেছে তারা পয়সা কামিয়েছে। পয়লা রমজান যে ব্যবসা করেছে তাতে অনেকের পুরো মাস ব্যবসা না করলেও চলবে। সঙ্কটের কারণে অনেকে কোনো পণ্যই কিনতে পারেননি।
শিবলি নামের এক ব্যক্তি পয়লা রমজান বিকেলে মানিকনগর বাজারে এসেছিলেন লেবু কেনার জন্য। তিনি জানালেন, বাজারে যে ক’টি দোকান তিনি খোলা পেয়েছেন কারো কাছে লেবু ছিল না। শিবলি বলেন, বাজারে হাজার হাজার মানুষ। আর বিক্রেতা মাত্র কয়েকজন। তিনি এক হালি কলা কিনেছেন ৪০ টাকায়। অথচ স্বাভাবিক সময়ে ওই কলার হালি ২০ টাকা। একাধিক ক্রেতা বলেছেন, রমজানের আগেই কয়েক দফায় পণ্যের দাম বেড়েছে। পয়লা রমজান লকডাউন হওয়ার কারণে ওই দিন যেন পণ্যের দাম আকাশ ছুঁয়ে যায়। একাধিক ক্রেতা বলেন, লকডাউন যতই হোক মানুষকে খেয়ে তো বাঁচতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষকে অন্তত সেই ব্যবস্থাটুকু করে দিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement