৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নাব্যতাসঙ্কটে মাতামুহুরী

মাতামুহুরী নদীর বর্তমান অবস্থা : নয়া দিগন্ত -

বান্দরবানের পাহাড়ি নদী মাতামুহুরীতে নাব্যতাসঙ্কট সুদূরপ্রসারী ক্ষতির কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। নিকট-অতীতেও তীব্র স্রোত ছিল মাতামুহুরীতে। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই এ নদী হয়ে যায়, ‘পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা ধরে রাখতে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সর্বপ্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। সে উদ্যোগের আওতায় ১৮৭৮ সালের ভারতীয় বন আইনে তৎকালীন দ্য গভর্নমেন্ট অব বেঙ্গল ১৮৮০ সালের ১৭ নভেম্বর মাতামুহুরী নদীর অববাহিকা ঘিরে প্রায় এক লাখ তিন হাজার পাহাড়ি ভূমিকে ‘মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্ট’ ঘোষণা করে। যাতে এ নদীর নাব্যতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অটুট থাকে। গুগল ম্যাপ থেকে দেখা যায়, মাতামুহুরী নদীর উৎসস্থল বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে। সরেজমিন দেখা গেছে, এ নদীর উৎসমুখটি পড়েছে বাংলাদেশের ভেতরে। এ এলাকাটির নাম দোছরি-ফাত্তারা। মূলত দোছরি ও ফাত্তারা নামের পৃথক দু’টি খালের সংযোগস্থল ইংরেজি ‘ওয়াই’ অক্ষরের মতো পয়েন্ট থেকেই মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
এ নদীটি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী দোছরি-ফাত্তারা থেকে শুরু হয়ে আলীকদম, লামা ও চকরিয়া উপজেলার বুক চিরে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে শেষ হয়েছে। গুগল ম্যাপ ও সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, মাতামুহুরী একান্তভাবেই বাংলাদেশের নদী। মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তিস্থলে রয়েছে অগুনতি ঝিরি, খাল ও ছড়া। নদীর দু’ধারে রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়। নদী তীরবর্তী প্রায় এক লাখ তিন হাজার একর ভূমি সংরক্ষিত রিজার্ভ ফরেস্ট। আয়তনের দিক দিয়ে এ রিজার্ভ ফরেস্ট এশিয়া মহাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম রিজার্ভ ফরেস্ট।
লামা-আলীকদম উপজেলার প্রবীণ সাংবাদিক রুহুল আমিন জানান, যত্রতত্র জুমচাষ ও বৃক্ষ নিধনের ফলে মাতামুহুরী নদীর পানির প্রবাহ কমে গেছে। নদীর দু’পাশের বনাঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত বৃক্ষ নিধন, প্রতিবছর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জুমচাষে নির্বিচারের অগ্নিসংযোগ চলে। ফলে পাহাড় ক্ষয়ে মাটি এসে পড়েছে নদীতে। যার কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। এ কারণে বর্ষায় বৃষ্টি হলেই নদীর দু’কূল উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। আবার বৃষ্টিপাত থেমে গেলে নদী হয়ে পড়ছে শীর্ণকায়।
তিনি বলেন, নদীরও পরিচর্যা দরকার। নদী তীরবর্তী বনাঞ্চলে গাছ কেটে ও জুমচাষ করে সাফ করে ফেলা হলে শুধু নদী নয়, সার্বিকভাবে প্রতিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হবে। এর খেসারত দিতে হবে সবাইকে।


আরো সংবাদ



premium cement