০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সাড়ে ৩ বছরেও মেলেনি লাশ

কুয়েতে প্রবাসীকে হত্যার অভিযোগ দুই ভাগ্নের বিরুদ্ধে

বাবা হত্যার বিচার চেয়ে জেল খাটতে হলো ছেলেকে
-

কুয়েত প্রবাসী চাঁদপুরের শাহরাস্তির বাবুল প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ। তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে তার আপন দুই ভাগিনা ও বোনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামা ভাগিনা মিলে কুয়েতে ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়িক ও আর্থিক দূরত্ব থেকেই ভাগিনারা তাকে হত্যা করে সুকৌশলে নিখোঁজ রহস্য সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছে বাবুলের পরিবার। এ দিকে বাবা হত্যার বিচার চাইতে মামলা করে উল্টো ৮টি মামলার আসামি হতে হয় বাবুলের বড় ছেলে শাহাদত হোসেন সোহাগকে। জেলও খাটতে হয়েছে তাকে। অথচ গ্রেফতার হয়েও জামিনে ছাড়া পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মামলার এক নম্বর আসামি কুয়েত ফেরত সোলেমান। কঠিন বাস্তবতায় চাঁদপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সোহাগকে ৫ ভাইবোন, মা ও দাদীকে নিয়ে বড় একটা সংসারের হাল ধরতে হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৯৮ সাল থেকে কুয়েতে প্রবাসী হন শাহরাস্তি থানার আহমদ নগর গ্রামের বাবুল। প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়সী বাবুলের (পাসপোর্টে) ভোটার আইডি কার্ডে পুরো নাম মো: ওমর ফারুক বাবুল। তার পিতার নাম সিরাজুল হক। বাবুল তার বাবার একমাত্র ছেলে। তার বড় ৪ বোন রয়েছে। নিখোঁজ রহস্য ও হত্যার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে সেই সোলেমান ও কুতুব উদ্দিন বাবুলের সবচেয়ে বড় বোন ফিরোজা বেগমের ছেলে। তিনিও ছেলেদের সাথে এই মামলার আসামি। ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট হতে নিখোঁজ বাবুল। মামার সাথে তার আপন দুই ভাগিনা সোলেমান ও কুতুব উদ্দিন একই রুমে থাকতেন। সোলেমানকে বাবুলই কুয়েতে নিয়ে গিয়েছিলেন। মামা-ভাগিনা মিলে কুয়েতে কাঁচামালের ব্যবসা করতেন। ভালোই চলছিল তাদের দিন। হঠাৎই বাবুল নিখোঁজের পর অস্থির হয়ে পড়ে তার পরিবার।
বাবুলের বড় ছেলে শাহাদত হোসেন সোহাগ। তাদের ৫ ভাইবোনের মধ্যে সবাই লেখাপড়া করে। সোহাগ জানান, দীর্ঘ প্রবাস জীবনে তার বাবা বছরে ৩-৪ বার দেশে আসতেন। বাবার নিখোঁজের পর তারা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে সিএনজি চালিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাবা নিখোঁজের পর আমরা সেখানে থাকা সোলেমানের (ফুফাতো ভাই) সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু বাবার পরিচিতজনদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা দূতাবাসের মাধ্যমে বাবার নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করি। এর মাস দুয়েক পর সোলেমান একেবারে দেশে চলে আসেন। এরই মধ্যে বাবার কফিল (মালিক) স্থানীয় প্রশাসনে বাবার বিষয়ে অভিযোগ করলে তারা সোলেমানের দুই ভাই কুতুব উদ্দিন এবং জুয়েলকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা স্বীকার করে যে, তাদের ভাই সোলেমান বাবাকে (বাবুল) হত্যা করে ড্রেনে ফেলে দিয়েছে। সোলেমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বাবার সাথে তার ভাগিনারা পার্টনারে ব্যবসা করতেন। বাবা সোলেমানের কাছ থেকে ৭ হাজার ৩০০ কুয়েতি দিনার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২০ লাখ টাকা পেতেন। কিন্তু এ টাকা দিচ্ছিলেন না। বারবার যখন বাবার নিখোঁজের বিষয়ে আমরা সোলেমান ও তার পরিবারের দ্বারস্থ হই ওই অবস্থায় আমার ফুফু বাদি হয়ে আমার এবং আমার মায়ের বিরুদ্ধে ৩ লাখ টাকা পাওয়ার দাবি করে উল্টো মামলা করে। যাতে বলা হয়, ওই টাকা নিয়ে নাকি আমার বোনকে বিয়ে দিয়েছি। অথচ আমার বোনকে বিয়েই দেয়া হয়নি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠির মাধ্যমে জানতে পারি যে, বাবা নিখোঁজ বা হত্যার পেছনে সোলেমান ও তার ভাই কুতুব উদ্দিনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এরপর আমি বাদি হয়ে ২০১৮ সালের ২৫ মে, শাহরস্তি থানায় (মামলা নং ২৫) বাবা হত্যার মামলা করি। সোলেমান, কুতুব উদ্দিন এবং তাদের মা ফিরোজা বেগমকে আসামি করা হয়। সোলেমানকে গ্রেফতার করা হলেও রহস্যজনকভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই তদন্ত কর্মকর্তা রিপোর্ট দেন যে, তার কাছ থেকে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অথচ তাকে ভালো করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাবা হত্যার রহস্য বের হতো।
জানা যায়, বাবুল হত্যা মামলায় প্রথমে থানা পুলিশ, এরপর সিআইডি তদন্তের দায়িত্ব পায়। প্রথম এবং দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তার সাথে আসামিরা সম্পর্ক করে মামলা থেকে বাঁচার সব ধরনের চেষ্টা করেছে জানিয়ে সোহাগ জানান, এরপর আমি সিআইডির অ্যাডিশনাল এসপি জালাল উদ্দিন আহমদের সাথে দেখা করি। তিনি তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে ওবায়দুল হককে দায়িত্ব দেন। এখন তিনি চেষ্টা করছেন বাবার হত্যা রহস্য উদঘাটনের।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো: ওবায়দুল হক (পরিদর্শক) নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি এই মামলার নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। বাবুলের বিষয়ে কুয়েতে কোনো মামলা হয়েছে কিনা, আসল ঘটনা কী, বাবুলের ডেডবডি পাওয়া গেছে কি না, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে (প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মস্থান) চিঠি লিখেছি। চিঠির উত্তর এখনো আসেনি। জানা যায়, তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেটা কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে তথ্য জানতে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর জবাব এখনো আসেনি।
কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর আবুল হোসাইনকে ফোন ও এসএমএস (হোয়াটসঅ্যাপ) করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে বিদায়ী শ্রম কাউন্সিলর আব্দুল লতিফ খান বাবুল হত্যা নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ মে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর যে চিঠি লিখেছিলেন, সেখানে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। দুই পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে বলা হয়, বাবুলের স্পন্সরকে (কফিল) নিয়ে কুয়েতের সিআইডি ও দূতাবাসের কর্মীদের সমন্বয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। এতে দেখা যায়, বাবুল ও তার ভাগ্নে সোলেমানের মধ্যে ব্যবসায়িক ও আর্থিক বিরোধ বিদ্যমান ছিল। এ সংক্রান্ত একটি বিরোধ ও আর্থিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য-প্রমাণ পান তারা। বাবুল নিখোঁজের পরপরই ভাগিনা সোলেমান স্থায়ীভাবে কুয়েত থেকে দেশে চলে আসে। কুয়েতে অবস্থানকারী বাবুলের আরেক ভাগিনা কুতুবকে আটক করে সিআইডি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কুতুব স্বীকার করে যে, তার মামা বাবুল নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক এবং এ বিষয়ে বর্তমানে দেশে অবস্থানরত সোলেমান অবহিত আছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই নিখোঁজ বাবুলের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত ও সন্ধান পাওয়া যাবে। সাবেক শ্রম উইংয়ের কাউন্সিলরের ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, কুয়েত প্রবাসী বাবুল নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি সন্দেহজনক ও রহস্যাবৃত। কুয়েত সিআইডির ধারণা, নিখোঁজ বাবুল হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারেন। এ বিষয়ে তারা অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠল : এবারে কেমন হবে উৎপাদন টাঙ্গাইলের আ.লীগের সাধারণ সম্পাদককে নাকে খত দিয়ে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় সাঁথিয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান মিরাজুল বিশ্বাস গ্রেফতার মিল্টন সমাদ্দার আটক ভূরুঙ্গামারীতে অটোরিকশার ধাক্কায় শিশু নিহত শ্রমিকের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে : অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান গাজায় যুদ্ধ বন্ধে রাজি হবো না : ব্লিনকেনকে নেতানিয়াহু আর ইশারা নয়, সরাসরি মুসলিমদের নিশানা করেই ভোট প্রচারে মোদি বিএনপির হাতে শ্রমিকের রক্তের দাগ : ওবায়দুল কাদের নিপীড়িতরাই বিজয়ী হ‌বে : রিজভী ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থীদের ওপর ইসরাইলি সমর্থকদের হামলা

সকল