০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পরামর্শক ও প্রশিক্ষণেই যাবে ২৬৭ কোটি টাকা

ই-আদালত স্থাপন
-

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের একটি বড় অর্থ খরচ হচ্ছে পরামর্শক সেবা, দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ আর যানবাহন ক্রয়ের পেছনে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পে খরচের আকারও বড় হচ্ছে। সারা দেশের আদালতগুলোতে ই-আদালতকক্ষ প্রতিষ্ঠা, কারাগার, বিচারিক বিভিন্ন সাইট ডিজিটালাইজড করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আর এ জন্য শুধু তিন ধরনের পরামর্শক, প্রশিক্ষণ খাতেই খরচ ধরা হয়েছে ২৬৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া একটি গাড়ি কিনতে ধরা হয়েছে ৯ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের ডিপিপি মূল্যায়ন কমিটির সভা থেকে সংশোধন করে আবার উপস্থাপনের জন্য বলা হয়। কিন্তু সেই ডিপিপি আসে দুই বছর পর। প্রথম প্রস্তাবনার ৩২৭ কোটি টাকার প্রকল্প এখন দুই হাজার ৮৭৮ কোটি টাকায় প্রস্তাব করা হচ্ছে।
আইন, বিচার বিভাগ থেকে পাঠানো প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, সীমিতসংখ্যক বিচারক, বিচার ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারী, গতানুগতিক পদ্ধতির বিচারকার্যক্রম ইত্যাদি কারণে যথাসময়ে বিচারকার্যক্রম সম্পন্ন ও রায় প্রদান করা সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় কেস ব্যাকলগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বিচারকার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার জন্য এবং বিচার প্রাপ্তিতে জনগণের প্রবেশাধিকার সহজলভ্য করতে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজেশন করা জরুরি।
এই লক্ষ্যে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে ই-জুডিশিয়ারি পাইলট প্রকল্প নামে ৩২৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা খরচে দেশের নির্বাচিত কয়েকটি জেলায় বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রস্তাবনা একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। আইন ও বিচার বিভাগের সাথে সমন্বয়ে প্রকল্প এলাকার পরিধি আরো বিস্তৃত করে সমগ্র দেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে আইন ও বিচার বিভাগ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কারিগরি সহায়তায় দুই হাজার ২০৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর পিইসি সভায় একনেকের নির্দেশনা পরিপালনসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুই বছর পর ব্যয় আরো বাড়িয়ে দুই হাজার ৮৭৮ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকায় জুলাই ২০২০ থেকে ২০২৪ সালে জুন, চার বছর মেয়াদে বাস্তবায়নে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে আবার পাঠায় আইন ও বিচার বিভাগ।
কমিশন বলছে, পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক জারিকৃত সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি সংক্রান্ত পরিপত্রের এক দশমিক ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুযায়ী, পিইসি সভার কার্যবিবরণী প্রাপ্তির ২০ কার্যদিবসের মধ্যে পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে হবে। তা সম্ভব না হলে বিলম্বের যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে ৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে সে ডিপিপি পাঠাতে হবে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে ডিপিপি পাঠানো না হলে ধরে নেয়া হবে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় আগ্রহী নয়।
প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলোÑ এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যার উন্নয়ন, সুপ্রিম কোর্টের ডাটা-সেন্টার ও নেটওয়ার্ক অপারেটর সেন্টার স্থাপন, ৬৪ জেলায় ৬৪টি মাইক্রো ডাটা সেন্টার স্থাপন এবং সুপ্রিম কোর্টের কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টারের সাথে আন্তঃসংযোগ স্থাপন, ৬৪ জেলায় এক হাজার ৭৫০টি আদালত কক্ষকে ই-আদালত কক্ষে রূপান্তর। প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যন্ত যতসংখ্যক কোর্ট সৃজন হবে সেগুলোকেও ই-কোর্ট রূপে রূপান্তরিত করা। বিচার ব্যবস্থাধীন সব অফিসের জন্য ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) স্থাপন। বিচারব্যবস্থার জন্য এন্টারপাইজ আর্কিটেকচার উন্নয়ন, বিচারকদের জন্য দুই হাজার টুইনওয়ান ল্যাপটপ কেনা, উচ্চতর আদালতের বিচারপতি, অধস্তন আদালতের সব বিচারক, আদালতের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, ডাক্তার, পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া, রেকর্ড রুম স্বয়ংক্রিয়করণ ও পুরাতন রেকর্ড রুম ডিজিটালাইজ করা। বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্ট সিস্টেম স্থাপন, সেন্ট্রাল জেল টার্মিনাল স্থাপন, ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রশাসনিক সভা আয়োজনের জন্য ডিজিটাল সিস্টেম উন্নয়ন, আদালতে ইলেকট্রিক আর্চওয়ে এবং ব্যাগেজ স্ক্যানার স্থাপন, পার্লার রুম (ক্যামেরা ট্রায়াল), বৈদেশিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজস্ব সাইবার সিকিউরিটির বিশেষজ্ঞ দল প্রস্তুত করা ইত্যাদি।
ব্যয় বিভাজন থেকে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ খাতে মোট ১৪৩ কোটি সাত লাখ টাকা প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে বৈদেশিক স্টাডিতে ১০ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ ১১৭ কেটি টাকা, কারিগরি প্রশিক্ষণ পাঁচ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং উচ্চতর প্রশিক্ষণে সাড়ে ১০ কোটি টাকা। আর পরামর্শক খাতে তিন ধরনের পরামর্শকে ব্যয় ১২৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এখানে কারিগরিতে ১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, আইনিতে ১০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, পরামর্শক সেবা ১০২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সুপ্রিম কোর্টের ডাটা সেন্টার স্থাপনে ১৪৮ কোটি ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, ই-কোর্ট রুম স্থাপনে এক হাজার ৩৫৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, জেলা পর্যায়ে আদালতে মাইক্রো ডাটা সেন্টার স্থাপনে তিন শ’ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, ১৬টি সেন্ট্রাল জেল টার্মিনালে পৌনে পাঁচ কোটি টাকা, সিসিটিভি ক্যামেরা এক হাজার ৭৫০টির জন্য পৌনে ৯ কোটি টাকা, ১১ কোটি টাকা লাগবে বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম, ইআরপি সফটওয়্যারে ৯৮ কোটি টাকা, বিচারকদের ল্যাপটপে ২০ কোটি টাকা, ডিজিটাল আর্কাইভিং এ ১৭৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা, ইলেকট্রিক আর্চওয়ে সংস্থাপনে ১৪৪ কোটি ২০ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক বিভাগের পিইসি সভার জন্য তৈরিকৃত কার্যপত্রে আবদুর রউফ উল্লেখ করেছেন, পাঁচটি যানবাহন কেনার জন্য ১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। যানবাহনের মধ্যে একটি যানের দাম ৯ কোটি টাকা, একটি চার কোটি টাকা, দু’টি দুই কোটি টাকা এবং একটি মাইক্রোবাসের দাম ৬০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অত্যধিক। ৯ কোটি টাকা একটি যানবাহনের মূল্য স্বাভাবিক নয়। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কাদেরকে, কত মেয়াদে, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে তা সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। অন্যান্য মনোহরী ২৫ লাখ টাকা, সাধারণ সরবরাহ ২৫ লাখ টাকা, সাধারণ থোক বরাদ্দ ২০ লাখ টাকা, অপ্রত্যাশিত ব্যয় ২০ লাখ টাকা-এই সবই প্রায় একই ধরনের খাত। তারপরও আলাদা আলাদা বরাদ্দের চাহিদা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement