২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হালতি বিলে প্রতিদিন হাজারো মানুষের আনন্দমেলা

অথৈ জলরাশির নাটোরের হালতি বিলে নৌভ্রমণ -

ভ্রমণপিয়াসী মানুষ অবসরে নির্মল আনন্দ খুঁজে বেড়ায়। আর এ টানেই শত শত মানুষের ঢল নামছে নাটোরের অথই জলরাশির মনোমুগ্ধকর হালতি বিলে। সব বয়সী মানুষ আসে মিনি কক্সবাজারখ্যাত এই রিভারভিউ দেখার জন্য। হালতি বিলের মধ্য দিয়ে নির্মিত রাস্তার কারণেই এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য মানুষ খুব সহজেই উপভোগ করতে পারছে। যখন পানি একটু কম থাকে তখন ওই রাস্তায় হাঁটলে সমুদ্রসৈকতের আমেজ পাওয়া যায়। দুই পাশে পানি আর পানি। মাঝে কংক্রিটের ঢালাই করা রাস্তায় ছোট-বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে। পা ভিজে যায়। বর্ষাকালের হালতি বিল অথই সমুদ্রের মতো। রেললাইনের ধারে ছোট ছোট গ্রাম ডুবুডুবু প্রায়। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে রাস্তার ধারে। গ্রীষ্মকালেও এখানকার দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর হয়। সে সময় কংক্রিটের ঢালাই করা রাস্তার দু’পাশে যত দূর চোখ যায় শুধুই সবুজ ধানের সমারোহ দেখা যায়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্থানীয় সরকার উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর প্রচেষ্টায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাটুলহাট থেকে খাজুরাহাট পর্যন্ত সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। এর আগে খাজুরা এলাকায় যাওয়ার কোনো রাস্তা ছিল না। উপমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি হিসেবে স্বল্পতম সময়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নাটোরের হালতিবিল এবং সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় পানির মাঝ দিয়ে ব্যতিক্রম দৃষ্টিনন্দন দু’টি রাস্তা নির্মাণ করা হয়।
গত মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছে এই বিলে নৌকা ভ্রমণ করতে। কেউ কেউ দলবেঁধে বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৌকায় চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিলের মধ্যে। মানুষ আসে দূর-দূরান্ত থেকেও। রাজশাহীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু জাহিদ ও বগুড়ার হুমায়রা ইয়াসমিন সপরিবারে এসেছেন হালতি বিল দেখতে। তারা বলেন, হালতি বিলের পরিবেশ যে এত নির্মল সুন্দর হবে ভাবিনি। পরিবারের সবাই খুব খুশি এখানে বেড়াতে আসতে পেরে।
পত্রিকায় ও টিভিতে দেখে হালতি বিল বেড়াতে আসা ঢাকা উত্তরার সজীব রায়হান ও তার স্ত্রী রিফাত তাসনিম বলেন, সত্যিই খুব সুন্দর, মিনি কক্সবাজার নাম দেয়া সার্থক হয়েছে। স্থানীয় ভ্যানচালক সামসুজ্জোহা খুব খুশি। কারণ তার আয় বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। আগে দিনে তার আয় হতো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এখন হচ্ছে প্রায় ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। নৌকার মাঝি আব্দুল করিম এখন প্রতিদিন আয় করছেন ছয় শতাধিক টাকা। এত বাইরের মানুষ তিনি এর আগে এ এলাকায় আসতে দেখেননি। হাজার হাজার মানুষের ঢল নামায় এখানে হকারের ভিড়ও বেড়েছে। মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, ফল, বিস্কুট, লজেন্স, চকোলেট, পান-সিগারেট, চা এমনকি চুড়ি-মালা-কসমেটিকসের পসরা সাজিয়ে বসেছে অনেকে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। নাটোর শহর থেকে হালতি বিলের দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। শহর থেকে শত শত সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে যাওয়ার সহজ ব্যবস্থা রয়েছে। সহস্র মানুষের আগমনে হালতি বিল এখন মুখরিত। শুক্রবারে এই ভিড় বেড়ে যায় কয়েক গুণ। নলডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন আগত পর্যটকদের সুবিধার জন্য টয়লেটসহ আরো কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গাড়ি রাখার গ্যারেজসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টও হয়েছে সম্প্রতি। বটবৃক্ষের গোড়া পাকা করে বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য আগে দু’টি স্পিডবোট চললেও এখন বন্ধ আছে।
সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এই প্রতিবেদককে বলেছেন, অবহেলিত নলডাঙ্গা উপজেলার উন্নয়নের জন্যই সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ ইয়াকুব আলীসহ নেতাকর্মীদের দাবি পূরণে আমি এই রাস্তা নিমার্ণ করেছি। অথই জলরাশির এই বিলের মধ্যদিয়ে রাস্তা করার ঘোষণা দেয়ায় সে সময় অনেকে আমাকে পাগল মনে করেছিল। আমি গ্রাম থেকে নলডাঙ্গাকে শহরে পরিণত করেছি। সামনে আবার সুযোগ পেলে নাটোর-নলডাঙ্গার মানুষের উন্নয়ন ও বিনোদনের জন্য আমার আরো অনেক পরিকল্পনা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement