২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্যা ও করোনায় কৃষকের ক্ষতি ৫৭ হাজার কোটি টাকার বেশি

-

দুই দফায় দেশে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ৫৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি বছরের মার্চ থেকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যা ও মহামারী করোনায় এ বিশাল অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের কৃষি ও কৃষক। ব্র্যাকের গবেষণা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বন্যায় প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে ১১ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, দেশের ৩৭ জেলায় বন্যায় প্রায় ১৩ লাখ বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, আমন বীজতলা, সবজি, ভুট্টা, তিল, মরিচ, চীনা বাদাম, পান, পাট, কলা, লেবু ও আখ। তবে বন্যাকবলিত এই ৩৭ জেলায় অক্ষত আছে এক কোটি ৩১ লাখ ১৫ হাজার ২৮০ বিঘা জমির ফসল।
অপর দিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, বন্যায় প্রায় একমাসে দেশের ৩১ জেলায় সাড়ে ছয় লাখের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের এ ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
অন্য দিকে ব্র্যাক তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, করোনার শুরু থেকে প্রথম দেড় মাসে মহামারীতে সারা দেশে কৃষকের লোকসান হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকারো বেশি। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত করোনা মহামারীর প্রভাবে এই ক্ষতির হিসাব উঠে এসেছে ব্র্যাকের পরিচালিত গবেষণায়। সব মিলিয়ে করোনা ও বন্যায় দুই দফায় কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ ৫৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩১ জেলার প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে নষ্ট হয়েছে ৩ লাখ ২৮ হাজার টন বিভিন্ন ধরনের শস্য। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আউশের। ৫০ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আউশের যে ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৫২ কোটি টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৯৭ হাজার ১৮৪।
এ ছাড়া ৯৫ হাজার ৫৭০ জন কৃষকের ২৫৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার পাট ও ৮৮ হাজার ৪০৮ জন কৃষকের ১৫৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বোনা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমির। এতে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮৬ জন কৃষকের মোট ক্ষতির পরিমাণ ১২৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রায় এক লাখ কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ ২৯০ কোটি টাকা।
অন্য দিকে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ৩৭ জেলায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরে এক প্রতিবেদনে জানায়, এতে প্রায় ১৩ লাখ বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের (অতিবৃষ্টি, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি) কারণে ১২ লাখ ৮১ হাজার ৫১৫ দশমিক ৮৫ বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোনা আমন ধান। এ ধানের চার লাখ ৩৯ হাজার ২০৬ দশমিক ১২ বিঘা জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এরপরই রয়েছে আউশ ধান, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৩ দশমিক ১ বিঘা জমি। ক্ষতির দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাট। এ ফসলের জমির পরিমাণ দুই লাখ এক হাজার ৪২৮ দশমিক ৫৫ বিঘা। চতুর্থ স্থানে রয়েছে রোপা আমন ধান। এর পরিমাণ এক লাখ ৩১ হাজার ৪৯৪ দশমিক ৪১ বিঘা। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে সবজি। এক লাখ সাত হাজার ৫৬০ দশমিক ৫০ বিঘা সবজির জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়া আমন বীজতলা ৭৭ হাজার ৮৯৭ দশমিক ১৬ বিঘা, ভুট্টা ১১ হাজার ১৮২ দশমিক ৫৯ বিঘা, তিল ১৩ হাজার ৫৫০ দশমিক ৫৮ বিঘা, মরিচ পাঁচ হাজার ৪ দশমিক ৯ বিঘা, চীনা বাদাম ৭৪ দশমিক ৭ বিঘা, পানের বরজ এক হাজার ৪৩১ দশমিক ৯ বিঘা, কলা বাগান দুই হাজার ১৪৩ দশমিক ৪৯ বিঘা, লেবু দুই হাজার ৯৪১ দশমিক ২ বিঘা এবং আখের ১৩ হাজার ৩৭১ দশমিক ৩ বিঘা জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই বন্যায়।
এ দিকে ব্র্যাকের পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত করোনা মহামারীর প্রভাবে কৃষকের লোকসান ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকারো বেশি। গবেষণার আওতায় করা দু’টি সমীক্ষার ফলাফলে ব্র্যাক জানায়, এই দেড় মাসে পণ্যের ক্ষতি ও কম দামের কারণে প্রত্যেক কৃষকের লোকসান হয়েছে গড়ে প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭৬ টাকা। সেই হিসেবে সারা দেশে কৃষির প্রতিটি উপখাতের সকল কৃষকের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে লোকসান হয়েছে কমেছে ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সমান।
কৃষি খাতে এবং সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার ওপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা দু’টি পরিচালিত হয়। সারা দেশের ফসল, শাকসবজি, হাঁস-মুরগি, মাছ এবং দুগ্ধ উৎপাদনকারী ১ হাজার ৫৮১ জন কৃষক এতে অংশগ্রহণ করেন।
ব্রাক বলছে, সরকারি ছুটির কারণে সকল রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় পোল্ট্রি চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। কারণ মুরগির দাম কমে যায় ৪৪ শতাংশ। চাহিদা কমার কারণে পোল্ট্রি খামারিরা উৎপাদনও কমিয়ে দেয়, যার ফলে সরবরাহের ঘাটতি দেখা যায়। কিন্তু মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে খামারের মুরগির দাম ২৬ শতাংশ এবং ডিমের দাম ৮শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
অপর দিকে দুগ্ধ উৎপাদনকারী কৃষকের পণ্যের চাহিদা ৩৩ থেকে ৬০ শতাং হ্রাস পায় এবং খুচরা স্তরে কৃষক পর্যায়ে ২২ শতাশ যার গড় মূল্য ১২.৫ শতাংশ কমে যায়। দুগ্ধ উৎপাদনকারী কৃষক তাদের উৎপাদন ১৬ শতাংশ কমিয়ে দেন।


আরো সংবাদ



premium cement