২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকায় পশুর হাট বসছে ১২টি

বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি হাটে আসতে পারবে না
কোরবানির জন্য ১৩০০ কেজি ওজনের আমেরিকান ব্রাহমা জাতের গরুটি ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে মগবাজারের নয়াটোলার সামারাই ক্যাটেল ফার্মে : নূর হোসেন পিপুল -

করোনা মহামারী পরিস্থিতির মধ্যেও রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে দুই সিটিতে মোট ১২টি হাট বসবে। তবে হাট ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিয়েছে সংস্থা দু’টি। দেয়া হয়েছে নানা বিধি নিষেধ। এর পাশাপাশি অনলাইন হাটেও নজর দিয়েছে তারা।
আসন্ন ঈদুল আজহায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে অস্থায়ী পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ রয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সে আলোকে গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সভায় রাজধানীর মধ্যে কোনো পশুর হাট না বসানোর আহ্বান জানানো হয়। তবে এরপরও দুই সিটি করপোরেশন হাট বসানোর ব্যাপারে অটল রয়েছে। দক্ষিণে সারুলিয়াতে একটি স্থায়ী হাট রয়েছে। এর পাশাপাশি ৫টি অস্থায়ী হাটের ইজারা দিয়েছে। এ হাটগুলো হলোÑ উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সঙ্ঘ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আফতাবনগর ব্লক-ই, এফ, জি’র সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো: রাসেল সাবরিন বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় এ পর্যন্ত ৫টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সারুলিয়াতে একটি স্থায়ী হাট রয়েছে। পাশাপাশি আমরা একটি ডিজিটাল পশুর হাট বসানোরও প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আদলেই ডিএসসিসিতে একটি ডিজিটাল হাট বসবে।
উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ৬টি পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে ১টি স্থায়ী হাট এবং ৫টি অস্থায়ী হাট। গাবতলীতে স্থায়ী হাট রয়েছে। অস্থায়ী ৫টি হাট হচ্ছে, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন হতে উত্তর দিকে বিজিএমইএ ভবন পর্যন্ত খালি জায়গা, কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) পশুর হাট এবং উত্তরখান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের গণসংক্রমণ রোধে ই-কমার্স অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সহায়তায় অনলাইনে কোরবানি পশু কিনে অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানি, গোশত প্রক্রিয়াকরণ এবং বাসায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে ডিএনসিসি।
অবশ্য এর আগে মোট ২৭টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় দুই সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে দক্ষিণে ১৫টি এবং উত্তর সিটিতে ১২টি। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে দুই সিটি করপোরেশন। উত্তর সিটি অস্থায়ী ছয়টি হাট দরপত্র আহ্বান করেও শহরের ভেতরে হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাতিল করেছে। একইভাবে দক্ষিণ সিটিও ৮টি হাট না বসানোর ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হাটের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এবার ডিএনসিসি এলাকার হাট সংখ্যা কমানো হয়েছে। আর যেসব এলাকায় হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেসব এলাকা ঘন জনবসিতপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, কোরবানির পশুর হাট থেকে যেন করোনা সংক্রমণ না ঘটে, সেজন্য সব হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাটে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে: হাটের প্রবেশ পথে টিভি স্ক্রিনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে প্রবেশকারীর শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে। গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। হাটে প্রত্যেক প্রবেশকারীকে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, হেডক্যাপ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে হাটে প্রবেশ করতে হবে। হ্যান্ড-স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ও হেড কভার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ কাজ তদারকির জন্য মনিটরিং টিম রাখতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি সংবলিত ব্যানার, পোস্টার টানানোসহ এ বিষয়ে মাইকে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করতে হবে। জীবাণুনাশক দিয়ে হাটের সর্বত্র ও আশপাশের সংশ্লিষ্ট জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ক্রেতা, বিক্রেতা ও ইজারাদারের নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক, গ্লাভস, হেড কভার পরে হাটে আসতে হবে। হাটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাবান, পানির ড্রাম ও বেসিন রাখতে হবে। হাটে প্রবেশ এবং বাহিরের জন্য পৃথক পৃথক গেট করতে হবে এবং নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাটে প্রবেশ-বাহির হতে হবে। একাধিক প্রবেশ পথ হলে প্রত্যেক প্রবেশ পথেই টিভি স্ক্রিনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার বসাতে হবে। বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের নিমিত্তে করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো স্ক্রিনে সার্বক্ষণিকভাবে দেখাতে হবে। ইজারা গ্রহীতাকে হাটের জন্য প্রশিক্ষিত ও স্বেচ্ছাসেবক টিম তৈরি করতে হবে। ক্রয়কারী সাথে করে অনেক লোক নিয়ে হাটে আসতে পারবে না এবং ক্রেতাকে নির্ধারিত দূরত্ব থেকে পশু দেখতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতাকে অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়ে উৎসাহিত করতে হবে। হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাস্টবিন স্থাপন করতে হবে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত মেডিক্যাল বর্জ্য যেমন- গ্লাভস, মাস্ক, হেড কভার, সেনিটাইজার বোতল রাখার জন্য পৃথক ডাস্টবিন রাখতে হবে, ডাস্টবিন কোথায় তা তীর চিহ্নিত স্টিকার দিয়ে দেখাতে হবে। সর্বোপরি, স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন নিশ্চিত করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement