২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেশ বড় ধরনের বিপদে পড়তে যাচ্ছে : রিজভী

-

সরকারের উদাসীনতার কারণেই বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার চরম ঝুঁকিতে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বর্তমান সরকার ক্রমাগত ব্যর্থতা প্রদর্শন করে আসছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার শুরু থেকেই যে ধরনের ঢিলেঢালা মনোভাব প্রদর্শন করছিল তার সমূহ বিপদ আঁচ করতে পেরে আমরা সরকারকে আগেই সতর্ক করে বলেছিলাম, করোনা টেস্ট এবং ট্রিটমেন্টের ব্যাপারে সরকারের সিরিয়াস হওয়া দরকার। কিন্তু একের পর এক এমন হৃদয় বিদারক ঘটনার মধ্যে এখন করোনা টেস্ট নিয়ে ভুয়া সার্টিফিকেট ও জালিয়াতির জন্য বিদেশের গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হচ্ছে বাংলাদেশ। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের খবরে আরো জানা গেছে, ইতালি, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কাতার, আরব আমিরাতসহ অনেক দেশ বাংলাদেশের সাথে বিমান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বাংলাদেশীদের ইতালিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এটা একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি। ইতালিতে বাংলাদেশীদের বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশীদের বহনকারী বিমানকে বলা হচ্ছে ‘করোনা বোমা’। এমনকি শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী যারা গত বুধবার ইতালির বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন, অনেকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় প্রায় সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইতালির মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ভুয়া সার্টিফিকেট কেনাবেচা নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়েছে।
রিজভী বলেন, করোনা নিয়ে সরকারকে সিরিয়াস হতে শুরু থেকেই আহ্বান জানিয়েছি। গত ২২ মে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান করোনা টেস্টের গুরুত্ব সম্পর্কে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্পষ্ট করেই বলেছিলেনÑ ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখিয়ে নিজেদের কাগুজে সাফল্য দেখানোর চেয়ে বেশি জরুরি করোনাভাইরাস টেস্ট নিয়ে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন। নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশে যেমন ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের নাগরিকদের বিদেশের শ্রমবাজারে থাকা না থাকার বিষয়টিও বেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আজকের বাস্তবতায় দেখতে পাচ্ছি, বিএনপির এই আশঙ্কাটি এখন দুঃখজনকভাবেই সত্য হতে চলেছে। ইতালি, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, কাতার, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নাগরিকদেরকে তাদের দেশে ঢুকতে আরোপ করছে নানা বিধিনিষেধ। ইতালিতে পৌঁছার পর ১৫২ জন বাংলাদেশীকে দেশটিতে ঢুকতে না দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত দেয়ায় প্রমাণিত হয় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার দেশের জনগণের স্বার্থের প্রতি কতটা উদাসীন। সরকারের দৃষ্টি শুধুই যেন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রতি, প্রবাসীদের স্বার্থের প্রতি নয়।
রিজভী বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি, করোনাভাইরাস ‘ট্রেস-টেস্ট এবং ট্রিটমেন্ট’ নিয়ে সরকার কী করছে, কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেÑ এগুলো জনগণকে জানাতে হবে। এমনকি করোনা মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রয়োজনে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। সরকার তা কানে নেয়নি। বরং এখন খবর বেরুচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবেলায় ‘জেকেজি হেলথ কেয়ার এবং রিজেন্ট হাসপাতাল’ নামের কিছু ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ‘করোনা টেস্ট ও ট্রিটমেন্টের’ অনুমোদন দিয়েছে। তাদের একমাত্র যোগ্যতা ছিল, এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা ক্ষমতাসীন দলের নেতা কিংবা ঘনিষ্ঠ। তাদের সার্টিফিকেট নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে আটক কিংবা ফেরত আসতে শুরু করায় এখন সরকারের টনক নড়েছে। প্রতিটি কেলেঙ্কারির হোতা সরকারি দলের পদ-পদবীধারী নেতা কিংবা সরকারের বিশেষ আনুকূল্যপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজরা। ভোট ডাকাত, ব্যাংক ডাকাত, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, করোনার ভুয়া প্রত্যয়নপত্র এখন দেশ ভরে গেছে।
রিজভী আরো বলেন, দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে ‘করোনা কেলেঙ্কারি’ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতায় বর্তমান সরকার প্রধানের উচিত ছিল ন্যূনতমপক্ষে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া। সেটি না করে আমরা দেখলাম প্রধানমন্ত্রীর মুখে ভিন্ন সুর। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘তারা চোর ধরছেন অথচ তাদেরকেই চোর বলা হচ্ছে’। তার এই আক্ষেপের কারণ জনগণ বুঝতে পারছে না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা দিয়ে কী বোঝাতে চাইছেন? করোনার আঘাতে এই দুর্ভিক্ষাবস্থায় অসহায় কর্মহীন মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ত্রাণ নিয়ে আওয়ামী নেতা ও তাদের তথাকথিত জনপ্রতিনিধিরা যে কেলেঙ্কারি করছেন, তার পরও তাদেরকে চোর বলা যাবে না? মাটির তলে, খাটের তলে, খড়ের পালার মধ্যে, গ্যারেজের ভেতর থেকে হাজার হাজার বস্তা চাল ও হাজার হাজার লিটার তেল যাদের বাসা থেকে বের হচ্ছে, তারা সবাই আপনার দলের লোক। আসলে মধ্যরাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসার ফল হচ্ছে বর্তমান ত্রাণ চুরি ও করোনা পরীক্ষার নকল সার্টিফিকেট। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর এটি কেমন আক্ষেপ? চোর চুরি করে চুপি চুপি। আর ডাকাতি হয় প্রকাশ্যে। এই সরকারের আমলে কোনো দুর্নীতিই গোপনে হয়নি। প্রতিটি দুর্নীতি হয়েছে প্রকাশ্যে।
গত বৃহস্পতিবার নরসিংদীর বাড়ি থেকে গ্রেফতার হওয়া ছাত্র দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের মিন্টুকে অবিলম্বে মুক্তি এবং গত তিন দিন আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের ছাত্র দলের সাবেক নেতা টিটু হায়দারকে তুলে নেয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানান রিজভী।


আরো সংবাদ



premium cement