দেড় মাসে কৃষকের লোকসান ৫৬ হাজার কোটি টাকা
ব্র্যাকের গবেষণা করোনার বিরূপ প্রভাব নিয়ে- আবুল কালাম
- ০৭ জুন ২০২০, ০০:০০
সারা দেশে গত দেড় মাসে কৃষকের লোকসান হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকারো বেশি। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত করোনা মহামারীর কারণে এই ক্ষতির হিসাব উঠে এসেছে ব্র্যাকের পরিচালিত গবেষণায়। এই গবেষণার আওতায় করা দুটি সমীক্ষার ফলাফলে ব্র্যাক জানায়, দেড় মাসে পণ্যের ক্ষতি ও কম দামের কারণে প্রত্যেক কৃষকের লোকসান হয়েছে গড়ে প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৭৬ টাকা। সেই হিসাবে সারা দেশে কৃষির প্রতিটি উপখাতের সব কৃষকের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে লোকসান হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সমান।
কৃষি খাতে এবং সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার উপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা দুটি পরিচালিত হয়। সারা দেশের ফসল, শাকসবজি, হাঁস-মুরগি, মাছ এবং দুধ উৎপাদনকারী ১ হাজার ৫৮১ জন কৃষক এতে অংশগ্রহণ করেন। তথ্যপ্রদানকারী কৃষকদের ৪২ শতাংশ জানিয়েছেন সঙ্কট মোকাবিলার কোনো উপায় তাদের ছিল না। বিশেষত, ৬০ শতাংশ খাদ্যশস্য ও সবজি উৎপাদনকারী কৃষক বলেছেন, তাদের সম্পূর্ণ লোকসানই মেনে নিতে হয়েছে। মোট কৃষকের ১১ শতাংশ এবং পোল্ট্রি কৃষকের ১৭ শতাংশ তাদের উৎপাদন কমিয়েছিলেন। উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছিলেন ২ শতাংশ কৃষক।
তথ্যপ্রদানকারীদের মধ্যে ৪১ শতাংশ বেঁচে থাকার জন্য ঋণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন, ১৪ শতাংশ তাদের বিকল্প আয়ের উৎসের উপর নির্ভর করার কথা বলেছেন, ১৮ শতাংশ তাদের সঞ্চয় ভেঙে বা সম্পদ বিক্রি করে চলার কথা বলেছেন। আর ১৮ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই এবং ৫ শতাংশ বলেছেন উৎপাদনে ফিরতে না পারলে তারা পেশাই বদলে ফেলবেন। গবেষণায় দেখা যায়, মহামারী শুরুর দিকে ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপক চাহিদা এবং ভোক্তাদের আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পণ্য কেনার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে মোটা চাল, মসুরের ডাল ইত্যাদির দাম ও বিক্রি বেড়ে যায়। চাল ও মসুরের ডালের দাম ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ এবং বাজারে চাহিদা ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে চাহিদা বাড়লেও তা কৃষকদের কোনো উপকারে আসেনি, কারণ মহামারীর আগেই তারা মজুদ বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
গবেষণায় দেখা যায়, ত্রাণবহির্ভূত এবং পচনশীল পণ্যগুলোর উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং বিক্রি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই কারণে ৮৮ শতাংশ কৃষক ও মাছ চাষিদের মধ্যে শতভাগ তাদের আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। কৃষকরা যেসব সমস্যার কথা বলেছেন তার মধ্যে ৬৬ শতাংশ ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ৫২ শতাংশ সীমিত সময়ের জন্য বাজার খোলা থাকার কারণ দেখিয়েছেন। ৪৫ শতাংশ উৎপাদনের উপকরণগুলোর উচ্চমূল্য এবং ২৮ শতাংশ শ্রমিক সঙ্কটের কারণ দেখিয়েছেন।
ব্র্যাক বলছে, সরকারি ছুটির কারণে সব রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় পোল্ট্রি চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। কারণ মুরগির দাম কমে যায় ৪৪ শতাংশ। চাহিদা কমার কারণে পোল্ট্রি খামারিরা উৎপাদনও কমিয়ে দেয়, যার ফলে সরবরাহের ঘাটতি দেখা দেয় কিন্তু মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে খামারের মুরগির দাম ২৬ শতাংশ এবং ডিমের দাম ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
অপরদিকে দুধ উৎপাদনকারী কৃষকের পণ্যের চাহিদা ৩৩ থেকে ৬০ শতাংশ হ্রাস পায় এবং খুচরা স্তরে কৃষক পর্যায়ে ২২ শতাংশ যার গড় মূল্য ১২.৫ শতাংশ কমে যায়। দুধ উৎপাদনকারী কৃষকদের ১৬ শতাংশ তাদের উৎপাদন কমিয়ে দেন।
সরকারের কাছ থেকে ৬৬% কৃষক সহজ শর্তে ঋণ পেতে চান। ৫৬% কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম এবং কম খরচে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ চান ৪৮% কৃষক।
সমীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত ৬৪ শতাংশ কৃষক সরকার ঘোষিত প্রণোদনা সম্পর্কে জানেন তবে এই সুবিধা কিভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে ৭৯ শতাংশ কৃষকের কোনো ধারণা নেই বা ভুল ধারণা আছে। ব্যাংক থেকে আনুষ্ঠানিক ঋণ নেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ কৃষকের।
গবেষণার নিরিখে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা করতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ লালফিতার দৌরাত্ম্য ও পদ্ধতিগত বাধাগুলো কমিয়ে ঋণ বিতরণ ব্যবস্থাকে কৃষকবান্ধব করা, সৃজনশীল বিতরণ ব্যবস্থা প্রবর্তন (এমএফএস, এনজিওগুলোর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ), সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও চাহিদা বাড়িয়ে বাজার প্রাণবন্ত রাখতে নগদ অর্থ বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করা, ক্ষুদ্র কৃষকের কাছাকাছি সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা। বীজ, সার, ফিড উৎপাদনকারী, স্টোরেজ, পরিবহন ইত্যাদি খাতগুলোকে সুবিধা ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে আরো বিকশিত করা। উপখাতভিত্তিক স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি মডেল ব্যবহার, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ করা এবং বেসরকারি খাত ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পগুলোকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একত্রীকরণ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা