২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নারায়ণগঞ্জে করোনার কাছে হেরে গেছে রাজনীতি

খোরশেদ দম্পতির পাশে শামীম ওসমান
-

করোনা দুর্যোগে নারায়ণগঞ্জে ৫২ দিনে ৬১ লাশ দাফন ও সৎকার করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। গত ৩০ মে ৬১তম লাশের সৎকার করে এসে তিনি জানতে পারেন নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে আক্রান্ত হন তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা। খোরশেদ বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি তিনি। স্বামী খোরশেদ করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন লুনা।
৩০ মে রাতে শুরু হয় তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট। স্ত্রীকে বাঁচানোর তাগিদ নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কারোনা আক্রান্ত খোরশেদ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রাতেই বেরিয়ে পড়েন। একটি আইসিও-সম্পন্ন হাসপাতালের খোঁজে ছুটে বেড়ান দিগি¦দিক। পরের দিন রোববার সকালে আইসিও বেড পাওয়া যাবে এমন আশ্বাসে সিদ্ধিরগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ হয়। কিন্তু সকাল হতেই জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে খোরশেদের স্ত্রী লুনার। যে করোনাযোদ্ধা মানুষের সেবায় গত তিন মাস ধরে এগিয়ে এসেছেন অথচ স্ত্রীকে নিয়ে তিনি নিজেই পড়েছেন বড় বিপদে।
বিএনপির রাজনীতি করা খোরশেদ দম্পতির এই দুঃসময়ে এগিয়ে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে করোনা আক্রান্ত খোরশেদ দম্পতিকে রোববার দুপুরে ভর্তি করালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে।
শামীম ওসমান জানান, ‘করোনা নিয়ে রাজনীতি নয়। মানুষ মানুষের জন্য। কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি বা জামায়াত এগুলো বিচার বিশ্লেøষণের সময় এখন নেই। সবার আগে মানবতা।
তিনি বলেন, আমি সবার আগে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আল্লাহর। পরে বলব আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের ও আমার মাতৃতুল্য নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল কে কোন দল করে তা নয়। করোনায় মানবতার ভালোবাসা পৌঁছে দিতে হবে বাংলার প্রত্যেকটি ঘরে। খোরশেদ কোন দল করে এটি কোনো বিষয় নয়। সেও মানুষের সেবায় অনেক কাজ করে যাচ্ছে। দলমত নির্বিশেষে এখন দেখার বিষয় হচ্ছে ওর স্ত্রীর অবস্থা ভালো না। আর সেই পরিস্থিতিতে আমাদের সবার উচিত বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমার ও সবার দায়িত্ব। শুধু খোরশেদ বা তার স্ত্রী-ই নয়, এর আগেও স্কয়ার হাসপাতালে অনেক সঙ্কাটপন্ন রোগীকে জরুরি চিকিৎসা নিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
তিনি বিশেষ করে স্কয়ার হাসপাতালের মালিক অঞ্জন চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে বলেন, ‘শুধু খোরশেদ ও তার স্ত্রী এই দুই রোগী বিষয়ে নয়, এই হাসপাতালটি করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যান্য রোগী পাঠিয়েও আমি সহযোগিতা পেয়েছি এই হাসপাতালটি থেকে। তাদের প্রতি মনের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’ রোববার বিকেলে নিজের ফেসবুক আইডিতে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জানিয়ে খোরশেদ স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেন, ‘অবশেষে আমি ও আমার স্ত্রী ঢাকার স্কয়ার হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছি’।
কাউন্সিলর খোরশেদ নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হতে পেরেছি। আমি এই ভর্তির বিষয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এমপি শামীম ওসমানের প্রতি। করোনা নিয়ে কোনো রাজনীতির নয়। এটা মানবতা প্রদর্শনের সময়। এমপি শামীম ওসমান আমার স্ত্রীর অবস্থা সঙ্কাটাপন্ন শুনে মোবাইল ফোনে রোববার দুপুরে যোগাযোগ করে স্কয়ার হাসাপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করেছেন। এমপি বলেছেন, খোরশেদ তুমি দ্রুত তোমার স্ত্রীকে নিয়ে স্কয়ারে চলে যাও। এটা রাজনীতির সময় নয়। এটা একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর সময়। তুমি যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছ, তোমার এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমারও দায়িত্ব তোমার ও তোমার স্ত্রী পাশে দাঁড়ানো।
খোরশেদ আরো বলেন, ‘দয়া করে এ নিয়ে কোনো রাজনীতি করবেন না প্লিজ। আমি বিএনপি করি। এমপি শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের এমপি। এখানে কে কোন দলে করে, কার প্রতি কে সহাযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলো এগুলো নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করবেন না দয়া করে। এখন মানবতার সময়।
এ দিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল মুঠোফোনে নয়া দিগন্তকে জানান, খোরশেদের দুঃসময়ে শামীম ওসমান পাশে দাঁড়িয়েছেন; এ জন্য তার কাছে কৃতজ্ঞ। রাজনীতি ভুলে তিনি মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন এ জন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। বর্তমান মানবিক বিপর্যয়ে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
তিনি বলেন, খোরশেদ দম্পতির পাশে শামীম ওসমানের দাঁড়ানো নিয়ে নোংরা রাজনীতি করার সুযোগ নেই। মানুষ মানুষের জন্য। ধর্ম, বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক মতাপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই মানবিক বিপর্যয়কে মোকাবেলা করার নারায়ণগঞ্জে এ সৌহার্দ্যরে সূচনাকে স্বাগত জানাই।


আরো সংবাদ



premium cement