২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকার ২ সিটির দুই ডজন প্রকল্পেই খরচ ৬২ হাজার কোটি টাকা

দক্ষিণে মশা মারতে খরচ করবে ৭১৮ কোটি টাকা
-

উন্নয়ন প্রকল্পের ভারে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) যেন কোমর সোজা করতে পারছে না। যাচাই-বাছাই ছাড়াই এবারের এডিপিতে শত শত প্রকল্প স্থান পেয়েছে। চলমান প্রকল্পের বাইরে শুধু ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশনের জন্যই নেয়া হয়েছে নতুন ২৩টি প্রকল্প। এসব অননুমোদিত প্রকল্পগুলো পাঁচ বছরে বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটির নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক ও ড্রেনেজে ব্যবস্থাপনার পেছনেই যাবে ২৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা। দক্ষিণে মশা মারতে খরচ করবে ৭১৮ কোটি টাকা, শাহবাগ শিশুপার্ক উন্নয়নে ৭৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে। পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সদস্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নুরুল আমীন জানান, করোনার কারণে প্রকল্পগুলো বাছাই করা হয়নি। সামনে এসব বাছাই করা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সমীক্ষার মাধ্যমে আমাদেরকে প্রকল্প নেয়া উচিত। সমীক্ষা সঠিকভাবে না করার কারণে প্রকল্পে অর্থের অপচয় হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কাছে দেয়া প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ সিটির নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের পেছনেই রয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তার উন্নয়ন ও সংস্কার, ট্রাফিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, ঢাকা শহর উন্নয়ন, মিরপুর আনসার ক্যাম্প থেকে কচুক্ষেত হয়ে কাকলী এবং ভাসানটেক থেকে মাটিকাটা পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ, আমিনবাজারে ল্যান্ডফিল্ড আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, উত্তরে আন্ডারপাস নির্মাণ, জরাজীর্ণ কমিউনিটি সেন্টারগুলোকে নতুনভাবে নির্মাণ, ধানমন্ডি রাপা প্লাজা থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত আদর্শ সড়ক রূপান্তর করাসহ বেশ কিছু সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যান ও যন্ত্রপাতিও সংগ্রহ করা হবে।
সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, শহরের নাগরিকদের সেবার মান বৃদ্ধি ও উন্নয়নযাত্রার মানোন্নয়নে এবং শহরকে আধুনিকায়নে এসব প্রকল্পের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ও সড়ক-ফুটপাথ উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। দুই সিটি করপোরেশন মিলে মোট প্রকল্প ২৩টি। প্রকল্পগুলো আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে অননুমোদনপ্রাপ্ত বরাদ্দবিহীন নতুন প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে। উত্তর সিটির ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৪৩৯ কোটি ২৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আর দক্ষিণ সিটির ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ১১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।
আলোচিত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, দক্ষিণ সিটির মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে মশক নিধন প্রকল্পে ব্যয় ৭১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৫৩০ কোটি ১৪ লাখ টাকা খরচে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জরাজীর্ণ ও পুরনো কমিউনিটি সেন্টার নতুন করে নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) ২৯৫ কোটি টাকা খরচে সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, হাজার কোটি টাকায় ট্রাফিক উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়নে ২৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ, বিনোদন সেবার জন্য শাহবাগ কেন্দ্রীয় শিশুপার্ককে আধুনিকায়ন ৭৩৯ কোটি টাকা ব্যয়, ৭১৩ কোটি টাকায় মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোড থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত সড়ককে আধুনিক সড়কে রূপান্তর। এ ছাড়া ১ হাজার ৮৯২ কোটি টাকায় ঢাকা শহর উন্নয়ন প্রকল্প।
উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আন্ডারপাস নির্মাণব্যয় ৪৩৯ কোটি টাকা, আমিনবাজার ল্যান্ডফিল্ড সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে ব্যয় ৭ হাজার ৭ কোটি টাকা এবং জল নিসর্গ: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় মৌজার জলাধার সংরক্ষণে জলজ ও স্থলজ জীববৈচিত্র্য সমন্বিত উন্নয়নে ২ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা ব্যয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটির জন্য এত ব্যয়ে কখনো এত প্রকল্প আগে আসেনি। প্রকল্পগুলো যদি সঠিকভাবে মান রক্ষা করে বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে প্রতিটি রাস্তা কমপক্ষে ১০ বছর সংস্কারের প্রয়োজন হয় না। আর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের জন্য অনেক প্রকল্পই নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর অর্থ জলেই গেছে। যেই যানজট ও অব্যবস্থাপনা সেটাই রয়ে গেছে।
পরিকল্পনা সচিব মো: নূরুল আমীন জানান, নতুন অর্থবছরের সূচনাতে আমরা প্রকল্পগুলো নিয়ে বসব। নতুন যেসব প্রকল্প এডিপিতে নেয়া হয়েছে। করোনার কারণে আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে প্রকল্প নিয়ে যে সিরিজ মিটিং হয়, সেগুলো করা সম্ভব হয়নি। এখন আমরা বাছাই করব।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, নগর উন্নয়নে অবশ্যই পরিকল্পনা নিতে হবে। কিন্তু ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রকল্পের সঠিকভাবে সমীক্ষা না করে যদি প্রকল্প নেয়া হয় তাতে অর্থের অপচয় হবে। ফলে দেখা যাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে আমরা অর্থের জোগান দিতে পারব না।
তার মতে, সিটি করপোরেশনগুলো যদি দেখেন, তারা মশাকেও ঠিক মতো মারতে পারে না। ঢাকা সিটি নর্থের যেটা শুনেছি, দুটো কোম্পানির সাথে অনেক আগে চুক্তি করা আছে। তারাই সরবরাহ করবে। ওদের ওষুধের ভেজাল জনগণতো চোখের সামনেই দেখাতে পায়। মনে হয় মশাবান্ধব ওষুধ। মশা নিধন করবে তো দূরের কথা। তিনি বলেন, এমনিতেই সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা খুব সীমিত। তারপরও দুর্নীতির কথাও শুনতে পাই। আর অদক্ষতা ও অকার্যকরতা তো আমরা চোখের সামনে দেখতে পাই। অপরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাটÑ এগুলো পরিষ্কার না করা। এখানে জনগণে সচেতনতার অভাব আছে ঠিকই। কিন্তু সিটি করপোরেশন জনগণের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement