২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনাকালে ৭৭ লাশ দাফন

তাকওয়া ফাউন্ডেশন অসহায়ের সহায়

-

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক বিপর্যয়ের ধাক্কা বাংলাদেশেও পড়েছে। এর প্রতিকার ও প্রতিরোধে সরকারি পদক্ষেপ তথা দেশব্যাপী লকডাউন, দোকানপাট, অফিস-আদালত বন্ধ, জনসমাগম ও যান চলাচল সীমিত করায় সাধারণ মানুষ নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হন। অবস্থা এমন পর্যায়ে ঠেকে যে করোনা ভীতির কারণে লোকেরা দাফন তো দূরের কথা আপনজনের লাশটি পর্যন্ত শেষবারের মতো দেখার সাহস হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় মাদরাসা শিক্ষক ও ব্যবসায়ী মাওলানা গাজী ইয়াকুবের নেতৃত্ব সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে গঠিত হয় তাকওয়া ফাউন্ডেশন।
বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সংস্থাটি দেশব্যাপী গণমানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে হাজার হাজার লিফলেট বিতরণ করে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন মসজিদ মুসল্লিদের সালাত আদায় নির্বিঘœ করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়। একই সাথে ঢাকার বিভিন্ন থানায় আইন শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত গাড়ি, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, মসজিদ-মন্দির, রিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, সেনাবাহিনীর গাড়িতে করোনা প্রতিরোধে মেশিন দিয়ে স্প্রে করা হয়। এর পাশাপাশি শুরুতে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মাঝে প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হয়। একই সঙ্গে টানা ৬ দিন প্রতিদিন ২০০ করে প্রায় ১২ শ’ পরিবারকে এক সপ্তাহের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এরই মাঝে যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে লাশের কাছে আপনজন স্ত্রী বাচ্চা ছেলে সন্তান স্বামী স্ত্রী কেউই যাচ্ছে না, ঠিক সেই মুহূর্তে তাকওয়া ফাউন্ডেশন একদল নিবেদিত প্রাণ স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সারা দেশে দাফন-কাফন ও জানাজা কাজ শুরু করে।
অবশ্য ঢাকায় সরকারিভাবে শুধু আল-মারকাযুল ইসলামী রহমতে আলম ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে করোনায় নিহতদের লাশ দাফনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় তাকওয়া ফাউন্ডেশন ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, যশোর, কুমিল্লা, চাঁদপুরে, কিশোরগঞ্জ, কক্সাবাজার, ময়মনসিংহের ভালুকা, ভৈরব, ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ, চাঁদপুরের মতলব ও ফরিদগঞ্জ স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতিসাপেক্ষে করোনা পজিটিভ, সাধারণ মৃত্যু ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের এই পর্যন্ত ৭৭টিরও বেশি লাশ দাফন করেছে।
ঢাকায় লাশ দাফনের জন্য অনুমতি পেতে তাকওয়া ফাউন্ডেশন স্বাস্থ্য সচিব বরাবর মেইলে আবেদন করেও আজ পর্যন্ত কোন প্রতি উত্তর পাওয়া যায়নি। ফলে অনেক পরিবার পক্ষ থেকে অনুরোধের পরও আইনি জটিলতার কারণে ঢাকায় করোনায় নিহতদের লাশ দাফন-কাফনে অংশ নিতে পারছে না তাকওয়া ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা। তা সত্ত্বেও গরিব-অসহায় পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলছে পুরোদমে।
এ দিকে রমজানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ৫০০ পরিবারের (৩ জনের উপযোগী) দৈনিক ১৫ শ’ মানুষের মাঝে রান্না করা ইফতারি বিতরণ করা হচ্ছে, সমাজের বিত্তবানদের দান, অনুদান সহযোগিতা নিয়ে এসব ইফতার পথচারী, অসহায়-দরিদ্র মানুষ ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের সেবা-যতœ করতে আসা স্বজন ও নার্স ডাক্তার স্টাফদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পুলিশ প্রশাসনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাকওয়া ফাউন্ডেশন পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজি মাহবুব হোসেনের কাছে একশ পিস পিপি-ই তুলে দিয়েছে।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান মাওলানা গাজী ইয়াকুব নয়া দিগন্তকে বলেন, তাকওয়া ফাউন্ডেশনের এই সেবার পরিধি ও মান বাড়ানোর জন্য আমাদের বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট সুবিধা নেই। নেই কোন অ্যাম্বুলেন্স ও মালবাহী গাড়ি। কোনো স্থায়ী অফিস কিংবা জায়গাও নেই। দেশের সাধারণ মানুষ ও আলেম সমাজ স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে তাকওয়া ফাউন্ডেশনকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। আমরা তাকওয়া ফাউন্ডেশনের কাজকে বেগবান করতে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ বিশেষ করে সাংবাদিক বন্ধুদেরকে পাশে থাকার জন্য বিশেষভাবে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement