২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রণোদনা নীতি সহজ করার দাবি উদ্যোক্তাদের

অর্থসচিব ও গভর্নরকে চিঠি
-

রফতানি বাণিজ্যে বিশ্বব্যাপী করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের গঠিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ব্যবহার নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সুবিধাভোগীদের পেছনে তহবিলের শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যাশনাল আইডি কার্ড (এনআইডি) দিয়ে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু ৫০ ভাগের বেশি গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারীর এনআইডি কার্ড না থাকায় অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব নয় বলে তৈরী পোশাক কারখানার মালিকরা জানিয়েছেন। এ কারণে এ তহবিল ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে উদ্যোক্তারা নীতিমালা সহজ করার দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে তহবিল ব্যবহার উপযোগী করতে তারা অর্থসচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেটের বরাদ্দ হতে সচল রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদানের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করেছে। রফতানি বাণিজ্যে করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় গঠিত এ তহবিল ব্যবহারের জন্য বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত সার্কুলারে বলা হয়, এ তহবিল ব্যবহার করতে পারবেন কেবল সচল রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা। তারা এ তহবিল থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতনভাতা পরিশোধ করতে পারবেন। কিন্তু এ তহবিলের ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে অর্থাৎ শ্রমিক-কর্মচারীদের যেন কেবল বেতনভাতাই পরিশোধ করা হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে শ্রমিক-কর্মাচারীদের অ্যাকাউন্টে অর্থ ছাড় করার শর্ত দেয়া হয়। এজন্য যেসব শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই তাদের এনআইডি কার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কোনো ফি বা চার্জ নেয়া হবে না। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু এ তহবিলের অপারেটর হিসেবে কাজ করবে। এতে কোনো সুদ বা চার্জ নিতে পারবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে যে ব্যাংকের মাধ্যমে এ তহবিল ব্যবহার হবে সেই ব্যাংকের ২ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরে আর কোনো চার্জ বা ফি পরিশোধ করতে হবে না। ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ড বাদে বাকি ১৮ মাসের মধ্যে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান পরিচালক ফজলে শামীম এহসান বলেন, বর্তমানে চার হাজার পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। এদের প্রতি মাসে বেতনভাতা পরিশোধ করতে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সরকার তিন মাসের জন্য বেতনভাতা পরিশোধ করতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। এ তহবিল দিয়ে তিন মাসের বেতনভাতা কিভাবে পরিশোধ করা হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। দ্বিতীয়ত. এ তহবিল থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধের জন্য অর্থ ছাড় হবে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। তার অর্থ হলো সরকার আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।
তিনি বলেন, আমরা এক একজন উদ্যোক্তা ২০-২৫ বছর, কেউ কেউ ৩০ বছর যাবৎ কারখানা চালাই। কোনো শ্রমিক-কর্মচারী বলতে পারবেন না তাদের এক মাসের বেতন বকেয়া আছে। এর পরেও আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু মূল সমস্যা দেখা দিয়েছে, তৈরী পোশাক খাতের যেসব শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন তাদের ৫০ ভাগেরই কোনো এনআইডি নেই। নানাভাবে চাপ দেয়ার পরেও তারা এনআইডি আনতে পারেন না। এখন মাত্র এক মাসের মধ্যে নতুন এনআইডি করে শ্রমিকরা কিভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলবেন এবং কিভাবে আমরা এ তহবিল ব্যবহার করে গত মার্চ মাসের বেতনভাতা চলতি মাসে পরিশোধ করব? অথচ আমরা অনেকেই ঋণ করে ও ব্যক্তি পর্যায়ে ধার করে করোনাভাইরাসের কারণে কিছু কিছু শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছি। চলতি মাসের মধ্যে গত মাসের বেতনভাতা পরিশোধ করতে হবে। কারণ চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই পবিত্র রমজানুল মোবারক শুরু হবে। তিনি বলেন, এসব জটিলতার কারণে তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা তহবিল ব্যবহার দুরূহ হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ পরিস্থিতিতে প্রণোদনা তহবিল ব্যবহার নীতিমালা সহজ ও ব্যবহার উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন তারা। অর্থসচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বরাবর চিঠিও দিয়েছেন। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুতই এ তহবিল ব্যবহার উপযোগী করতে নীতিমালা সহজ করবেন। কারণ ইতোমধ্যে বেশির ভাগ তৈরী পোশাকের রফতানি আদেশ বাতিল হয়ে গেছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের কাজ আছে। তাও বেশি দিন চলবে না। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সামনে শ্রমিকদের বেতনভাতা দেয়ার মতো অর্থ কারো হতেই থাকবে না। এতে শ্রমিকদের ধরে রাখতে না পারলে পুরো খাতই অচল হয়ে যাবে, অর্থনীতিতে যার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন।


আরো সংবাদ



premium cement