তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক বিবরণীর তথ্যেই যদি গলদ থাকে, তাহলে কোনো দিন অ্যাফিসিয়েন্ট (কার্যকর) মার্কেট বা পুঁজিবাজার গড়ে উঠবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের (বিএসইসি) এরিয়া অব কাভারেজ (কর্মপরিসর) বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়েও অনেক বড়। তারা শুধু ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন নিয়ে কাজ করে। তাদের সেখানে সাত থেকে আট হাজার লোকবল রয়েছে। অথচ আমাদের মাত্র ৮৪ জন অফিসার। আর পিয়ন ও দারোয়ান নিয়ে আমরা ১৬০ জন কাজ করি। কাজের তুলনায় জনবল অপ্রতুল।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির কনফারেন্স কক্ষে গতকাল ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টস অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ডিটেকশন অব ফ্রড’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সিকিউরিটি মার্কেটিংয়ের (বিএএসএম) ডিজি মো: মাহবুবুল আলম, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ ও পরিচালক কামরুল আনাম খান, এফআরসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ, সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শুভ্র কান্তি চৌধুরী, সিএমজেএফের প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম রুবেল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এক দিকে শক্তিশালী, অন্য দিকে অসহায়। অপ্রতুল জনবল নিয়ে আমাদেরকে ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, স্টক এক্সচেঞ্জ, এসেট ম্যানেজমেন্ট, ফার্ম ম্যানেজার এবং ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি থেকে শুরু করে আন-লিস্টেড কোম্পানির সবাইকে কাভার করতে হয়। অথচ আমাদের লোকবল মাত্র ৮৪ জন। অর্গনোগ্রাম চূড়ান্তপর্যায়ে থাকলেও এখনো লোকবল নিয়োগ করার পর্যায়ে আমরা পৌঁছাইনি। তিনি বলেন, কোম্পানির মধ্যে অডিট কমিটির প্রধান হবেন একজন স্বাধীন পরিচালক। সিএফও’র দায়িত্ব কী, এমডির দায়িত্ব কী, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কী, অডিটরের দায়িত্ব কীÑ এসব কিছু নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ডিসক্লোজার ভিত্তিতে আইপিও দেয়ার পরেও সব দোষ আসে কমিশনের ওপর। সেকেন্ডারি মার্কেট পড়ে গেলেও কমিশনকে দোষারোপ করা হয়। অথচ আমাদের কোনো বিনিয়োগ নেই। আমরা কারসাজি হলে ধরি, ডিমান্ড-সাপ্লাই ঠিক রাখি এবং এখানে যদি কেউ রিউমার (গুজব) ছড়ায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনি। তারপর মার্কেট ওঠা-নামা করার জন্য আমাদেরকে সব দোষ দেয়া হয়। রেগুলেটর হিসেবে এখানেই অসহাত্ববোধ আমাদের।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, যখন আমরা আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) আনি, তখন এখানে অনেক জাটলারি হয়। সেগুলো যদি তারা আইপিও আসার আগেই ধরতে পারে, তাহলে রেগুলেটররা অর্থাৎ আমরা অনেক শক্তিশালী হবো, বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবে এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার দিকে যাবে, শক্তিশালী হবে। অ্যাফিসিয়েন্ট বা কার্যকর একটা মার্কেট গড়ে তুলতে আমরা সমর্থ হবো। কারণ ইনফরমেশনে যদি গলদ থাকে কোনো দিন অ্যাফিসিয়েন্ট মার্কেট গড়ে উঠবে না। তিনি বলেন, আমরা সাংবাদিকদের প্রাধান্য দিয়ে আজকে এই মিটিংটি (সভা) আয়োজন করেছি। আমি বারবার বলিÑ সমাজে, ক্যাপিটাল মার্কেটে (পুঁজিবাজার) এবং অর্থনীতিতে কী ঘটছে এগুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরার সবচেয়ে বড় মাধ্যম সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্লিয়ার করার জন্যই আজকের এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
ড. খায়রুল হোসেন বলেন, আমরা জানি, কম্পিউটার কিছুই না। অ্যানালিস্ট যে অ্যানালাইসিস করবেন সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। ইনপুট যদি ভুল থাকে, সেখানে যদি মিস লিডিং, ফেব্রিকেটেড এবং ওভার এস্টিমেটেড অথবা আন্ডার এস্টিমেটেড ইনফরমেশন থাকে, তা দ্বারা আপনি যে অ্যানালাইসিস করবেন, তার ভিত্তিতে যদি সিদ্ধান্ত নেন তাহলে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ইকোনমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই সে জন্য ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অ্যানালাইসিসে যে বিভিন্ন দিক আছে, সেগুলো আপনারা জেনে নেবেন।
বিনিয়োগকারীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারী দেখেন, এ কোম্পানিটির ডিভিডেন্ড পে করার অ্যাবিলিটি কী। তারা আরেকটা জিনিস দেখবেন, তা হলো কোম্পানিটির ইনকাম জেনারেশন এবং ক্যাশ ফ্লো কী হবে। এরপর বিনিয়োগকারী যদি কিছু দেখেন তা হলোÑ কোম্পানিটির অতীত কী ছিল, বর্তমান পারফরম্যান্স কী এবং ভবিষ্যতটা কী। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট সেক্টরের মধ্যে কোম্পানিটির অবস্থা কী এবং ইনভেস্ট করা যাবে কি না। তিনি বলেন, কোম্পানি যদি মনে করে, আমার ব্যালেন্স সিট ঠিক আছে, আমার অন্যান্য স্টেটমেন্ট ঠিক আছে, তাহলে সে দেখবে রিটার্ন এবং ইক্যুইটি কোন অপারেশন্স থেকে বেশি আসছে। তাহলে সে অপারেশন্সকে সাপোর্ট দিতে গেলে আমার এক্সপানশন কোন দিকে নিতে হবে। এক্সপানশন কোথায় বেশি হচ্ছে অর্থাৎ কস্ট মিনিমাইজেশন এবং ইনকাম জেনারেশন মেক্সিমাইজেশন করার যথেষ্ট পরিকল্পনাটিও যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারবে কি না। অন্যথায় কোম্পানি নিজে যেমন বঞ্চিত হবে, তেমনি মার্কেট এবং বিনিয়োগকারীও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মার্কেটে স্থিতিশীলতা থাকবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা