২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গতানুগতিক বইয়ে ঠাসা গ্রন্থমেলা

চন্দ্রবতী একাডেমি আয়োজিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি -

ভিগতানুগতিক বইয়ে ঠাসা গ্রন্থমেলা। প্রতি বছরের মতো এবারো মেলায় ভিন্নধারার বই তেমন নেই। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধের বাইরে মেলায় বই পাওয়া কঠিন। মেলা ঘুরে দেখা যায়, স্টলগুলোতে লেখকদের গল্পসমগ্র, নির্বাচিত গল্প, গল্পসংগ্রহ প্রভৃতি নামে বই স্থান পেয়েছে। প্রখ্যাত লেখকদের এসব গল্প এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে প্রকাশকরা যার যার মতো করে মেলায় নতুন করে নিয়ে এসেছেন। যেমন হুমায়ূন আহমেদ, হাসান আজিজুল হক, আল মাহমুদ কিংবা সেলিনা হোসেনসহ অনেক লেখকের বই কোনো গবেষণা ছাড়াই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রকাশ করে পাঠকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
মেলায় আগত একাধিক পাঠক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর মেলায় এত বই প্রকাশ হয় অথচ লোক উপাখ্যান শেকড়ের বই পাওয়া যায় না। তারা বলেন, চলমান অবস্থায় মনে হচ্ছে বইমেলা প্রকাশকবান্ধব নেই। তা এখন শুধু বাংলা সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের অংশ। কারণ মেলায় স্থান পাওয়া নতুন বইয়ে ভিন্নধারার বই কিংবা ভেরিয়েশন নেই। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধের বাইরে মেলায় বই পাওয়া দুষ্কর। তাই আগে প্রয়োজন মেলাকে প্রকাশকবান্ধব করা। কারণ একজন প্রকাশকই পাঠকের চাহিদা বোঝেন। তিনি জানেন পাঠক কী পড়তে ভালোবাসে।
পাঠকদের এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে একাধিক প্রকাশক, লেখক ও কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেন। তারা বলেন, মেলা এলে কিছু মৌসুমি প্রকাশক বই ছাপতে ব্যস্ত হয়ে যায়। তারা পুরনো বই এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে ছেপে স্টলে তোলেন। অথচ এদের বেশির ভাগেরই বই নিয়ে বিশদ জানাশোনা নেই। ফলে এসব বই কিনে পাঠক বিভ্রান্ত হন।
ভিন্নধারার বইয়ের বিষয়ে তারা লেখকদের দোষারোপ করে বলেন, আমরাও সব ধরনের বই প্রকাশ করতে চাই। কিন্তু তরুণ অনেক লেখকের সাথে কথা বলে যেটা বুঝতে পারি তা হলো তরুণ লেখকরা পড়তে, গবেষণা করতে কিংবা নিজের শিকড় চিনতেও রাজি না। তারা শুধু লিখে জনপ্রিয় হতে চায়।
এ দিকে মেলায় গতকাল নতুন বই এসেছে ১৪৬টি। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় পিয়াস মজিদ রচিত মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি শিহাব সরকার এবং গবেষক ড. ইসরাইল খান। লেখকের বক্তব্য প্রদান করেন পিয়াস মজিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
প্রাবন্ধিক বলেন, ভাষাশহীদের স্মৃতিবিজড়িত এই মাসে বাংলা একাডেমিতে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি শীর্ষক বইয়ের যে আলোচনা, তা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বইটির লেখক পিয়াস মজিদ গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করেছেন। বহু উৎস থেকে পুরনো বইপুস্তক, পত্রপত্রিকা, নথিপত্র প্রভৃতি ঘেঁটে অনেকের দৃষ্টির অগোচরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইতিহাসের মূল্যবান অনেকগুলো তথ্য সংগ্রহ ও একত্রিত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলা একাডেমিÑ বইয়ে মুদ্রিত শিরোনামের তিনটি শব্দ অবিচ্ছেদ্য। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে গৌরবোজ্জ্বল একটি অধ্যায়। এই অধ্যায়ের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু; আর বাংলা একাডেমি মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিভূমি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনার ভ্রƒণকেন্দ্র। তিনি বলেন, ষাটের দশক থেকে স্বাধীনতা অব্যবহিত পরবর্তী সময় পর্যন্ত বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও বাঙালি সংস্কৃতির মূল কেন্দ্র ছিল বাংলা একাডেমি। সে দিনের বাংলা একাডেমি তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানুষের জাতীয়তাবাদী মানসের ধারা বিকশিত করতে পেরেছিল। একাডেমির সেই ইতিহাস এই বইয়ের মধ্য দিয়ে আরও উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছে।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মাসরুর আরেফিন, সোহেল হাসান গালিব, সৈয়দ জাহিদ হাসান ও আলতাফ শাহনেওয়াজ। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মাসুদুজ্জামান, মাহবুব আজীজ, জাহানারা পারভীন ও আশরাফ জুয়েল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী শিরিন ইসলাম, আজিজুল বাসার ও মনিরুল ইসলাম।
আজ সোমবার মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত ৭ মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ : বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ ও ড. কুতুব আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
একুশে বইমেলায় গতকাল ঐতিহ্য প্রকাশ করেছে ছয়টি বই। এগুলো হলো ‘সংবিধানের রাজনৈতিক বিতর্ক’ আমীন আল রশীদ। উপন্যাস ‘পিতামহ’ সাব্বির জাদিদ। ‘ডায়োজেনিসের বচনামৃত’ - অনুবাদ ‘সাবিদিন ইব্রাহিম। দৈনন্দিন গল্প, চৌধুরী রওশন ইসলাম। কহে কৈফা, শিমন রায়হান এবং আবদুল্লাহ, কাজী এমদাদুল হক। ‘আরওঙ্গজেব ব্যক্তি ও কল্পকথা’, অড্রি ট্রুসকে। অনুবাদ মোহাম্মদ হাসান শরীফ। মনোজ প্রকাশনীর বই ‘নক্ষত্রচূর্ণ’। বইটি লিখেছেন মুসা আল হাফিজ। প্রকৃতজ শামিমরুমি টিটনের ‘প্রেমের ঘরে সবই ফাঁকা অন্তর ঘরে আমি একা’। প্রকাশ করেছে দি অ্যাটলাস পাবলিশিং হাউস। পরিবেশনা ইউনিভার্সেল একাডেমি। ‘গুনিন’ বইটির লেখক মো: সাইফুর রহমান।

 


আরো সংবাদ



premium cement