দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ রুটে নদীর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। তাই নাব্যতা সঙ্কটের কারণে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে নৌযান চলাচল করছে জোয়ারভাটার ওপর নির্ভর করে। এতে লঞ্চ ও ফেরিসহ নৌযান চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি হঠাৎ ডুবোচরে ধাক্কা লাগার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, বরিশাল, পটুয়াখালীর গলাচিপা, ভোলাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে নৌপথে হঠাৎ ডুবোচর জেগে উঠেছে। এতে করে প্রতিদিনই কোনো না কোনো লঞ্চযাত্রী নিয়ে আটকা পড়ছে ডুবোচরে। এমনকি দুর্ঘটনাও ঘটছে। অথচ প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থান সঙ্কুলান না থাকলেও সাত হাজার ২৮১ কোটি টাকার ৬৯টি ড্রেজার ও ড্রেজার-সংশ্লিষ্ট জাহাজ, টাগবোট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কিনেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ২০১৬ সালে কেনা ড্রেজার সংশ্লিষ্ট তিনটি টাগ জাহাজ ও সার্ভে জাহাজ সরবরাহকারীর ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে। এগুলো কাগজে-কলমে বুঝে নেয়া হলেও রাখার জায়গা না থাকায় বাস্তবে তা বুঝে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে প্রয়োজন না থাকলেও বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেদের লাভের আশায় টেবিলে বসে ড্রেজার কেনার প্রকল্প বানাচ্ছেন। আর মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ আনার ব্যাপারে যেসব কোম্পানি সহযোগিতা করছে সেসব ড্রেজার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকেই তা সরবরাহের কার্যাদেশ দেয়া হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর প্রবিধানমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে চার হাজার ৬৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও আছে চার হাজার ৫৫ জন। এখন এ প্রতিষ্ঠানে ৬০৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কম আছে। নিয়ম অনুযায়ী শূন্যপদই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকার ড্রেজার ও ড্রেজার-সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কিনে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের মহোৎসব হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। আর বছরের পর বছর না চালিয়ে ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম দেশের বিভিন্ন নদীতে ফেলে রাখায় তা এমনিতেই বিকল হয়ে যাচ্ছে।
দেশের নদীপথ সচল রাখার জন্য ১৯৭২ সালে ২টি, ১৯৭৫ সালে ৫টি ও ২০১৪ সালে ৩টি ড্রেজার-সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম কেনা হয়। ২০১৪ সালে তিনটি ড্রেজার কেনা হলেও জনবলের অভাবে এবং ড্রেজারগুলো মানসম্পন্ন না হওয়ায় তা ঠিকভাবে চালানো সম্ভব হয়নি। এর পরেও সেসব কোম্পানির কাছ থেকে ৬৯টি ড্রেজার কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশ সরবরাহ করা হলেও কিছু এখনও সরবরাহের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
এ দিকে নৌপথে ড্রেজিং খাতে চলছে ব্যাপক অনিয়ম। কাগজে-কলমে গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটের ড্রেজিং কাজ করা হয়েছে দেখানো হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, ড্রেজিং না করেই কোটি কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে এই খাতে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, একটি মাত্র ড্রেজার দিয়ে খুব মন্থর গতিতে ড্রেজিং করা হচ্ছে মাওয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরি রুটের প্রধান চ্যানেল কাঁঠালবাড়ী চ্যানেলের কাজ। সঠিকভাবে ড্রেজিং না হওয়ায় গত ৩১ জুলাই বুধবার বন্ধ হয়ে গেছে চ্যানেলটি। এ রুটের বিকল্প চ্যানেলটি ব্যবহার করলে দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হয়। এ ছাড়া চ্যানেলটি সরু হওয়ায় ওয়ানওয়ে চলাচল করতে হয়।
ড্রেজিংয়ের বেহাল দশার কারণে লঞ্চ রুটেরও এই অবস্থা। জানা গেছে, লাহারহাট-ভেদুরিয়া নৌপথের তেতুলিয়া, কালাবদর নদীতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে ৯২ হাজার ঘনমিটার ও বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে দুই লাখ ৯৫ ঘনমিটার, ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরিরুট ও ঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে তিন লাখ ৪০ হাজার ও বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে দুই লাখ ৯৬ হাজার ঘনমিটার, ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের শেওড়ানালা, মিয়ারচর এলাকার মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ ও কির্তনখোলা নদীতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে দুই লাখ ৯৩ হাজার ঘনমিটার, বরিশাল-নাজিরপুর লালমোহন নৌরুটে তেতুলিয়া ও লালমোহন নদীতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে এক লাখ ৩৫ হাজার ঘনমিটার, ঢাকা-পটুয়াখালী-গলাচিপা-খেপুপারা নৌরুটের লোহালিয়া নদীতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে ৭৮ হাজার ও বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে এক লাখ ৫২ হাজার ঘনমিটার, মিরকাদিম বন্দর থেকে তালতলা এলাকায় ইছামতি নদীতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে ৯৬ হাজার ঘনমিটার এবং বরিশাল-পাতারহাট রুটের পাতারহাট লঞ্চঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে বলে সংস্থাটির ড্রেজিং বিভাগ থেকে কাগজে-কলমে দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো মিল নেই।
ভুক্তভোগীরা বলেন, ড্রেজিংই যদি করা হয়ে থাকে তাহলে পটুয়াখালী থেকে গলাচিপা যেতে জোয়ারভাটার ওপরে নির্ভর করতে হবে কেন? এ ছাড়া মিয়ার চরে যে পরিমাণ ড্রেজিং দেখানো হয়েছে সেটা যদি হয়েই থাকে তাহলে দু’টি লঞ্চ পাশাপাশি ক্রস করতে দুর্ঘটনা ঘটবে কেন? তারা বলেন, যেসব জায়গায় ড্রেজিং করা হয়েছে বলা হচ্ছে, সেখানেও লগি দিয়ে পানি মেপে মেপে লঞ্চ চালাতে হয়। দক্ষিণাঞ্চলের কোনো রুটে ড্রেজিং হয়নি বলে দাবি করেছেন এসব রুটে চলাচলকারী লঞ্চের মাস্টার ও ড্রাইভাররা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা