২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


১৩৩৭ কোটি টাকার প্রকল্প দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট উন্নয়ন

-

দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় নদী ভাঙনরোধ, নদী তীর রক্ষা ও যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে নতুনভাবে আটটি ফেরিঘাট এবং দৌলতদিয়ায় ছয় কিলোমিটার ও পাটুরিয়ায় দুই কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ। ঘাটগুলো লো-ওয়াটার, মিড-ওয়াটার ও হাই-ওয়াটার লেভেলে স্থাপন করা হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, আট কিলোমিটার নদী তীর রক্ষায় ৬৮০ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অন্য দিকে ফেরিঘাট স্থাপনের কাজটি করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ। প্রকল্পটি বর্তমানে একনেকে পাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফেরিঘাট উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। দেশের ব্যস্ততম দৌলতদিয়া ফেরিঘাটটিকে আধুনিক ঘাট হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে ‘ফেরিঘাট নির্মাণ ও আধুনিকায়নসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রণয়নের কাজ করছি। প্রকল্পটির তীর রক্ষার কাজটি করবে পানিসম্পদ বিভাগ এবং ঘাট উন্নয়ন অ্যাপ্রোচ রোডসহ আনুষঙ্গিক কাজ হবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ফেরি পারাপারে দৈনন্দিন যে অব্যবস্থাপনা ও যাত্রীদের ভোগান্তি রয়েছে তা দূর হবে। বিশেষ করে ঈদের সময় ফেরিঘাটে যে দুর্বিষহ যানজট তৈরি হয় সেটি আর থাকবে না। পাশাপাশি সারা বছরই ফেরিঘাট চালু রাখা সম্ভব হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসির অধীনে পাটুরিয়া সেক্টরে ২০টি, শিমুলিয়া সেক্টরে ১৯টি, চাঁদপুর সেক্টরে চারটি, ভোলা সেক্টরে তিনটি ও লাহারহাট সেক্টরে চারটিসহ মোট ৫০টি ফেরি চলাচল করছে। ফেরি সার্ভিসের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের আমলে ইতোমধ্যে দুটি রো রো ফেরি, ছয়টি কে-টাইপ ফেরি, ১২টি ইউটিলিটি টাইপ ফেরি নির্মাণ করা হয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ আরো দু’টি কে-টাইপ ফেরি বিআইডব্লিউটিসির বহরে যুক্ত হবে। এ ছাড়াও নতুন নতুন ফেরি সার্ভিস চালু করা এবং পুরাতন ফেরির রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে প্রকল্পের আওতায় ছয়টি কে-টাইপ ও ছয়টি ইউটিলিটি টাইপ ফেরি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো জানায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত এই ঘাট দিয়ে নৌপথে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীবাহী ও মালবাহী পরিবহন পারাপার হয়ে থাকে। তবে পদ্মার দুই পাড়ের ঘাটগুলোর অনুন্নত অবকাঠামো, নদী ভাঙনে ঘাটের আয়তন হ্রাস পাওয়ায়, ফেরির স্বল্পতা, যানবাহনের আধিক্য, নদীতে নাব্য সঙ্কট ও সংযোগ সড়কের বেহাল দশাসহ বিভিন্ন কারণে উভয় পাড়ে প্রতিদিন মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে শত শত গাড়ি। বিশেষ করে দুই ঈদসহ অন্যান্য উৎসবে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অনেক ক্ষেত্রে পণ্য পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এটি নিত্যপণ্যের দামের ওপরও প্রভাব ফেলে। বর্ষাকালে ঝড়-বৃষ্টির জন্য আবার শীতের কুয়াশাতেও ফেরি বন্ধ থাকে। এ ছাড়া নানা কারণে দুই পাশের ছয়টি করে ১২টি ঘাটের মধ্যে চার থেকে পাঁচটি ঘাট প্রায় বন্ধই থাকে। ঘাটের বেহাল এমন দশা এবং যাত্রীদের দুর্ভোগ লাগবের কথা মাথায় রেখেই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের আওতায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের আধুনিকায়নে দুই পাশেই আধুনিক সুবিধাসংবলিত বহুতল টার্মিনাল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। নতুন ফেরিঘাট নির্মাণ, আরসিসি পার্কিং ইয়ার্ড, অভ্যন্তরীণ রোড এবং ফেরিঘাট অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হবে। ফেন্সি ওয়ালসহ ফেরিঘাটের কাছে প্রটেকশন ওয়ালের মাধ্যমে নদীর তীরও শক্তভাবে রক্ষা করা হবে। ফেরিঘাটে স্টিল জেটি নির্মাণ করা হবে। এগুলো ঘাট থেকে নদীর দিকে আড়াআড়ি থাকবে, যাতে শীত-বর্ষা সবসময় ফেরি ভিড়তে পারে। উভয় পাশেই উন্নতমানের ফোর লেন সংযোগ সড়ক থাকবে। ঘাটে নৌ-যানগুলোর আগমন-নির্গমন এবং ফেরিতে পারাপারের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী ও পরিবহনগুলোর জন্যও গড়ে তোলা হবে উন্নত টার্মিনাল ও পার্কিং সুবিধা। উন্নত বিশ্বের ঘাটগুলোর সুযোগ-সুবিধার আদলে প্রকল্পটি পরিচালনা করা হবে।
জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ এ বছর দৌলতদিয়ায় ফেরিঘাট রক্ষায় ৫২ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছে। এজন্য ব্যয় হয়েছে তিন কোটি টাকা। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড গত জুনে ৪২ হাজার ও অক্টোবরে এক লাখ ১০ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে, যার ব্যয় হয়েছে সাত কোটি টাকা। ওই এলাকায় নদী তীর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement