সাউথইস্ট ব্যাংক নওগাঁ শাখা থেকে ১১৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন এক দম্পতি। ওই দম্পতি হলেন নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ মোড়ের বাসিন্দা ও বগুড়ার জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল আগরওয়ালা (৫৬) এবং তার স্ত্রী মেসার্স শুভ ফিড প্রোসেসিংয়ের স্বত্বাধিকারী দীপা আগরওয়ালা (৪৮)। সাউথইস্ট ব্যাংক নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপক কামারুজ্জামান গত ৯ অক্টোবর নওগাঁ সদর থানায় ওই দম্পতির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি এম কামাল হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, গোপাল আগরওয়ালা নওগাঁর একজন পুরনো ব্যবসায়ী ছিলেন। তার ব্যবসার সুনাম ছিল। এ কারণে পর্যায়ক্রমে সাউথইস্ট ব্যাংক নওগাঁ থেকে তাকে ১১৫ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গত কিছু দিন ধরে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ দিকে তার পরিবার পরিজন থাকেন ভারতে। বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর গোপাল আগরওয়ালার নামে থানায় জিডি করা হয়েছে। একই সাথে ঋণের বিপরীতে দেয়া তার সব জামানত ব্যাংকের অধীনে নিয়ে আসার জন্য আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। কী পরিমাণ জামানত আছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে এমডি জানান, গোপাল আগরওয়ালার দেয়া জামানত বিক্রি করে ৬০ কোটি টাকা থেকে ৭০ কোটি টাকা সমন্বয় করা যাবে। কিন্তু এসব সম্পদ অন্য ব্যাংকের কাছেও জামানত দেয়া আছে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জেএন ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল আগরওয়ালা এবং মেসার্স শুভ ফিড প্রোসেসিংয়ের স্বত্বাধিকারী দীপা আগরওয়ালা ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধার জন্য আবেদন করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের নামে বিভিন্ন ধরনের ঋণসুবিধা মঞ্জুর করে। এভাবে গোপাল আগরওয়ালাকে ৮৪ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রী দীপা আগরওয়ালাকে ৩০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজারসহ মোট ১১৪ কোটি ৯৪ লাখ ২ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
পরবর্তীতে তারা ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের মৌখিক আশ্বাসে এবং ব্যবসায়িক দিক বিবেচনা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে এবং গৃহীত ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য সময় দেয়া হয়। অতঃপর তারা ব্যাংকের সাথে সব প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং সম্পূর্ণরূপে আত্মপোগন করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে ওই দম্পতি ব্যাংকের ঋণের টাকা পরিশোধ না করে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
জানা গেছে, গত তিন মাস থেকে ইন্ডাস্ট্রির সব কার্যক্রম একদম বন্ধ রয়েছে। তবে এর আগে থেকেই কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে ছাঁটাই করা হয়। যেসব সরঞ্জাম রয়েছে সেগুলোতে মরিচা ধরা শুরু করেছে। ওই এলাকার জমির বর্তমান মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা শতাংশ। সে হিসাবে ১৩ দশমিক ১৫১ বিঘা জমির দাম প্রায় ১৩ কোটি ২ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্থাপনাসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট দাম প্রায় ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা। গত কয়েক মাস থেকে ইন্ডাস্ট্রিজটি পড়ে থাকায় মরিচাধরাসহ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে জমিসহ ওই ইন্ডাস্ট্রিজটি বিক্রি করা হলে ২৫-৩০ কোটি টাকা মূল্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী দীপা আগরওয়ালাকে ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। বাস্তবে মেসার্স শুভ ফিড প্রোসেসিং থাকলেও এর কোনো কার্যক্রম নেই। সেখানে প্রয়োজনে জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ধান রাখার কাজে ব্যবহৃত হতো বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো: সিরাজুল ইসলাম গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে তিনি এ বিষয়ে পরে জানাতে পারবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা