০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঘামে গড়া স্বপ্ন আগুনে পুড়ে হলো শেষ

-

কঠোর পরিশ্রম করে দিন শেষে ঘরে ফেরেন গৃহপরিচারিকা রহিমা। এরপর নিজের ঘরেই শুয়ে ছিলেন তিনি। কিছুক্ষণ পরেই আগুন আগুন চিৎকার শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। তারপর আগুন তাকে আর ঘরে ঢুকতে দেয়নি। বের করা সম্ভব হয়নি ঘরের ভেতরে থাকা জিনিসপত্র বা কাপড় চোপড়। চোখের সামনেই দাউদাউ করে আগুন জ¦লছে। তিল তিল করে পরিশ্রমের ঘামে গড়ে তোলা স্বপ্নও সেই সাথে পুড়ে গেল। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম বলে আহাজারি করছিলেন রাজধানীর মিরপুর রূপনগর চলন্তিকার মোড়ে ঝিলপাড় বস্তির বাসিন্দা গৃহকর্মী রহিমা। আর বলছিলেন, ‘এক কাপড়ে বাইরাইয়া আইছি। আমার আর কিছুই নাই... আমার সব শ্যাষ।’
বস্তির আরেক বাসিন্দা অটোরিকশাচালক সোহেল মিয়া বলেন, অটোরিকশা চালিয়ে সারা দিন যা ইনকাম, তাতে খেয়ে থেকে চলে যেত। মাঝে মধ্যে রোগবালাই হলে ওষুধ কিনতেই হিমশিম খেতে হয়। তবুও একভাবে দিন কাটছিল। কিন্তু আগুনে এহন হারাতে হলো আশ্রয়, নেই খাবারের বন্দোবস্ত। আমগো তো ঘরহারা, সহায়-সম্বলহীন মানুষের এ বস্তির ঘরই ছিল শেষ আশ্রয়। তাও শেষ। এখন কোথায় থাকব, কোথায় খাবো জানি না। ঘরের টাকা কড়িও সব পুড়ে গেছে।
শুধু রহিমা আর সোহেল মিয়া নন; ঝিলপাড় বস্তিতে নিজের ঘরের জায়গায় বসে আহাজারি করছেন সর্বস্ব হারানো প্রায় তিন হাজার পরিবার।
পুড়ে যাওয়া ঘরের পাশে বসে আছেন বৃদ্ধ জাহাঙ্গীর। নিজের পরনের লুঙ্গি দেখিয়ে বললেন, আমার সব শেষ। পরনের লুঙ্গি আর এই শার্ট ছাড়া কিছুই নাই। সব আগুনে পুড়ে গেছে। এখন কি খাবো, কোথায় থাকব? প্রশ্ন জাহাঙ্গীরের। স্ত্রী, চার মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে পাঁচটি ঘরে থাকতেন তিনি।
ঘর আর সম্পদ হারানোর পাশাপাশি নিজের জীবিকাও হারিয়েছেন কেউ কেউ। ঢোল বাজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা মুরাদ ঢুলি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুনে পুড়ে গেছে তার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন, তার ঢোল। আগুন কেড়ে নিয়েছে তার সহায় সম্বল সব কিছুই।
গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, ঝিলের ওপর বাঁশ আর কাঠের গাঁথুনিতে তৈরি শত শত ঘরের শেষ চিহ্ন বলতে দেখা যায় পোড়া টিন, পুড়ে যাওয়া বাঁশের খুঁটির অবশিষ্টাংশ। পুড়ে ছাই হওয়া শেষ আশ্রয়স্থলে অবশিষ্টের খোঁজে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসী এখনো ধ্বংসস্তূপে অবস্থান করছেন। বস্তিজুড়ে টিন ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। কেউ-কেউ পুড়ে যাওয়া জিনিস বারবার হাতড়াচ্ছেন, কিছু পাওয়া যায় কি না, তাই ভেবে। ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীর অনেকে গালে হাত দিয়ে সর্বস্ব হারানোর বেদনায় ঠায় বসে আছেন। কেউ পোড়া খাট, টিভি, হাঁড়ি-পাতিল, কাপড়-চোপড়, চুলা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
দেখা যায়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তির ভেতরে ঢোকার মুখেই ধ্বংসস্তূপ থেকে অবশিষ্ট অংশটুকু ভ্যানে নিয়ে গলিতে দাঁড়িয়ে আছেন লোকমান মিয়া। পেশায় সুইপার লোকমান কান্নাকাটি করে বলেন, সন্ধ্যায় কামে গেছি। আগুনে পুড়ছে সব খবরটাও পাই নাই। আইসা দেখি সব পুড়ে শেষ। ৩০ বছর ধরে এই বস্তিতে থাকছি। কখনো এমন করে আগুনে পুড়ে সব হারাই নাই।
গার্মেন্টকর্মী লিনা। তিনি বলেন, ঈদে গ্রামে গিয়েছিলাম স্বামী-সন্তানের সাথে। আগুনের খবর শুনে রাতেই গাড়িতে উঠে ঢাকা আসি। কিন্তু এসে দেখি আমার ঘর কোনটা বোঝা বড় দায়। পুড়ে সব ছাই। এর মধ্যে পুড়ে যাওয়া লোহার খাট, ইস্টিলের আলমারি, হাঁড়ি-পাতিল যা কিছুটা ব্যবহার করার মতো তাই উদ্ধারের চেষ্টা করছি। তিনি কান্না করে বলেন, অনেক দিনের কষ্টের টাকায় গুছিয়েছিলাম সংসার। হঠাৎ আগুনে এভাবে সব পুড়ে ছাই হবে ভাবতে পারিনি।
অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করে কিছু টাকা জুগিয়ে ৪০টি ঘর তুলেছিলেন ওসুমান বেগম। দুই ছেলে, এক মেয়ে, মেয়ের জামাই, নাতিসহ সবাইকে নিয়ে এখানে বসবাস ছিল তার। নিজেদের থাকার পর যে ক’টি ঘর খালি ছিল তা ভাড়া দিয়েছিলেন। চলতেন সেই টাকা দিয়েই।
সব হারিয়ে প্রায়ই মূর্ছা যাচ্ছিলেন এই নারী। এক ফাঁকে তিনি বলে ওঠেন, ‘শ্যাষ হইয়া গেছি...আমি এহন কী করুম...’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বস্তিটিতে বরিশাল, ভোলাসহ বেশ ক’টি জেলার নিম্নআয়ের মানুষের বাস ছিল। এখানকার বেশির ভাগ বাসিন্দা হচ্ছেন রিকশাচালক, গার্মেন্টকর্মী, বাসা-বাড়িতে ও মেসে বুয়ার কাজ করেন এমন লোক। গত ৪০-৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন তাদের অনেকেই। এবারই প্রথম আগুনে এত বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হলেন তারা।
গত শুক্রবার রাত ৭টা ২২ মিনিটে আগুন লাগে মিরপুরের চলন্তিকা ঝিল বস্তিতে। ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিটের ১২৫ জন কর্মী রাত ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং রাত দেড়টায় আগুন পুরোপুরি নির্বাপন করে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, পুরো এলাকায় প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল। আগুন লাগার পর পাইপগুলো গলে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং মুহূর্তেই পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।


আরো সংবাদ



premium cement
চিতলমারীতে অগ্নিকাণ্ডে ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের বুনিয়াদ ঠিক রেখে দেশের প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য দেখাতে হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী বন্ডের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ করলে জনগণের উপরে কর চাপ কমবে ইসতিসকার নামাজে বাধা ও গ্রেফতারের নিন্দা জামায়াতের লাশ ও কঙ্কাল চুরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের রুল ব্যারিস্টার খোকনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার কুবিতে সহকারী প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ ঢাবিতে প্রতি বছর বৃত্তিসহ ভর্তির সুযোগ পাবে ২০ ফিলিস্তিনি সমুদ্রসীমায় ২০ মে থেকে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ বাকিতে চিপস-সিগারেট না দেয়ায় দোকানিকে কুপিয়ে হত্যা

সকল