৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


  উত্তরখানে মা-মেয়ে ও ছেলের মৃত্যু সুইসাইডাল কেস মনে করছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা

-

রাজধানীর উত্তরখানে মা-মেয়ে ও ছেলের মৃত্যুর ঘটনাকে আপাতদৃষ্টিতে সুইসাইডাল কেস বলে মনে করছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। আলামত অনুযায়ী তাদের ধারণা, নিহত তিনজনের মধ্যে যেকোনো একজন অপর দুইজনকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা: সোহেল মাহমুদ। গতকাল বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সোহেল মাহমুদ বলেন, পোস্টমর্টেমের পর যে আলামত পেয়েছি, সেগুলো কনফার্ম করার জন্য ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক বোর্ড সিন অব ক্রাইম ভিজিট করেছি। সেখানে ভিজিট করে অনেক তথ্য পেয়েছি।
যেকোনো একজন অন্য দু’জনকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে ডা: সোহেল মাহমুদ বলেন, আপাতদৃষ্টিতে সুইসাইডাল কেস মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা গিয়েই প্রথমে বাসার দরজা পরীক্ষা করি। বাসার দরজার ছিটকিনি ভেতর থেকে লক ছিল, পুলিশ আমাদের জানিয়েছে তারা শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ঘটনাস্থল ঘুরে আমরা শাবল দিয়ে দরজা ভাঙার আলামত দেখতে পেয়েছি। এরপর বাসার ভেতরে ঢুকতেই মেঝেতে প্রচুর রক্তের দাগ দেখতে পাই, যার ওপরে কিছু মাছি মরে পড়ে ছিল।
সোহেল মাহমুদ আরো বলেন, আমরা যখন ডাইনিং টেবিলের ওখানে যাই, টেবিলের ওপরে একটা কীটনাশক বিষের খালি কৌটা পাই। আর ঘুমের ট্যাবলেটের পাতা পাই, যেখানে ১০টি ট্যাবলেট থাকার কথা, কিন্তু মাত্র দু’টি ট্যাবলেট ছিল, আর আটটি নেই। মা-মেয়ে যে বিছানায় মারা গেছে আমরা ওই বিছানাতেও রক্ত দেখতে পাই। ফ্লোরে বমি পড়ে ছিল, সেগুলো সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সিআইডিকে দেয়া হয়।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বলেন, সব কিছু মিলিয়ে আমাদের মাথায় অনেক প্রশ্নের সূত্রপাত হয়েছে। সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আমরা থানায় গিয়ে পুলিশের জব্দ করা আলামতগুলো দেখি। একটা বঁটি আর দুটো রক্তাক্ত ছুরি পুলিশ জব্দ করেছে। সেগুলো থেকে ব্লাড সংগ্রহ করে সিআইডির কাছে ডিএনএ স্যাম্পলিংয়ের জন্য পাঠাই। তাদের বলেছি ছুরিতে আঙুলের ছাপ ও রক্তের ডিএনএ স্যাম্পল পরীক্ষা করতে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর আসলে বোঝা যাবে তাদের মৃত্যু সুইসাইডাল নাকি হোমোসাইডাল। ডা: সোহেল মাহমুদ বলেন, আপাতদৃষ্টিতে সুইসাইডাল কেস মনে হচ্ছে। যদিও ছেলের গলার কাটা চিহ্নটা আত্মহত্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকা, বিষের বোতল পাওয়া সব মিলিয়ে আত্মহত্যাই মনে হচ্ছে।
সোহেল মাহমুদ বলেন, কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস করার পরই জানা যাবে কে বিষ খেয়েছিল। রিপোর্টে যদি মায়ের শরীরে বিষের আলামত পাওয়া তাহলে বলা যাবে মা নিজে মেয়ে ও ছেলেকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। আর তা না পাওয়া গেলে তাহলে বলা যাবে, ছেলেই মা-বোনকে হত্যা করে এমনটা করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত রোববার রাতে উত্তরখানের ময়নারটেকের চাপানেরটেক এলাকার ৩৪/ডি নম্বর বাড়িতে একটি বাসার দরজা ভেঙে মা জাহানারা বেগম মুক্তা (৪৮), ছেলে কাজী মহিব হাসান রশ্মি (২৮) ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিমের (২০) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পোস্টমর্টেমে মা-মেয়ের গলায় শ্বাসরোধের চিহ্নহ্ন এবং ছেলের গলাকাটা পাওয়া যায়। পুলিশ ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে দু’টি চিরকুটও উদ্ধার করে।
তবে মা-মেয়ে ও ছেলের মৃত্যু কি আত্মহত্যা না হত্যাকাণ্ড তা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। লাশের পাশে পুলিশ যে দু’টি চিরকুট পেয়েছে, তাতে নিহত মা ও সন্তানেরা নিজেদের মৃত্যুর জন্য আত্মীয়-স্বজন ও ভাগ্যকে দায়ী করেছেন। সেই সাথে তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করে দেয়ার জন্যও অনুরোধ করেছেন। তবে চিরকুট দু’টি মা-ছেলের লেখা কি না তা যাচাই বাছাই করছে পুলিশ।


আরো সংবাদ



premium cement