বাংলা ও ইংরেজির পর প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের এবার গণিতভীতি দূর করতে বিশেষ উদোগ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রায় ৫০০ কোটি (৪৯৯.৫৮ কোটি) টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের সব বিভাগের নির্বাচিত ১৬ জেলার ১৬টি উপজেলায় এ প্রকল্প শুরু করা হবে। প্রকল্পটি ১ জানুয়ারি ২০১৮ সাল থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নানা প্রস্তুতি আর অনুমোদন পেতে সময় চলে গেছে ১০ মাস। আজ কেবল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও অবহিতকরণ কর্মশালা হতে যাচ্ছে ডিপিইতে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদনে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবই পড়তে পারে না। গণিত শিক্ষার অবস্থা আরো করুণ। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্র্জন করা এখন সময়ের দাবি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব মো: আকরাম-আল-হোসেন দেশের প্রাথমিক শিক্ষা চিত্র তুলে ধরে ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ের একটি নির্দেশনামূলক পরিপত্র জারির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে গত সপ্তাহে বলেছেন, প্রাথমিকের শিশুরা বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে যথাযথভাবে পড়তে, বলতে ও লিখতে পারে না। অথচ পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চতর শ্রেণীতে ভর্তি হয়। এ পরিপত্রের পরপরই গণিতভীতি দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হলো মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাথমিকের গণিত শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতভীতি দূর করতেই ওপরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো: গিয়াস উদ্দিন আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, সারা দেশেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতভীতি রয়েছে। প্রাথমিকের অবস্থা আরো বেশি খারাপ বলা যায়। শুরুতেই প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে এ ভীতি দূর করা না গেলে উপরের শ্রেণীতে পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা তাদের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। তাই প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের থেকেই এ উদ্যোগ নিতে ওই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রায় ১০ মাস বিলম্ব হলেও পুরো ২০১৯ সালকে ব্যবহার করা গেলে এর ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন এ অতিরিক্ত সচিব।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ১৬ বছর ধরে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় ধরনের সাফল্য ও দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে। এ সাফল্যের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে গণিতভীতি দূর করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গণিত নিয়ে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষকদের মধ্যে যে ‘একই অঙ্ক বারবার অনুশীলন’ নির্ভর ধারণা রয়েছে, তা দূর করতে শিক্ষক প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করা হবে; যার মাধ্যমে একটি অঙ্ককে একাধিক নিয়মেই করা যায়, এ ধারণা সৃষ্টি করা হবে। শুধু শিক্ষক যে নিয়মে করান সেটিই একমাত্র নিয়ম নয়, এ ধারণা দূর করা।
মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি প্রাথমিকের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমিত থাকবে। তাদের নিয়েই জেলাপর্যায়ে গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হবে। প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, ‘একই অঙ্ক বারবার অনুশীলন’ নির্ভর গণিত শিক্ষাকে ‘সমস্যা সমাধান, ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক প্রয়োগ’ নির্ভর পদ্ধতি গ্রহণপূর্বক একটি সামগ্রিক গণিত পাঠদান পদ্ধতি প্রস্তুত ও প্রয়োগ করা।
প্রকল্পটি পাইলটিং হিসেবে দেশের সব ক’টি বিভাগের মধ্য থেকে ১৬ জেলার ১৬টি উপজেলার ৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে শিক্ষার্থীদের সমস্যা চিহ্নিত করে। তা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে নির্বাচিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক পর্বে অংশগ্রহণ করানো হবে। নির্বাচিত উপজেলায় একটি করে প্রাথমিক গণিত অলিম্পিয়াড ও বিজয়ীদের জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রাথমিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের অংশগ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, আজ ডিপিইর অডিটোরিয়ামে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শীর্ষক প্রকল্পের অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং সহসভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।