৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নাটোরে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার ও তার ২ ভাইকে অপহরণের অভিযোগ, অতঃপর উদ্ধার

- ছবি : নয়া দিগন্ত

নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণকারীরা কালো মাইক্রোবাসে ব্যাপক নির্যাতন মারপিট করে সোমবার সন্ধ্যার পর সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের সাঐল গ্রামে তার বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়। খবর পেয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম নিজে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। পরে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিতসকরা দ্রুত তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। এ সময় নাটোর থানার ওসি মিজানুর রহমান পুলিশ পাহারায় তাকে রাজশাহী পৌছে দেন।

স্থানীয়রা বলেছেন, শুধুমাত্র নির্বাচন থেকে দূরে রেখে অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবিব রুবেলকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী করতেই সারাদিন এসব করা হয়েছে। এখন উপরের চাপে দেলোয়ার হোসেনের ভাইয়েরা অপহৃত হওয়ার কথাও অস্বীকার করা শুরু করেছেন।

নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী আওয়ামী লীগ কর্মী দেলোয়ার হোসেন ও তার দুই ভাইকে পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অপর প্রার্থী স্থানীয় এমপি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আপন শ্যালক অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবিব রুবেলকে দায়ী করা হচ্ছে। লুৎফুল হাবিব সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে জানতে লুৎফুল হাবীবের মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সিংড়া থানা ও ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন স্থানীয় এমপি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আপন শ্যালক অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবিব রুবেল। রোববার পর্যন্ত তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। সোমবার সকালে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী দেলোয়ার হোসেন নাটোর স্টেশন এলাকার একটি কম্পিউটারের দোকানে আসেন। এ সময় তার চাচাতো ভাই কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলা উদ্দিন মুন্সি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেয়ার জন্য বের হন। তারা কোড নম্বর জানার জন্য নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে আসলে কালো রং এর মাইক্রোবাসে করে এসে কয়েকজন যুবক তাদের পথরোধ করেন। একপর্যায়ে জোর করে তাদের ওই মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যান। এরপর থেকে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় দেলোয়ার হোসেন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ঘটনাটি জানান। বিকেল ৪টার দিকে দেলোয়ার হোসেন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার আরেক সহোদর ভাইকে নিয়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে যান। বিকেল চারটার কিছু পরপরই একই মাইক্রোবাসে করে দুর্বৃত্তরা জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আসেন। তারা প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে কিলঘুষি মারতে মারতে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। এ সময় সেখানে একাধিক সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন।

উপস্থিত সাংবাদিকরা জানান, সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন আলী ও শেরকোল ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি সানোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন যুবক দেলোয়ার হোসেনকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান।

তবে সন্ধ্যায় কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলা উদ্দিন মুন্সি বলেন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমাম মাইক্রোবাসে করে তাদের দু’জনকে বাড়িতে পৌছে দিয়েছেন। সকালে তারা দুই ভাই অপহৃত হননি।

অপরদিকে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, জরুরী সেবার ৯৯৯ নম্বর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি সকালের ঘটনার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন। তিনি জেনেছেন সকালে অপহৃত দুজনকে মাইক্রোবাসে করে ঘোরানো হচ্ছে। পুলিশ তাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে। উভয় ঘটনা তার থানা এলাকার বাইরে তাই তিনি এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে পরে বলবেন।

নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকালের ঘটনাটি আমি জানতাম না। বিকেলের ঘটনার কথা শুনেছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পুলিশ দুর্বৃত্তদের আটক করার জন্য ও অপহৃত চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে উদ্ধারের জন্য তৎপরতা শুরু করেছে।

নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞা জানান, তিনি নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি পুলিশ সুপারকে বিভিন্ন স্থানে চৌকি বসিয়ে ওই দেলোয়ার হোসেনকে উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement