০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


চুয়াডাঙ্গায় বখাটের উৎপাতে মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যা

চুয়াডাঙ্গায় বখাটের উৎপাতে মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যা - নয়া দিগন্ত

চুয়াডাঙ্গায় বখাটের উৎপাতে ও পরিবারের বঞ্চনায় অভিমান করে মাসুমা আক্তার (১৭) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার সন্ধ্যার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়ায় নিজ ঘরে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

আত্মহত্যাকারী মাসুমার বাবা আমিনুল ইসলাম কলেন, ‘আমার মেয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি আমার সকল কাজে সাহায্য করত। শুক্রবার সকালে মাসুমা আমার চায়ের দোকান খুলে চা তৈরির ব্যবস্থা করছিল। এ সময় একজন ক্রেতা চা-খাওয়ার জন্য দোকানে আসে। ঠিক ওই সময় আরামপাড়ার মোবার ছেলে কালাম (২৫) দোকানে ঢুকে ওই ক্রেতা ও আমার মেয়ের সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। আমার মেয়ে তাকে নিষেধ করলে তিনি তাকে চড় মারে ও একটি হাতুড়ি দিয়ে তাকে আঘাত করার চেষ্টা করে। এ সময় মাসুমা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে মোবাইলফোনের মাধ্যমে ঘটনা জানতে পেরে আমি মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যাই। এ সময় বখাটে কালাম তাকে কিভাবে উৎপাত করেছে তা মাসুমা আমাকে খুলে বলে। আমি ঘটনাটি মাছপট্টি ও গমপট্টি বাজার কমিটিকেও জানাই। এদিকে দোকানে গেলে লোকজন মাসুমাকে কালাম কেন থাপ্পড় মেরেছে ওই বিষয়ে জানতে চায়। দুপুরের পরে আমি দোকান থেকে বাড়িতে এসে এসব বিষয় নিয়ে আমার স্ত্রীকে বকাবকি করি। মাসুমা এ সময় নিজের ঘরে ছিল। পরে বড় মেয়ের বাড়িতে আটা দেয়ার জন্য আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। এর আগে দোকানের জন্য একটি ব্যাগে খড়ি ভরে রাখতে মাসুমাকে বলে যাই। সন্ধ্যার আগে আমি বাড়ি ফিরে দেখি ব্যাগে খড়ি গোছানো রয়েছে। এ সময় মেয়ের নাম ধরে ডাকলেও কোনো সাড়া পাইনি। মেয়ে ঘুমিয়ে আছে কি না তা দেখতে ওর ঘরের পর্দা সরাতেই দেখি মাসুমা আড়ার সাথে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে। এ সময় আমি মেয়ের পা জড়িয়ে ধরে উঁচু করে তার মাকে ডাকি। মেয়ের মা বটি দিয়ে ওড়না কেটে নিচে নামালে মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’

আত্মহত্যাকারী মাসুমা আক্তার হকপাড়ার চা বিক্রেতা আমিনুল ইসলামের মেয়ে ও চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার আলিয়া মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতাল ও ঘটনাস্থল পরিবদর্শন করেছেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। এ সময় তিনি মাসুমার পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন ও ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত শুনেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, বিকেলে সদর থানাধীন হকপাড়ায় এক মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিহতের লাশটি সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষ পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. উৎপলা বিশ্বাস বলেন, ‘সন্ধ্যার আগে পরিবারের সদস্যরা মেয়েটিকে জরুরি বিভাগে নেয়। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানতে পারি মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়েছিল। তবে জরুরি বিভাগে আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। হাসপাতালে নেয়ার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্ত হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হবে।’

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement