০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শিশুর মাটি খাওয়া সমস্যা!

-

একটু আগে দেখেছেন আপনার বাচ্চা মাটিতে খেলছে। পরে খেয়াল করে দেখেন তার মুখে মাটি বা বালি লেগে আছে। খুব আগ্রহ নিয়ে সে এসব অখাদ্য গিলছে। শুধু কি মাটি? অনেক শিশু কাগজ, প্লাস্টিক, লবণ, বরফ, কয়লা, ছাইকেও প্রিয় খাবার করে নেয়। এ সমস্যাটি আমরা বলি ‘পিকা’, অর্থাৎ রোগী দিনের পর দিন খাদ্য নয়, অথবা পুষ্টিমান নেই এমন বস্তু গ্রহণ করে।
শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটি বেশি পাওয়া যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরও ‘পিকা’ হতে দেখা গেছে। অবশ্য তাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই মানসিক বৈকল্য রোগ থাকে। আফ্রিকা এবং ভারতের কিছু এলাকায় গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে মাটি খাওয়া (এবড়ঢ়যধমরধ) সমস্যাটি মোটেও বিরল নয়। বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এক সিজোফ্রেনিয়া রোগী ভর্তি হয়েছিল পেটে প্রচণ্ড ব্যথা আর ফুলে যাওয়া নিয়ে। অস্ত্রোপচারের পর পেট থেকে বেরিয়ে আসে ব্রাশ, কলম, টাকার নোট, চানাচুর প্যাকেট প্রভৃতি।
শিশুদের ‘পিকা’ দেখলে আমরা প্রথমে খুঁজি তার কোনো অপুষ্টি সমস্যা আছে কি না। বিশেষ করে ‘লৌহ ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা’ হলে এ সমস্যাটি বেশি হয়। এ ছাড়া জিংক, ক্যালসিয়াম অভাব হলেও ‘পিকা’ হতে পারে। যে শিশুরা বিষণœতা, পারিবারিক কলহ, বিচ্ছেদ, নির্যাতন, অবহেলা প্রত্যক্ষ করে, তাদের এ সমস্যাটি হতে পারে। এমনকি যাদের বাসস্থানের আশপাশে বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানা, বর্জ্য-নিষ্কাশন হয়, তারা সেখান থেকে তাদের ‘প্রিয় অখাদ্য’টি বেছে নেয়। মানসিক বিভিন্ন রোগ, যেমন সিজোফ্রেনিয়া, শুচিবাই, বুদ্ধি প্রতিবন্ধকতা, বিষণœতা হলে যেকোনো বয়সে ‘পিকা’ হতে দেখা গেছে।
‘পিকা’ হলে কয়েক ধরনের সমস্যা হতে পারে। প্রথমত; পুষ্টিমানহীন বস্তু গ্রহণ করে তারা পেট ভরিয়ে ফেলে। অন্য স্বাভাবিক খাবারে তাদের আর রুচি থাকে না। ফলে তাদের তীব্র অপুষ্টি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এসব রোগীর পেটে থাকে প্রচুর কৃমি। এই কৃমিও রক্তাল্পতা করে। দ্বিতীয়ত; এসব বস্তু তাদের শরীরে মারাত্মক বিষক্রিয়া (যেমন, সিসা বিষক্রিয়া, অম্ল বা ক্ষার বিষক্রিয়া) করতে পারে। তৃতীয়ত; ধারালো, শক্ত বস্তু মুখ থেকে শুরু করে খাদ্যনালীতে, এমনকি শ্বাসনালীতেও আঘাত বা রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। চতুর্থত; এসব বস্তু খাদ্যনালীর প্যাঁচ বা নালী বন্ধ করে দিতে পারে। রোগী তখন আসে পেট ফোলা, ব্যথা, বমি নিয়ে। সময়মতো অস্ত্রোপচার না হলে মৃত্যুও হতে পারে। পঞ্চমত; এই ‘পিকা’ শারীরিক বা মানসিক অন্য বড় কোনো সমস্যার সাথেও যুক্ত হতে পারে।
‘পিকা’ সমস্যার চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে কাউন্সেলিং বা ‘রোগ নিয়ে কথা বলা’। সাধারণত শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে মা-বাবা’র সাথে কথা বলে, সমস্যাটি বুঝিয়ে বলে, তাদের আশ্বাস বা নির্ভরতার মাধ্যমে এই সমস্যাটি মোকাবেলা করা যায়। লৌহ, জিংক ও অন্যান্য পুষ্টিঘাটতি ওষুধ দিয়ে দূর করা যায়। এসব শিশুকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ লাগতে পারে। পরিবারে সঠিক পুষ্টিমানসম্পন্ন আদর্শ খাবার ব্যাপারে জ্ঞান থাকতে হবে। এর পরের পর্যায়ে মানসিক রোগ চিকিৎসক, কাউন্সেলর এদের ভূমিকা আছে। যদি মানসিক কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে তার চিকিৎসা খুব জরুরি। পরিবারের সবারই এতে ভূমিকা রাখার আছে। আর যদি ‘পিকা’ থেকে খাদ্যনালী প্যাঁচিয়ে যাওয়া, ছিদ্র বা বন্ধ হয়ে যাওয়া সমস্যা দেখা দেয়, তখন হয়তো শল্যচিকিৎসা লাগতে পারে।
লেখক : এম ডি (শিশু), রেজিস্ট্রার (শিশু বিভাগ), আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement