২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মরক্কোর ফুটবলের পুনর্জাগরণ

মরক্কোর ফুটবলের পুনর্জাগরণ - ছবি : সংগৃহীত

 

রফিকুল হায়দার ফরহাদ, কাতার থেকে

‘কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে মরক্কো এবং ক্যামেরুন।’ বিশ্বকাপ শুরুর কয়েকদিন আগে স্যামুয়েল ইতোর এমন মন্তব্যে অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। ইতোর নিজ দেশ ক্যামেরুন এবার প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নেয়। এখন দেখা যাচ্ছে আর দুই ম্যাচ পার হলেই বার্সেলোনার সাবেক এই স্ট্রাইকারের ভবিষ্যত বাণীই সত্য প্রমাণিত হবে। নক আউটের পরের দুই খেলায় জিতলেই মরক্কোর ঠিকানা হবে ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামের ফাইনাল ম্যাচে। এ জন্য অবশ্য তাদের প্রথমে পেরুতে হবে কোর্য়াটারে পর্তুগাল বাধা। পরশু রাতে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে টাইব্রেকারে হারিয়ে মরক্কো হলো চতুর্থ আফ্রিকান দেশ যারা খেলছে বিশ্বকাপের শেষ আটে। পশ্চিম আফ্রিকান এই দেশটিতে চলছে এখন বিশ্ব ফুটবলে পুনর্জাগরণের পর্ব।

বিশ্বকাপে আফ্রিকান দেশ বলতেই সবার আগে আসে ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া আর সেনেগালের নাম। ২০১০ সালের চমক ছিল ঘানা। এর বাইরে তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া এবং মিসর আশা জাগিয়েও যেতে পারেনি বেশি দূর। আলজেরিয়া অবশ্য ২০১৪ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল।

মরক্কো সেই ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা দল। এরপর আর তাদের গ্রুপ পর্ব টপকানো হয়নি। সেই দলটিই এবার কাতার বিশ্বকাপের টানা চার ম্যাচে অপরাজিত। গ্রুপ পর্ব থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এবং ৭ পয়েন্ট নিয়ে নক আউটে উন্নীত হওয়া তিন দলের একটি তারা।

আফ্রিকান ফুটবলের অন্যতম শক্তি ৪৪ বছর ফ্রান্সের দখলে এই দেশ। তবে মহাদেশীয় ফুটবল টুনামেন্ট আফ্রিকান নেশনস কাপে দলটির একটি মাত্র শিরোপা। তা তারা জিতেছিল সেই ৪৬ বছর আগে, ১৯৭৬ সালে। এই আসরে আর একবারই ফাইনালে খেলা। তা ২০০৪ সালে। ২০১২ সালের আরব কাপেরও শিরোপা জয়ী দল তারা। বিশ্বকাপেও এই দলটি নিয়মিত নয়। ১৯৭০ এর মেক্সিকো বিশ্বকাপের পর ১৯৮৬ সালে ফের মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত আসরে। মাঝে দুই বিশ্বকাপ মিস করে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে আবার তাদের উপস্থিতি। ২০০২ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত চার টুর্নামেন্টে ছিল না তারা। তবে ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত।

রাশিয়ায় তারা কোনো ম্যাচ জিততে না পারলেও স্পেনকে ২-২ গোলে রুখে দিয়েছিল। পর্তুগালের কাছে রোনালদোর গোলে ০-১ এবং ইরানের কাছে ইনজুরি টাইমের আত্মঘাতী গোলে ০-১ হার। সেবারই মরোক্কানদের ইংগিত ছিল আগামীতে আরো ভালো হয়ে আসছে তারা। সেটাই এবার মাঠ কাঁপিয়ে দেখাচ্ছে রাজা শাসিত এই দেশ। এবার স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতেছে এই বলে তাদের খাটো করার কোনো সুযোগ নেই। ৯০ মিনিটের ম্যাচেই ৩-৪টি গোলের চান্স মিস করে তারা। অতিরিক্ত সময়েও তাদের স্ট্রাইকার ওয়ালিদ চেদদিরা দুই গোল করতে ব্যর্থ। ময়দানী লড়াইয়েও ছিল সেরা।

এবার গ্রুপ পর্বে তাদের কাছে হেরেছে বেলজিয়াম (২-০) এবং কানাডা (২-১)। গোলশূন্য ড্র ক্রোয়েশিয়ার সাথে। এ বছরটা দারুণ যাচ্ছে সাবেক বিশ্বকাপের ফুটবলার মোস্তফা হাজির এই দেশের। ১০ জানুয়ারি থেকে পরশু রাত পর্যন্ত তারা ২২টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে হার মাত্র দুটিতে। একটি আফ্রিকান নেশনস কাপে মিসরের কাছে অতিরিক্ত সময়ের গোল ১-২। অপরটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফিফা প্রস্তুতি ম্যাচে ০-৩ গোলে। বাকি ২০ ম্যাচের ১৬টিতেই জয় আশরাফ হাকিমি এবং হাকিম জিয়াসদের।

ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ২২ নাম্বারে থাকা দলটির মূল শক্তি ইউরোপে খেলা ফুটবলাররা। আশরাফ হাকিমি খেলেন মেসি-নেইমার- এমবাপ্পেদের সাথে পিএসজিতে। হাকিম জিয়াসের ক্লাব চেলসি। দুই টাইব্রেকার ঠেকানো গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো খেলেন স্পেনের ক্লাব সেভিয়াতে। নাউসায়ের মাজরায়ি খেলেন বায়ার্ন মিউনিখে। বাকিদের কেউ ফ্রান্সের লিগে। কেউ বেলজিয়াম ও তুরস্কের লিগে। আর পুরো এই দলটির উল্কার গতিতে ছুটে চলা নিজেদের কোচ ওয়ালিদ রেগরিগির তত্ত্বাবধানে।

কোয়ার্টার ফাইনালে খেলাটা মরক্কোর জন্য নতুন হলেও আফ্রিকান দেশ হিসেবে প্রথম নয়। ১৯৯০ সালে ক্যামেরুন, ২০০২ সালে সেনেগাল এবং ২০১০ সালে ঘানা বিশ্বকাপের কোর্য়াটার ফাইনালে এই মহাদেশের প্রতিনিধি ছিল। এখন তারা যদি ১০ ডিসেম্বরও আল থুমামা স্টেডিয়ামে হারাতে পারে পর্তুগালকে তাহলে সেটাই হবে আফ্রিকানদের জন্য নতুন ইতিহাস। প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে টিকিট পাবে সেমিফাইনালে খেলার।

বিশ্বকাপে মরক্কো ১৯৮৬ সালেও জিতছিল পতর্তুগালের বিপক্ষে। সে ম্যাচে তাদের স্কোর ছিল ৩-১। এছাড়া পোল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের সাথে গোলশূন্য ড্র করা। সেই দলই এখন নতুনভাবে এগুচ্ছে আশরাফ হাকিমি এবং হাকিম জিয়াসদের কাঁধে ভর দিয়ে।

কাতার কর্তৃপক্ষও বেশ খুশি এই আরব দেশটির সাফল্যে। পরশু রাতে দোহার সব লাইট পোস্টে শোভা পায় মরক্কোর পতাকা। যেমনটা হয়েছিল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সৌদি আরবের জয়ে। কাতারে চাকরি করা লাখ লাখ মরোক্কানও নেচে গেয়ে মাতিয়ে রাখেন সারা রাত।


আরো সংবাদ



premium cement