আরো একবার জাপানিরা প্রমাণ করলো কেন তারা অনেক কিছুতে বিশ্বের অনেকে দেশের চেয়ে সেরা। রাশিয়া বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামে জাপানি দর্শকরা রাখলো সেই শৃঙ্খলা আর পরিচ্ছন্নতার স্বাক্ষর। মঙ্গলবার কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ শেষে গ্যালারির আসনগুলোতে যখন উচ্ছিষ্ট খাবার, গ্লাস, কাপ, বোতল, প্লাস্টিক ও কাগজের ঠোঙ্গা বা প্যাকেট ইত্যাদি আবর্জনা পড়ে ছিলে, গ্যালারি ছেড়ে বের হওয়ার আগে তারা নিজেরাই সেগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে।
সাধারণত দর্শকরা বেড়িয়ে যাওযার পর স্টেডিয়ামের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা পরিষ্কার করার কাজ করে, কিন্তু জাপানি দর্শকরা সেই অপেক্ষায় না থেকে নিজেদের দায়িত্বেই করলো কাজটি। এ ঘটনা অবাক করেছে টিভির পর্দায় খেলা দেখা কোটি দর্শককে। অবশ্য জাপানি ফুটবল দর্শকদের এমন কাজ নতুন নয়। তারা আগেও এমন কাজ করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতেও জাপান সমর্থকদের আনন্দ উল্লাস করার কারণ ছিল যেহেতু তারা ২-১ গোলে জিতেছে। দক্ষিণ আমেরিকার কোন দলের বিরুদ্ধে এটাই জাপানের প্রথম জয়। কিন্তু খেলার মাঠে কলম্বিয়াকে ধরাশায়ী করার পর জাপানের সমর্থকরা গ্যালারিতে আনন্দ উল্লাসেই মেতে থাকেনি, বরং তারা গ্যালারি পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে যান। স্টেডিয়ামের ভেতরে দর্শকদের সারিতে ও আসনে যেসব আবর্জনা ছিল সেগুলো তারা নিজেরাই পরিষ্কার করতে শুরু করে।
এসময় তাদের হাতে ছিল ময়লা কুড়িয়ে নেওয়ার নীল রঙের বড় বড় ব্যাগ। খেলা শেষ হওয়ার পর তারা ঘুরে ঘুরে ময়লা আবর্জনা এসব ব্যাগে ভরে স্টেডিয়াম পরিষ্কার করতে থাকেন। তাদের বক্তব্য, ‘স্টেডিয়ামটিকে যে অবস্থায় পেয়েছি, এটিক সেরকমই রেখে যেতে চাই।’
জাপান থেকে বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা ক্রীড়া সাংবাদিক স্কট ম্যাকিনটার বলেন, ‘এটি তো শুধু ফুটবল সংস্কৃতির অংশ নয়, এটা জাপানি সংস্কৃতিরই অংশ’। আবর্জনা পরিষ্কারের অভিযান দেখে তিনি মোটেও বিস্মিত হননি। এই সাংবাদিক বলেন, ‘অনেকেই বলেন যে ফুটবল হচ্ছে সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। ফুটবল দেখে বোঝা যায় কার সংস্কৃতি কেমন। জাপানি সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে- সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আছে সেটা নিশ্চিত করা। সব ধরনের খেলাধুলাতেই দর্শকরা একই আচরণ করে থাকে। ফুটবলেও একই রকম’।
এবারের বিশ্বকাপে অবশ্য মঙ্গলবারের দ্বিতীয় ম্যাচে সেনেগালের সমর্থকদেরকেও স্টেডিয়াম পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। সাংবাদিক স্কট ম্যাকিনটার জানান, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার এই অভ্যাস জাপানিদের মধ্যে শৈশব থেকেই গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘জাপানের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাই তাদের স্কুলে ময়লা পরিষ্কার করে থাকে। শিশু বয়স থেকে বারবার এই কাজটির উপর জোর দেওয়ার কারণে এটি বেশিরভাগ লোকেরই আচরণের ভেতরে ঢুকে যায়।’
পূর্বেকার খবর : কলম্বিয়াকে হারিয়ে চমক জাপানের
চমক দেখাল এশিয়ার দেশ জাপান। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যচে মঙ্গলবার তারা হারিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়াকে। কাগজে কলমের শক্তিমত্ত্বায় কলম্বিয়া অনেক এগিয়ে থাকলেও মাঠের খেলায় জয় হয়েছে জাপানের।
গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট কলম্বিয়া তারকা সমৃদ্ধ দল। অবশ্য এই ম্যাচে তারা মাঠে নেমেছিলো গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হামেস রদ্রিগেজকে ছাড়া। তারওপর ছয় মিনিটের সময় লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়েন মিডফিল্ডার কার্লোস সানচেজ। তবু দলটি চেষ্টা করেছিলো লড়াই করার। শুরুতে গোল খেয়েও ফিরেছিলো সমতায়। কিন্তু ৭৩ মিনিটে হেডে জয়সূচক গোলটি পায় জাপান(২-১)।
সারানস্কে অনুষ্ঠিত ম্যাচে জাপান শুরুতেই এগিয়ে যায়। ম্যাচের ৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলটি করেন শিনজি কাগাওয়া। জাপানের ফরোয়ার্ড ইউয়ায়া ওসাকোর দুর্দান্ত একটি শটে বক্সের মধ্যে কলম্বিয়ার মিডফিল্ডার কার্লোস সানচেজ হাত দিয়ে বল থামান। সানজেচ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন, পেনাল্টি পায় জাপান। পেনাল্টি থেকে গোলটি করেন শিনজি কাগাওয়া (১-০)।
এক গোলে পিছিয়ে পড়া কলম্বিয়া গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে ওঠে। অবশ্য সাফল্য পেতে বেশ কিছুক্ষণ সময়ও লেগেছে তাদের। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় তারা। ফ্রি-কিক থেকে ফার্নান্দো কুইন্টেরো চমৎকার গোলটি করেন। ফ্রি-কিকের সামনে প্রাচীর হয়ে দাড়ানো জাপানের খেলোয়াড়রা লাফিয়ে উঠলে পায়ের নিচ দিয়ে গড়িয়ে কিক নেন কুইন্টেরো(১-১)।
দ্বিতীয়ার্ধেও কলম্বিয়া এগিয়ে যাওয়া চেষ্টায় আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে। কিন্তু খেলার ধারার বিপরীতে আবার গোলের দেখা পায় জাপান। ৭৩ মিনিটে কর্নার থেকে চমৎকার হেডে লক্ষ্যভেদ করেন ফরোয়ার্ড ইউয়ায়া ওসাকো। পরে আর সেই গোল শোধ করতে পারেনি কলম্বিয়া। এবারের বিশ্বকাপে ইরানের পর এশিয়ার দ্বিতীয় দল হিসেবে জয় পেল জাপান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা