২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভারতীয় পণ্য বর্জনে রাজনৈতিক রঙ লাগাতে চায় না বিএনপি

উপজেলায় দলগত অংশগ্রহণ নয়, তবে কেউ প্রার্থী হলে কৌশলী সিদ্ধান্ত আসতে পারে
-

ভারতীয় পণ্য বর্জনে ‘রাজনৈতিক রঙ’ লাগাতে চায় না বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, জনগণ তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। এতে বিএনপির কিছু করার নেই।

গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা ভারত ইস্যুতে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে দলটি এ বিষয়ে একমত যে, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ভারতের সরকারের যে কোনো নীতি ও কর্মকাণ্ডের সমালোচনা তারা করবেন।
এ দিকে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলটি এ নির্বাচনে দলগতভাবে অংশগ্রহণ করছে না, তবে কেউ স্বেচ্ছায় প্রার্থী হলে কৌশলী সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে গত কয়েক দিন রাজনৈতিক অঙ্গনে যে তর্ক-বিতর্ক চলছে সে পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির কৌশল কী হবে তা আরো বিশদ আলোচনার পর ঠিক করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, পণ্য বর্জন নিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য ব্যক্তিগত। ইতোমধ্যে তিনি তা পরিষ্কারও করেছেন।
বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, জনগণ তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। এতে বিএনপির কিছু করার নেই। কিন্তু দল হিসেবে বিএনপি সরাসরি এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হলে তাতে রাজনৈতিক ‘রঙ’ লেগে যাবে। ফলে সামাজিক যে আন্দোলন গড়ে উঠছে তা সঠিক পথে থাকবে না।

বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক নানা প্রেক্ষাপট নিয়ে ভারতের বিষয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আগের চেয়ে অনেক বেশি ভারতবিরোধী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। বৈঠকে এ বিষয়টিও উঠে আসে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিচার-বিশ্লেষণ করে বিএনপির ভারত বিরোধিতার একটি কৌশল ঠিক করা উচিত বলে পরামর্শ দেন স্থায়ী কমিটির একজন নেতা। বৈঠক সূত্র আরো জানায়, সামগ্রিকভাবে ভারতের বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য কী হবে, কোন কৌশলে তারা এগুবেন তা নিয়ে আরো আলোচনা হবে। আগামী কয়েকটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার পর বিএনপি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারে। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ২০ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। সে দিন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিজের ব্যবহার করা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দেন তিনি। এর পর বিএনপির ভারতবিরোধিতার বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে। রিজভীর পর বিএনপির আরো কয়েকজন নেতাও ভারতীয় পণ্য বর্জনের বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সোমবারের বৈঠকে অনির্ধারিত এই আলোচনা তোলেন স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য। বৈঠক সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিএনপিকে অবশ্যই ভারতের কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় সোচ্চার থাকতে হবে। কিন্তু সেটার কৌশল কী হবে তা আগে ঠিক করতে হবে। কমিটির আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেন, বিএনপি সরকারবিরোধী একটি বড় আন্দোলন করেছে। এখন তার মূল্যায়ন হওয়া উচিত। আন্দোলন ও এর পরবর্তী প্রেক্ষাপট বিচার-বিশ্লেষণ করে কৌশল ঠিক করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বৈঠকে আরেকজন নেতা বলেন, দেশের জনগণ যদি ভারতীয় পণ্য বর্জন করে তাহলে দল হিসেবে বিএনপির কিছু করার নেই। জনগণের বিবেচনাবোধকে তারা অগ্রাহ্য করতে পারেন না। কিন্তু ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে তাতে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া কয়েকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা বিএনপির জন্য মর্যাদাকর নয়। বিএনপিকে ভারত সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে হবে।

উপজেলা বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীন : বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির কৌশল কী হওয়া উচিত সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রায় সব সদস্য দলগতভাবে নির্বাচনে না গিয়ে কৌশল গ্রহণ করার পক্ষে মত দেন। নেতারা কেউ কেউ বলেন, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না সেখানে এই সরকারের অধীনে অন্য নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে কেউ নিজ উদ্যোগে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাকে বাধা দেয়া উচিত হবে না বলেও মনে করেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা বলেন, যতটুকু আলোচনা হয়েছে তাতে মনে হয়েছে, উপজেলায় প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে দলীয় নেতাদের উৎসাহিত না করা, কেউ নির্বাচনে যেতে চাইলে তাকে দলীয়ভাবে বাধা না দেয়ার বিষয়ে মতামত এসেছে। কয়েকজন সদস্য বলেছেন, বিএনপি দলগতভাবে যে নির্বাচনে যেতে চায় না তা পরিষ্কার করতে হবে। এরপর কেউ নির্বাচনে আগ্রহী হলে নিজ দায়িত্বে অংশ নিতে পারেন।


আরো সংবাদ



premium cement