- ৭ মাসে ঋণ কমেছে ২৫৩ কোটি টাকা
- বেশি কমেছে ডিসেম্বরে ৬৭ শতাংশ
- সঙ্কোচিত হয়ে আসছে কর্মস্থান
জাতীয় পর্যায়েই শুধু বিনিয়োগ কমছে না, পল্লী এলকার ক্ষুদ্র শিল্পেও বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এখাতে (নন-ফার্ম রুরাল ক্রেডিট) বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক প্রায় ৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে এ খাতে বিনিয়োগ দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৯২০ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। এ খাতে প্রকৃত বিনিয়োগ কমেছে ২৫৩ কোটি টাকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নানা অবকাঠামো সুবিধার অভাব ও চলমান পরিস্থিতির প্রভাব পল্লী এলাকায় পড়েছে। বিনিয়োগ কমায় সংকোচিত হয়ে আসছে কর্মস্থান।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, শহরের চেয়ে গ্রামে অবকাঠামোর সুবিধা কম। শহরে যে হারে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয়, গ্রামে ওই হারে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয়না। এর বাইরে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগবিমুখীতো রয়েছেই। সবমিলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে।
বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক দিয়ে তৈরী বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসের মধ্যে গ্রামীণ এলাকার ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগ বেশি কমেছে গত ডিসেম্বরে। ওই মাসে এ খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক প্রায় ৬৭ শতাংশ। আগের বছরে ডিসেম্বরে যেখানে বিনিয়োগ িেছল ৭০৭ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বিনিয়োগ হয়েছে ৪২৪ কোটি টাকার। একই ভাবে নভেম্বরে এ খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৪৮ শতাংশ এবং অক্টোবরে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগের ঋণাত্মক হয়েছে।
এদিকে বিনিয়োগ কমার পাশাপাশি গ্রামীন উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আদায়ও তেমন একটি হয়নি। চলতি বছরের ৭ মাসে পল্লী এলণাকার শিল্প ঋণের আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে এক শতাংশের কম অর্থাৎ শূণ্য দশমিক ৫ শতহাংশ। পল্লী এলাকার ঋণ বিতরণ ও আদায়ে ব্যাপক প্রভাব সম্পর্কে দেশের দ্বিতীয় প্রজম্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, পল্লী এলাকায় ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার অন্যতম কারণ হলো অবকাঠামো সুবিধা ও উদ্যোক্তার অভাব। অনেকেই নানা পরিস্থিতির কারণে এলাকা ছাড়া হয়ে পড়েছেন। অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। এসব কারণে অনেকেই ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি, কেউবা ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেন।
প্রথম প্রজম্মের অপর এক ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, পল্লী এলাকায় ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের এমনিতেই একটা অনীহা থাকে, এরওপর খেলাপি ঋণের কারণে কোনো কোনো ব্যাংকের পুরোপুিরই ঋণ বিতরণ বন্ধ রাখে। ফলে যে হারে বিনিয়োগ হচ্ছিল, মাঝ খানে তার ভাটা পড়ে। আবার পল্লী এলাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা ভাল উদ্যোক্তার অভাব। যাকে ঋণ দেয়া হবে, তার কাছ থেকে ঋণ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকলে পুরো ঋণই ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে। এসব বিবেচনায় পল্লী এলাকায় ঋণ বিতরণে ঋণাত্মক প্রভাব পড়ছে।
তবে, রাজবাড়ীর একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে আর আগের মতো বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। আগে যেখানে ব্যাংকে গেলেই একটি ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যেতো, এখন বিনিয়োগ না দিতে নানা অজুহাত দেখানো হয়। অর্থাৎ ব্যাংক থেকে আর আগের মতো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে দ্বিতীয় প্রজম্মের একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ব্যাংকের ঋণ কেন্দ্রীভ’ত হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ গ্রামীণ এলাকার চেয়ে জাতীয় পর্যায়ে ঋণ বিতরণের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো, তহবিল সংকট। আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবাহ কমে গেছে। কিন্তু বিনিয়োগ থেকে আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সবমিলে গ্রামীণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাটা পড়েছে।
পল্লী এলাকায় ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। পল্লী এলাকায় সংকোচিত হওয়ায় মানুষ কর্মের সংস্থানে শহরমুখী হচ্ছে। এতে শহরের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ঋণ বিতরণ বাড়ানোর দিকে ব্যাংকগুলোর বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে বলে তারা মনে করেন। তারা মনে করেন এতে বেকারত্বের হারও কমে যাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা