২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লজ্জার হার বাংলাদেশের

-

সিলেটে সিরিজের প্রথম টেস্টে সফরকারী শ্রীলঙ্কার কাছে ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এ নিয়ে সপ্তমবার ৩০০’র বেশি রানের ব্যবধানে টেস্ট ম্যাচে হারলো টাইগাররা। রান বিবেচনায় শ্রীলঙ্কার কাছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে হারের লজ্জা পেল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে রান বিবেচনায় এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় লঙ্কানদের। প্রথমটিও বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪৬৫ রানে।
সফরকারীদের ছুড়ে দেয়া ৫১১ রানের বিশাল টার্গেটে মুমিনুল হকের লড়াকু ৮৭ রানের পরও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮২ রানে অলআউট টাইগাররা। ম্যাচের দুই ইনিংসে শ্রীলঙ্কা যথাক্রমে ২৮০ ও ৪১৮ রান করে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১৮৮ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮২ রান। দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের মোট সংগ্রহ ৩৭০। যা লঙ্কানদের দ্বিতীয় ইনিংসের চেয়েও ৪৮ রান কম। ব্যাটিং ব্যর্থতা ছাড়াও ফিল্ডিংয়ে বাজে পারফর্ম, রিভিউয়ের বাজে সব সিদ্ধান্তেই বিশাল ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ।

এই হারে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে সপ্তমস্থানে নেমে গেল বাংলাদেশ। ৩ ম্যাচে ১ জয় ও ২ হারে ৩৩.৩৩ শতাংশ পয়েন্ট আছে টাইগারদের। টেবিলে আগে বাংলাদেশ ষষ্ঠ ছিল। এই হারে টাইগারদের টপকে ষষ্ঠস্থানে উঠল শ্রীলঙ্কা। আগামী ৩০ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে এই সিলেটেই শক্তিশালী কিউইদের বিপক্ষে টেস্টে ১৫০ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই টেস্টে ব্যাট হাতে বেশ ছন্দেই ছিলেন জয়-শান্তরা। তবে কিউই সিরিজের পরের টেস্ট মিরপুরে ব্যাটিং ব্যর্থতা স্বাগতিকদের। প্রায় সাড়ে তিন মাস পর মিরপুরের সেই ব্যাটিং ব্যর্থতা ফিরল সিলেটেও, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে লড়াইটা চালিয়েছিলেন একজন পুরোদস্তুর বোলার, তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই লড়াইটা কেবল লড়লেন সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক। তার ৮৭ রানের অপরাজিত ইনিংসটা প্রশংসার দাবিদার দলেও দলের সংগ্রহ পৌঁছায়নি লক্ষ্যের অর্ধেকেও। দ্বিতীয় ইনিংসে সব ক’টি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ থামল ১৮২ রানে। এতে ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হার শান্তর দলের।

ব্যাটিং ব্যর্থতার অর্ধেক শো হয়ে গেছে তৃতীয় দিন বিকেলে। ১৩ ওভার ব্যাটিংয়েই সাজঘরে পাড়ি জমিয়েছিলেন ৫ ব্যাটার, বিপরীতে স্কোরবোর্ডে ছিল স্রেফ ৪৭ রান। সেই স্কোর থেকে শুরু করা চতুর্থ দিনের শুরুতেই ধাক্কা স্বাগতিক শিবিরে। আগে ইনিংসে ব্যাট হাতে ৪৭ রানের দারুণ ইনিংস খেললেও এবার কেবল ৬ রান করেন তাইজুল। পরে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার আশা জাগাচ্ছিল থিতু হওয়া মুমিনুল হক। তবে দলীয় ১১৭ রানের মাথায় মিরাজ (৩৩) ফিরলে সব আশার সমাপ্তি ঘটে। স্বাগতিকদের শেষ তিন ব্যাটার ছিলেন যাওয়া-আসার মধ্যেই, সেখানে আরেক প্রান্তে একাই লড়েছেন মুমিনুল। শেষ পর্যন্ত ১৪৮ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ৮৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।
এ দিকে দিনের শুরু চার উইকেট তুলে ইনিংসে ফাইফার স্পর্শ করেন কাসুন রাজিথা। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয়তেও বাংলাদেশ ইনিংসের পুরো ১০ উইকেট নেন পেসাররাই। সেখানেও দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট নেয়া তিন পেসারের মধ্যে এগিয়ে রাজিথাই।

এর আগে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা খুব ভালো হয়নি শ্রীলঙ্কার। ১২৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়েছিল সফরকারীরা। সেখানে আরো একবার ধনঞ্জয়া-কামিন্দু শোতে বিধ্বস্ত শান্ত-শরিফুলরা। আগের ইনিংসের পর এই ইনিংসেও ধনঞ্জয়া-কামিন্দু তুলেছেন সেঞ্চুরি। ১০৮ রান করে অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ফিরলেও এবার কামিন্দু মেন্ডিস পাড়ি দিয়েছেন আরও খানিকটা পথ। ২৩৭ বলে ১৬ চার ও ৬ ছক্কায় করেছেন দলীয় সর্বোচ্চ ১৬৪ রান। তাতেই ৪০০ পেরিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪১৮ রানে এবং জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ৫১১ রানের। সেখানে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন মেহেদী মিরাজ।
দ্বিতীয় ইনিংসের মতো প্রথম ইনিংসের শুরুতেও ব্যাট হাতে লঙ্কানরা ছিল নড়বড়ে। ৫৭ রানেই হারিয়েছিল ৫ উইকেট। তবে সেখানে সেই ধনঞ্জয়া-কামিন্দু ম্যাজিক, ২০২ রানের জুটি, দু’জনেই তুললেন সেঞ্চুরি। এতেই দল পৌঁছায় ২৮০ রানের লড়াকু পুঁজিতে। জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে নিবু নিবু আলোর মতোই পারফর্ম ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দলের। এতে ১৮৮ রানের মামুলি সংগ্রহ পেয়েছিল স্বাগতিকরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ২৮০/১০ (ধনাঞ্জয়া ১০২, কামিন্দু ১০২, নাহিদ ৩/৮৭, খালেদ ৩/৭২)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১৮৮/১০ (তাইজুল ৪৭, ফার্নান্ডো ৪/৪৮, রাজিথা ৩/৫৬, লাহিরু ৩/৩১)।
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস : ৪১৮/১০ (ধনঞ্জয়া ১০৮, কামিন্দু মেন্ডিস ১৬৪, মেহেদী মিরাজ ৪/৭৪)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ১৮২/১০ (মুমিনুল ৮৭*, মিরাজ ৩৩, রাজিথা ৫/৫৬, ফার্নান্দো ৩/৩৬, লাহিরু ২/৩৯)।
ফল : শ্রীলঙ্কা ৩২৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : ধনঞ্জয়া ডি সিলভা
সিরিজ : দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা।


আরো সংবাদ



premium cement