২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সহিষ্ণুতা চর্চার মাস রমজান

-


রমজানুল মোবারকের আজ ১৩ তারিখ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে ইরশাদ করেছেন, এটি সবরের মাস। আর সবরের প্রতিদান জান্নাত।
সবর বা সহিষ্ণুতা মানব জীবনের একটি উন্নত গুণ। সবরের আভিধানিক অর্থ নিজেকে আবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রণে রাখা। শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণকে সবর বলা হয়। ইবাদত করতে গিয়ে যে কষ্ট হয়, নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে যে কষ্ট হয় এবং বিপদের সময়ে যে কষ্ট হয় ,তা সহ্য করার জন্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নাম সবর। আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালন অনেক সময় প্রবৃত্তির চাহিদার খেলাপ হয়। তখন নিজেকে সংযত রেখে সঠিক নিয়মে সেই অদেশ পালন করা ঈমানের দাবি। যেমন ভোরে ঘুমের প্রাবল্য সত্ত্বেও বিছানা ছেড়ে ফজরের নামাজের জন্য উঠতে হয়। গভীর রাতের আরাম ত্যাগ করে যারা তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য ওঠেন, তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত নাজিল হয়। এভাবে শরিয়তের যেসব নির্দেশ পালন করতে গিয়ে প্রবৃত্তির সাথে বিরোধিতা করতে হয়, সেগুলোতে প্রমাণিত হয় ঈমানের দৃঢ়তা। নিষিদ্ধ কাজগুলো সাধারণত লোভনীয় হয়ে থাকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, জান্নাতকে বেষ্টন করে আছে প্রতিকূলতাসমূহ। আর জাহান্নামকে ঘিরে রেখেছে লোভনীয় বিষয়সমূহ। অতএব নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে নিবৃত্ত থাকা আল্লাহ তায়ালার কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতিরই ফল। তেমনি বিপদের সময় অবিচলিত থাকা মুমিনের অন্যতম উন্নত আদর্শ। আল্লাহ তায়ালার হুকুম ছাড়া বিশ্বজগতে কিছুই ঘটে না। তারই ইচ্ছায় স্বাচ্ছন্দ্য ও সঙ্কট হয়। তিনি যখন ইচ্ছা তা দূর করেন। এভাবে নিজেকে রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছা ও হুকুমের কাছে সোপর্দ করা প্রকৃত ঈমানের দাবি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জেনে রেখ, তুমি যা পেয়েছ তা তোমা থেকে এড়িয়ে যাওয়ার ছিল না। আর তোমা থেকে যা এড়িয়ে গেছে, তা তোমার পাবার ছিল না।

অবশ্য সবরের অরো ক্ষেত্র রয়েছে। উত্তেজনার সময়েও মেজাজের ভারসাম্য রক্ষা করা সবরের অন্তর্গত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা বীরত্ব নয়, বরং রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারাই বীরত্ব। সমালোচনা সহ্য করাও সবর। নিন্দুক বা সমালোচক সত্যের আশ্রয় নেবে না এটাই স্বাভাবিক। তবুও অস্থির না হয়ে নিজ কর্তব্য ও আদর্শে স্থির থাকার শিক্ষা দেয় ইসলাম।
মাহে রমজান সবরের গুণ অর্জনে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পানাহার বর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিজের প্রবৃত্তি দমনের যে অভ্যাস গড়ে ওঠে, তা যখন অন্যসব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়, তখন একজন মানুষের চরিত্র হয় উন্নত থেকে আরো উন্নত। নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধনে মাহে রমজান এভাবেই প্রভাব ফেলে। সবরের মাহাত্ম্য ও প্রতিদান সম্পর্কে প্রচুর আয়াত ও হাদিস রয়েছে। যেমন সূরা যুমারের ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে- নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদেরকে তাদের প্রতিদান অভাবনীয় মাত্রায় দেয়া হবে।

ইসলামের প্রথম যুগে মুসলমানদেরকে চরম কঠিন পরিস্থিতির মুখে টিকে থাকতে হয়েছে। ধৈর্যের চূড়ান্ত পরীক্ষায় তাদেরকে উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। আল্লাহর রাসূল এই ক্ষুদ্র দলটিকে ঈমানের ওপর অটল রাখতে আগের যুগের নবীদের ও তাদের নিষ্ঠাবান অনুসারীদের ওপর বয়ে যাওয়া নিষ্ঠুরতার ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে হজরত খাব্বাব রাজিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা রয়েছে যা প্রায় সব হাদিসের গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। তিনি বলেন, কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা আল্লাহর রাসূলের কাছে গেলে তিনি আমাদেরকে বলেন, আগের যুগের নবীদের ও তাদের অনুসারীদের ওপর আরো কঠিন পরিস্থিতি এসেছিল। তবুও তারা অস্থির হননি। অথচ তোমরা অস্থির হয়ে পড়ছ। সেই কঠিন অবস্থায় তারা টিকে ছিলেন বলেই পরে ইসলামের প্রসার হয়েছে। আর সেই প্রথম যুগের এক একজন মুসলমান হয়েছেন মহাপুরুষ। তারা শুধু কাফেরদের অত্যাচারে জর্জরিত ছিলেন না, পার্থিব সুখ স্বাচ্ছন্দ্য থেকেও বঞ্চিত ছিলেন। তবুও ঈমান ও আমলে সালেহের ক্ষেত্রে তারা বিন্দুমাত্র শৈথিল্য দেখাননি। তাদের অবিচলতা ও দৃঢ়তা আমাদের অনুকরণীয়।


আরো সংবাদ



premium cement