২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির নেতৃত্বে সহজ ডটকমের কর্মী

চক্রের ৯ সদস্য আটক
-


অনলাইনে টিকিট কাটার বিষয়ে সহজ ডটকম বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানে পিয়নের চাকরির যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে ট্রেনের টিকিট কালো-বাজারির বিশাল চক্র গড়ে তোলেন তিনি। অবশেষে চক্রের হোতা মিজান ঢালীকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ এলাকা থেকে মিজান ঢালীসহ ৯ জনকে আটক করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে সংগ্রহ ও মজুদ করা বিপুলসংখ্যক ট্রেনের টিকিট জব্দ করা হয়।
র‌্যাব বলছে, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম হোতা সহজ ডটকমের পিয়ন মো: মিজান ঢালী (৪৮)। তাকেসহ ৯ জনকে যৌথ অভিযান চালিয়ে আটক করেছে র‌্যাব-৩ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)।
গ্রেফতার অন্যদের নাম সোহেল ঢালী (৩০), সুমন (৩৯), জাহাঙ্গীর আলম (৪৯), শাহজালাল হোসেন (৪২), রাসেল (২৪), জয়নাল আবেদীন (৪৬), সবুর হাওলাদার (৪০) ও নিউটন বিশ্বাস (৪০)। গতকাল (শুক্রবার) দুপুরে কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
তিনি জানান, ২০০৩ সালে কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় সহজ ডটকমে পিয়ন হিসেবে যোগ দেন মিজান। পরে সিএনএস ডট বিডি’র সাথে রেলের চুক্তি হলেও অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে বহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকিটের চুক্তি সহজকে দেয়া হলে সেখানেও মিজানের চাকরি বহাল থাকে।
অন্যদিকে নিউটন ২০১২ সালে স্টেশন সাপোর্ট কর্মী হিসেবে সিএনএস বিডিতে যোগ দেন। ২০১৬ সালে সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পান। ২০২০ সালে সহজের সাথে চুক্তি হলে তার চাকরি বহাল থাকে এবং আবার সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পান।

র‌্যাব জানায়, সার্ভার অপারেটর হওয়ায় নিউটন বিভিন্ন ট্রেনের শিডিউল ও টিকিট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেন এবং সিন্ডিকেটের মূল হোতা মিজানকে তথ্য দিতেন। মিজান ও নিউটন দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সাথে জড়িত। দেশব্যাপী প্রায় সব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করত এই ঢালী সিন্ডিকেট। মিজান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যুক্ত রয়েছেন। ফলে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সাথে তার পরিচিতি তৈরি হয়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজির চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকিট বিক্রি করতেন।
খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, বিশেষ করে ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে এই চক্রটি বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ সময়ের তুলনায় বেশি পরিমাণ টিকিট সংগ্রহ করত। গ্রেফতার মিজান ও সোহেল প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ের টিকিট কালোবাজির মাধ্যমে বিক্রি করতেন। তারা আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক টিকিট সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা করছিলেন। এসব টিকিট হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রেনের টিকিটপ্রত্যাশীদের কাছে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হতো।
র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুই ভাগ হতো। ৫০ ভাগ সহজ ডটকম ও রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারম্যানরা পেতেন। বাকি ৫০ ভাগ সিন্ডিকেটের মূল হোতা গ্রেফতার মিজান, সোহেলসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো। এসব অর্থ কখনো তারা নগদে হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিতেন। আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করতেন।


আরো সংবাদ



premium cement