২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রথম আলো ও বিএনপি একে অপরের পরিপূরক : কাদের

দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করছেন ওবায়দুল কাদের : নয়া দিগন্ত -


মহান স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রথম আলোর প্রকাশ করা প্রতিবেদনটি ভুল নয়, ফৌজদারি অপরাধ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, অনেকে বলেছেন, এটা তাদের একটা ভুল। আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, স্বাধীনতা দিবসের দিনে বাঙালি জাতির ৫২ বছরের অর্জন মর্যাদা নিয়ে তামাশা করা সাধারণ কোনো ভুল নয়। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ।


গতকাল শনিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক যৌথসভায় তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রথম আলো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করছে। তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রথম আলো আর বিএনপি একজন আরেকজনের পরিপূরক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয়। মানুষ ভালোবেসে টানা তিন মেয়াদে এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। কিন্তু প্রথম আলো জনপ্রিয় সরকারকে হেয় করার জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে ছোট করার চেষ্টা করছে।


ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশেষ দিনে বিশেষ এজেন্ডা সেটিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আলো মহান মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্যকে অস্বীকার করার চেষ্টা করেছে এবং বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকারকে প্রথম আলো তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ তা সফল হতে দেবে না। ষড়যন্ত্র করলে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। তিনি আরো বলেন, সংবাদটি যে ভাষায় একটি দিনমজুরের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে সেটি কি সাধারণ দিনমজুরের বক্তব্য, নাকি প্রথম আলোর দেয়া বয়ান- সেটি ভাববার সময় এসেছে। ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশনের দায় পত্রিকাটির সম্পাদক কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। অথচ ক্ষমা না চেয়ে চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে পত্রিকাটি।


সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর এ উদ্যোগ জাতিসত্তাবিনাশি অপতৎপরতা নয় কি? স্বাধীনতা দিবস তরুণ প্রজন্মের কাছে দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ সৃষ্টির একটি অনন্য দিন। অথচ এই দিনে পলিটিক্যালি সিলেকটেড বিশেষ এক এজেন্ডা সেটিংয়ের উদ্দেশ্যে ওই সংবাদটি মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ অর্জনকে অস্বীকার করার শামিল নয়? তিনি বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই আমরা দেখেছি- স্বাধীনতা দিবসের দিন সে দেশের গণমাধ্যম অনুপ্রেরণামূলক বাণী দিয়ে উৎসাহ করে। আর প্রথম আলো তাদের প্রভুদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য জাতির সামনে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে, তরুণ প্রজন্মকে হতাশা ও উসকানি দেয়ার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য তারা উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রচার করে এবং বরাবরই বিরাজনীতিকীকরণের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। এভাবেই চিলমারীর এলাকার প্রতিবন্ধীর নারী বাসন্তীকে দশ টাকার শাড়ি খুলে ৩০০ টাকার জাল পরিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পটভূমি রচনা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর প্রায় তিন বছর বাংলাদেশকে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখা হয়েছে। এ সময় প্রথম আলো দেশে নৈরাজ্যের চেষ্টায় অপসাংবাদিকতা করেছে বলেও জানান তিনি।


রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের বিবৃতি নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই প্রতিষ্ঠান বলছে- সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্যই সরকার এ ধরনের মামলা করেছে প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে। আমি প্রথমে বলতে চাই সরকার কিন্তু এখানে মামলা করেনি। মামলা সাধারণ একজন নাগরিকও করতে পারে। সরকার মামলা করেছে এটা সর্বাগ্রে মিথ্যা। আর ভয় দেখানোর কথা যে বলা হচ্ছে- কাকে ভয় দেখাবো? যাকে ভয় দেখানোর কথা বলা হয়েছে- তিনিই এই দেশের মানুষকে ভয়ের মধ্যে রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি এ দেশে রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভয় দেখিয়ে ছিলেন। তিনি এ দেশে রাজনীতিকে ভয় দেখিয়ে ছিলেন। তিনি এ দেশের সাংবিধানিক সরকারকে ভয় দেখিয়ে ছিলেন অসংবিধানিক সরকারের পক্ষে ওকালতি করে। তার পরও কি ওয়ান-ইলেভেন আমাদের মনে নেই? কে কাকে ভয় দেখায়। তিনি বিরাজনীতির ফায়সালা নিয়ে পত্রিকার রিপোর্ট করেছেন আমরা কি ভুলে গেছি? তিনি বলেন, প্রথম আলো আর বিএনপি সাপ্লিমেন্ট করে একে অপরকে। টার্গেট শেখ হাসিনা, টার্গেট সরকার, টার্গেট জনগণ। টার্গেট আগামী নির্বাচন ভণ্ডুল করা।


মিরপুরে বিএনপির ইফতারে এনটিভির সাংবাদিককে মারধর ও চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ক্যামেরা ভাঙচুর করার ঘটনায় নিন্দা জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, মিরপুরের পল্লবীতে ইফতারে পেটানোর ঘটনায় মির্জা ফখরুল প্রথমে ক্ষমা চেয়ে পরে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপিয়েছেন। প্রথম আলোতে এসব সংবাদ আসেনি, যড়যন্ত্রের সহযোগী প্রথম আলো। বিএনপিকে সাধু বানানোর দায়িত্বটা নিয়েছে প্রথম আলো। সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগের শত্রু নয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সমালোচনা করা যাবে না, এটা কখনো বলিনি। প্রথম আলো ভাবে শত্রু, কিন্তু সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগের শত্রু নয়। সাংবাদিকদের জন্য শেখ হাসিনার সরকার যথেষ্ট করেছে। অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক।


যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, লে. কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ ফারুক খান, ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement