২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আগামী অর্থবছরে ভর্তুকিতেই ব্যয় হবে ৬০ হাজার কোটি টাকা

ব্যয় বাড়বে চলতি বছরের চেয়ে ২২.৪৪% : বেশির ভাগ যাবে সার ও বিদ্যুতে
-

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির চাপ আরো বাড়বে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এর পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা করা হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ২২ শতাংশ বেশি। মূলত সার ও বিদ্যুৎ খাতে লোকসানের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ভর্তুকিও বাড়বে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
আগামী অর্থবছরের ভর্তুকির বেশির ভাগ অর্থই ব্যয় করা হবে কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে। কৃষি খাতের মধ্যে মূলত সার খাতে ভর্তুকির বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। এরপরই বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ দেয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত আমরা প্রাক্কলন করেছি আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো হবে। কিন্তু কোন খাতে কত ভর্তুকি দেয়া হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব এখন পর্যন্ত করা হয়নি। এটি মার্চ মাসে করা হবে। তবে এই বর্ধিত ভর্তুকির অধিকাংশ সার ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় করা হবে।
এ দিকে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ভর্তুকির চাপ বেড়ে চলেছে। অর্থবছরের চার মাস অতিক্রান্ত না হতেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে বাড়তি ভর্তুকির চাহিদাপত্র পাঠানো শুরু হয়। এই চাহিদার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য ভর্তুকি সঙ্কুলান রয়েছে আট হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ববাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এই ভর্তুকিতে তাদের ‘পোষাবে’ না। এই জন্য তাদের দরকার আঠারো হাজার কোটি টাকা। অন্য দিকে বিদ্যুতের জন্য এবারকার বাজেটে ভর্তুকির বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, এই টাকায় তাদের চাহিদা মেটবে না। চলতি অর্থবছরের জন্য বিদ্যুতের ভর্তুকি দরকার কম করে হলেও ১২ হাজার কোটি টাকা। যদি বর্ধিত ভর্তুকি না দেয়া হয় তবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকবে না।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই এই দু’টি পণ্যের দাম বাড়ানো হতে পারে। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি হিসেবে বিদ্যুৎ খাতে রয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। এলএনজি খাতে (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ছয় হাজার কোটি টাকা, সার খাতে আট হাজার ৫০০ কোটি টাকা। খাদ্য পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে রয়েছে আরো কিছু অর্থ। অন্য দিকে প্রণোদনা হিসেবে ধরা রয়েছে ১১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে রফতানি খাতে প্রণোদনা ছয় হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। জুটখাতে ৮০০ কোটি টাকা। এবং রেমিট্যান্স খাতে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে আরো চার হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ঋণ হিসেবে কিছু ভর্তুকি টাকাও এর সাথে যোগ হয়েছে।
এ দিকে গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের (২০১৭-২০১৮) বাজেটে, ভর্তুকি, নগদ সহায়তা, প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। তার আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ।
যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement