২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাকিব রেকর্ডেও হার বাংলাদেশের

-

টি-২০তে এর আগে ২০১২ সালে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-স্কটল্যান্ড। সেই ম্যাচে ১৬৩ রান তাড়া করে ৩৪ রানে হেরে যায় টাইগাররা। তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে স্কটিশদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ। সবশেষ ১১টি আন্তর্জাতিক টি-২০তে অংশ নিয়ে মাহমুদুল্লাহ বাহিনী আটটিতে জয় পেয়েছে। তবে এত আত্মবিশ্বাসে ভর করা বাংলাদেশ আরো একবার হারের মুখ দেখল স্কটিশদের বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় শুধু কাহিনী হয়েই থাকল।
টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৪১ রানের টার্গেট দিয়েছে স্কটল্যান্ড। ওমানের রাজধানী মাসকটের আল আমিরাত স্টেডিয়ামে টসে হেরে আগে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪০ রান করে স্কটিশরা। জবাবে খেলতে নেমে নির্ধারিত ওভারে সাত উইকেটে ১৩৪ রান করলে ৬ রানে হার মানে টাইগাররা।
স্কটিশদের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। নিজেদের প্রথম ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন নাইম শেখ ও নাসুম আহমেদ। প্রস্তুতি ম্যাচে না থাকলেও মূল ম্যাচে একাদশে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। রাতে শিশিরের কারণে বল করার সিদ্ধান্ত নেননি টাইগার দলপতি। টসের পর অধিনায়ক জানান তার কাছে ব্যাটিং উইকেট মনে হয়েছে। তাই রান তাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশের একাদশে প্রত্যাশা মতো ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে একাদশে রেখেছে টাইগাররা।
রেকর্ড ভাঙা আর গড়ার খেলাটা সাকিব আল হাসানের জন্য নতুন কিছু নয়। ১৫ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ড গড়েছেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে টি-২০তে দু’টি মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সাকিব। যেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৬০০ উইকেট এবং ১২ হাজার রান করার রেকর্ড গড়েছেন। মিচেল লিস্ককে সাজঘরে ফিরিয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৬০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। বিশ্বের ২৩তম বোলার এবং দ্বিতীয় বাঁ হাতি স্পিনার হিসেবে ৬০০ উইকেট নেয়ার কীর্তি সাকিবের। যেখানে টেস্টে ২১৫, ওয়ানডেতে ২৭৭ এবং টি-২০তে নিয়েছেন ১০৮টি উইকেট।
এ দিন আরো একটি রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। লাসিথ মালিঙ্গাকে পেছনে ফেলে আন্তর্জাতিক টি-২০ সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক হয়েছেন। বর্তমানে তার উইকেট সংখ্যা ১০৮। রিচি বেরিংটনকে আউট করে মালিঙ্গার ১০৭ উইকেট স্পর্শ করেন সাকিব। এরপর লিস্ককে সাজঘরে ফিরিয়ে মালিঙ্গাকে ছাড়িয়ে যান। আন্তর্জাতিক টি-২০তে ৯৯ উইকেট নিয়ে তালিকায় টিম সাউদি রয়েছেন তিনে। চারে থাকা শহীদ আফ্রিদির উইকেট ৯৮ এবং পাঁচে থাকা রশিদ খানের উইকেট সংখ্যা ৯৫টি। দুই উইকেট নেয়ার পাশাপাশি সাকিব চার ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৭ রান। কিন্তু ব্যাট হাতে আশানুরূপ কিছু করতে পারেননি। ২৮ বলে একটি বাউন্ডারিতে ২০ রান করে সাজঘরে ফিরেন।
১৪১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ওভারের দ্বিতীয় বলে চার মেরে ইনিংস শুরু করলেও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেননি সৌম্য সরকার। পরের ওভারে জস ডেভির বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়েছেন ৫ বলে ৫ রান করে। তড়িঘড়ি করে ৭ বলে মাত্র ৫ রান করে হোয়াইলের বলে আউট হন লিটন দাস। বাংলাদেশের হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সাকিব ও মুশফিক। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তারা দু’জনে মিলে যোগ করেন ৪৭ রান। তবে গ্রিভসের বল তুলে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ক্যাচ আউট হন থিতু হওয়া সাকিব (২০)। বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাট হাতে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না মুশফিকুর রহীমের। তবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরির আগে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নভেম্বরে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া মুশফিক এ দিন ফিরেছেন ৩৬ বলে ৩৮ রান করে। এরপরই মূলত হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়। দলীয় ১০৬ রানে ১৮ করে ফিরেন আফিফ। অধিনায়ক ভালো কিছুর জানান দিলেও ফিরলেন ২৩ রান করে। নুরুল হাসান ২-এর বেশি যেতে পারেননি। মেহেদি আর সাইফউদ্দিন ক্রিজে দাঁড়িয়েই দেখলেন আরো একটি পরাজয়। ব্রাড তিনটি, গ্রিভস দু’টি, জোস ও ওয়াট একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ম্যাচের শুরুতেই তাসকিনের হাতে বল তুলে দেন মাহমুদুল্লাহ। দ্বিতীয় ওভারে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম দুই ওভারে মাত্র চার রান দেন তাসকিন ও মোস্তাফিজ। তৃতীয় ওভারে সাইফউদ্দিন এসেই দুর্দান্ত ইয়র্কারে ফেরান স্কটল্যান্ড দলপতি ২০০ ম্যাচ খেলা কাইল কোয়েটজারকে। সাত বল খেলে কোনো রান না করেই ফিরেন তিনি।
তিনজন পেসারকে দিয়ে পাওয়ারপ্লের ৬ ওভার বল করিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের শিকার এক উইকেট। এরপর দুই প্রান্তেই স্পিন দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ। সাকিবের পর আসেন মেহেদি। বিপজ্জনক হতে থাকা জর্জ ক্রসকে আউট করেন তিনি। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরার আগে ক্রস করেছেন ১৭ বলে ১১ রান। এরপর দুর্দান্ত ঘূর্ণিতে মুন্সিকে থামান মেহেদি। ২৩ বলে ২৯ রান করে মেহেদির বলে ফিরেন তিনি।
মেহেদির পর স্কটিশ শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন সাকিব। নিজের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে ফেরান রিচি ব্যারিংটনকে। সাকিবকে উড়িয়ে মারতে লং-অনে আফিফ হোসেনের ক্যাচে পরিণত হন। এর এক বল পরেই আউট করেন মাইকেল লিস্ককে, এবার ক্যাচ নিয়েছেন লিটন দাস।
এরপর নিজের তৃতীয় ওভারে নিজের তৃতীয় উইকেট পেলেন মেহেদি। এবার তার শিকার ক্যালাম ম্যাকলিওড। উইকেট থেকে সরে কাট করতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড কন ম্যাকলিওড (৫)।
১৭তম ওভারে দলীয় ১০০ পূর্ণ করেছে স্কটল্যান্ড। মার্ক ওয়াট ও ক্রিস গ্রিভসের জুটি ছুঁয়েছে পঞ্চাশ। এরপর তাসকিন এসেই ভাঙেন জুটি। ওয়াট তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন সৌম্য সরকারের হাতে। ১৭ বলে করেন ২২ রান। উইকেট পেলেও তাসকিনের ওভারে ঝড় তুলেছে ক্রিস গ্রিভস। তার ওভারের মাঝের তিন বলে দুইটি চার ও একটি ছয় মারেন।
ইনিংস শেষ হওয়ার চার বল আগে মোস্তাফিজের শিকার হওয়ার আগে ২৮ বলে চারটি বাউন্ডারি আর দু’টি ছক্কায় দলীয় সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন গ্রিভস। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ১৪০ রানে থামে স্কটল্যান্ডের ইনিংস। তিনটি উইকেট নেন শেখ মেহেদি হাসান। এ ছাড়া দু’টি করে উইকেট পেয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান। আর একটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও সাইফউদ্দিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
স্কটল্যান্ড : ১৪০/৯ (মুন্সি ২৯, গ্রিভস ৪৫, ওয়াট ২২; মেহেদি ৩/১৯, সাকিব ২/১৭, মোস্তাফিজ ২/৩২)
বাংলাদেশ : ১৩৪/৭ (সাকিব ২০, মুশফিক ৩৮, মাহমুদুল্লাহ ২৮, আফিফ ১৮, হোয়েল ৩/২৪, গ্রিভস ২/১৯)
ফল : স্কটল্যান্ড ৬ রানে জয়ী।


আরো সংবাদ



premium cement