২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দফায় দফায় মেয়াদ পার হওয়া পুরনো প্রকল্পের ভিড় এডিপিতে

-

করোনার কারণে গত অর্থবছর থেকে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ ঝিমিয়ে পড়েছে। তারপরও আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) কয়েক বছরে দফায় দফায় মেয়াদোত্তীর্ণ ও পুরনো প্রকল্পের সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরেরসহ চলতি অর্থবছরে শেষ হবে না এমন প্রকল্পকে একত্রিত করে মেয়াদোত্তীর্ণ মোট ৬৭৮টি প্রকল্প আগামী এডিপিতে যুক্ত হচ্ছে। ফলে এসব প্রকল্পের ভারে ন্যুব্জ এডিপি। করোনা মহামারীতে নতুন প্রায় দুই হাজার অননুমোদিত প্রকল্প প্রস্তাব করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলমান প্রকল্পের মধ্যে যেসব দ্রুত সমাপ্ত করা দরকার সেগুলোকে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা দরকার। কারণ যত বিলম্ব হবে ততই বাস্তবায়ন খরচ বাড়ছে। থোক বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পের পাল্লা ভারী করাটা সঠিক না।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভা থেকে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার প্রস্তাব করা হবে ঈদের পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায়, যা চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে প্রায় ৯ শতাংশ বেশি। ওই আকারের মধ্যে ১৫টি খাতে ৫৮টি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ অর্থাৎ দুই লাখ ২১ হাজার ৫৬০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হবে। এই অর্থের মধ্যে স্থানীয় অর্থায়ন এক লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে অর্থায়ন ৮৭ হাজার ৭০০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এডিপিতে মূল বরাদ্দের বাইরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ৮৯টি প্রকল্পের অনুকূলে ১১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা যুক্ত থাকছে।
কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের তথ্যানুযায়ী, আগামী এডিপিতে ২০২২ সালের ৩০ জুনে সমাপ্তির জন্য ৩৫৪টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩২২টি বিনিয়োগ এবং ২৭টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প। আর পাঁচটি নিজস্ব অর্থায়নের। এ দিকে চলতি অর্থবছরের জুনে সমাপ্তির জন্য ৪৪২টি প্রকল্প নির্ধারিত ছিল, যা আবশ্যিকভাবে সমাপ্ত করার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে সমাপ্ত হবে না। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৫৭টি প্রকল্প আবার আগামী এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১৫টি প্রকল্প ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমাপ্ত করার কথা ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে এই সব প্রকল্প সমাপ্ত করা সম্ভব হবে না বলে এনইসি সভায় গত বছরের ১৫টি প্রকল্পসহ মোট ১৩৭টি প্রকল্প এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সমাপ্তির মেয়াদ করা হয়। এখন ওই ৫৭টি প্রকল্পকে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশন। চলতি বছর ৩০ জুন মেয়াদোত্তীর্ণ হবে এমন ৬৭৮টি প্রকল্প আগামী ২০২১-২২ এডিপিতে অন্তর্ভুক্তর প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
এসব প্রকল্পের ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, মেয়াদ বৃদ্ধি যথাসময়ে না হওয়ায় অর্থ বছরের প্রথম চার-পাঁচ মাস এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় ও ব্যয় করা সম্ভব হয় না। ফলে এডিপির বরাদ্দ ব্যবহার কমে যায়। সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এসব প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সংশোধন করা প্রয়োজন, যাতে অর্থবছরের শুরুতেই অর্থাৎ জুলাই-২২ থেকে প্রকল্পগুলোর অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ, ছাড় ও ব্যয় করা সম্ভব হয়।
কমিশন বলছে, আগামী এডিপিতে বরাদ্দসহ প্রকল্প সংখ্যা মোট এক হাজার ৪২৬টি, যার মধ্যে বিনিয়োগ এক হাজার ৩০৮টি, কারিগরি সহায়তা ১১৮টি। ২০২০-২১ অর্থবছরের আরএডিপি থেকে প্রস্তাবিত নতুন এডিপিতে স্থানান্তরিত প্রকল্প হলো এক হাজার ৩৯৬টি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রস্তাব নতুন অনুমোদিত ৩০ প্রকল্প। স্বায়ত্তশাসিত ৮৯টিসহ মোট প্রকল্প হলো এক হাজার ৫১৫টি। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থে বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় এক হাজার ২৯১টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্য দিকে এডিপিতে বরাদ্দবিহীনভাবে অন্তর্ভুক্তির জন্য অননুমোদিত নতুন ৫৯৬টি প্রকল্প যুক্ত করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ দিকে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগ সূত্র বলছে, করোনা প্রতিরোধে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। একই সাথে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে পদ্মা বহুমুখী সেতু ও মেট্রোরেল-সহ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হচ্ছে।
অন্য দিকে গতকাল কমিশনের বর্ধিত সভায় খসড়া এডিপি চূড়ান্ত করা হয়। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এনইসির জন্য এডিপির খসড়া আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ বি মির্জ্জা আাজিজুল ইসলামের মতে, সব সময়ই বাজেটের আকার এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার অতিমাত্রায় বাড়ানো হয়। পরে অর্থবছরের মাঝপথে এসে সেটি সংশোধন করা হয়। আবার অর্থবছর শেষে দেখা যায়, বাস্তবায়ন হার সংশোধিত বাজেটের চেয়েও কম হয়। শুধু এখন না, আমি মনে করি এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের একটা বাস্তবসম্মত এডিপি তৈরি করা দরকার।
তার মতে, যেসব প্রকল্প বর্তমান প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ সেসব নেয়া উচিত। আর চলমান প্রকল্পের মধ্যে যেসব দ্রুত সমাপ্ত করা দরকার সেগুলোকে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা। থোক বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পের পাল্লা ভারী করাটা সঠিক না।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এডিপিতে যেসব প্রকল্প শেষ করার কথা সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার। কারণ যত বিলম্ব হবে ততই বাস্তবায়ন খরচ বাড়ছে। এই সময়ে বাড়তি মেগা প্রকল্প না নিয়ে যেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি খুব বেশি একটা হয় না সেগুলোতে গ্যাপ দিয়ে, যেখানে সরকারি বিনিয়োগ করলে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে সুবিধা হবে এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকে টানবে; এই ধরনের প্রকল্পগুলোকে এখন এডিপিতে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে আমার মনে হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement