২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভারতে এক দিনে চার সহস্রাধিক মৃত্যু

-

ভারতে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় হওয়া চার হাজার ১৮৭ মৃত্যু যোগ করে দেশটিতে করোনাভাইরাসে প্রাণহানির সংখ্যাও দাঁড়াল ২ লাখ ৩৮ হাজার ২৭০ জনে। গতকাল শনিবার দেশটির সরকারের দেয়া তথ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ফের চার লাখের বেশি কোভিড রোগী শনাক্তের খবরও নিশ্চিত করা হয়। এ নিয়ে এক সপ্তাহে চতুর্থবার দেশটিতে দৈনিক শনাক্ত চার লাখ ছাড়াল। নতুন ৪ লাখ এক হাজার নিয়ে ভারতে মোট কোভিড শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে হলো দুই কোটি ১৮ লাখ।
গত শুক্রবার ভারতের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এখনো জোরালো পদক্ষেপ নিলে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ এড়ানো যেতে পারে। অথচ শিশুদের জন্য কোভিডের কোনো ভ্যাকসিন ভারতের কাছে নেই। এ দিকে সংক্রমণের চেইন ভাঙতে গত কয়েক দিনে দেশটির অনেকগুলো রাজ্যকে লকডাউন, কারফিউর মতো বিধিনিষেধ দিতে দেখা গেছে। তামিলনাড়ু, কর্নাটক ও মনিপুরও এখন এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে। কর্নাটকে আগামীকাল সোমবার থেকে ২৪ মে পর্যন্ত দুই সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহের লকডাউন দিয়েছে তামিলনাড়ুও; মনিপুরে কারফিউ দেয়া হয়েছে ১৭ মে পর্যন্ত।
ভারত গত জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করলেও এখন পর্যন্ত নাগরিকদের মধ্যে মাত্র ১৬ কোটি ৭০ লাখ ডোজ দিতে পেরেছে। এখন দেশটির অনেকগুলো রাজ্য ভ্যাকসিনের ঘাটতির কথাও জানিয়েছে। সেই সাথে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে দেশটি।
এ অবস্থায় বেসরকারি পর্যায়ে টিকা আমদানির সুযোগ দিয়েছে ভারত। ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ মাননিয়ন্ত্রণ সংস্থা (সিডিএসসিও) করোনার টিকা আমদানির জন্য নতুন একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এতে যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি করোনার টিকা আমদানি করতে পারবেন। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আমদানির অনুমতি পাওয়ার পরে আমদানিকারক কিংবা অনুমোদিত এজেন্ট যেকোনো দেশ থেকে টিকা আমদানি করতে পারবে। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ যে কেউ জাতীয় নির্দেশিকা মেনে আমদানিকারকদের কাছ থেকে ওই টিকা সংগ্রহ করতে পারবে।
ভারতে ২৫ দিনে মারা গেলেন ১১৬ চিকিৎসক : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই মৃত্যু ও সংক্রমণে তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড।এ অবস্থায় দেশটির স্বাস্থ্য পরিকাঠামো রীতিমতো ধুঁকছে। গত ২৫ দিনে দেশটিতে ১১৬ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় ৮৬৪ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। এর মধ্যে গত বছর ৭৩৬ জন মারা গেছেন। চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত মারা গেছেন আরো ১২৮ জন। গত ২৫ দিনেই দেশটিতে মারা গেছেন ১১৬ জন চিকিৎসক। করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে ৫০ থেকে ৭০ বয়সী চিকিৎসক বেশি মারা গেছেন। এমনকি বহু তরুণ চিকিৎসকেরও মৃত্যু হয়েছে।
কোভিড শনাক্ত করবে মৌমাছি : কোভিড ১৯ পরীক্ষার প্রচলিত পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফল পেতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। নমুনা সংগ্রহ থেকে ফল পাওয়া পর্যন্ত সময়ের এ ব্যবধান কমিয়ে আনতে কাজ করছেন নেদারল্যান্ডসের একদল বিজ্ঞানী। গবেষণার অংশ হিসেবে একদল মৌমাছিকে করোনা শনাক্তের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ প্রচেষ্টা সফল হলে নমুনার গন্ধ শুঁকেই কোভিড ১৯ শনাক্ত করতে পারবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব মৌমাছি। সাধারণ পদ্ধতিতে যেখানে করোনা শনাক্ত করতে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লাগে সেখানে মৌমাছির মাধ্যমে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই টেস্টের ফল জানা যায়। নমুনার গন্ধ শুঁকে করোনা শনাক্তের এ বিশেষ প্রশিক্ষণ চলছে নেদারল্যান্ডসের ওয়াজেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব পশুচিকিৎসা গবেষণাগারে।
আগস্টের মধ্যে করোনামুক্ত হবে যুক্তরাজ্য : যুক্তরাজ্যে আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ আর ছড়াবে না। দেশটির টিকা টাস্কফোর্সের বিদায়ী প্রধান ক্লাইভ ডিক্স গত শুক্রবার এ কথা জানান। ডিক্স বলেন, আগস্ট মাসের মধ্যে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর থাকবে না। তিনি মনে করেন, ২০২২ সালের প্রথম দিকে টিকার বুস্টার ডোজ কর্মসূচি পিছিয়ে দেয়া হবে। যুক্তরাজ্যে ৫ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ৪০ বছরের নিচে যাঁরা আছেন, তাঁদের বিকল্প হিসেবে অক্সফোর্ড অথবা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হবে।
জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াল জাপান : কোভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জাপানে কয়েকটি অঞ্চলে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। রাজধানী টোকিও, ওসাকা, হিয়োগো ও কিওটোতে ১১ মে এ জরুরি অবস্থা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন তা মাসের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এবার এই জরুরি অবস্থার আওতায় আনা হয়েছে আইচি ও ফুকোওকা অঞ্চলকেও। প্রধানমন্ত্রী সুগা বলেন, সল্প সময়ের এ কড়া জরুরি অবস্থা জাপানে করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউয়ের রাশ টেনে ধরবে বলে সরকার আশা করছে।
ডব্লিউএইচওর অনুমোদন পেল চীনের সিনোফার্মের টিকা : চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করা করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাÑ ডব্লিউএইচও। পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের কোনো টিকা এ প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবুজ সঙ্কেত পেল। গত শুক্রবার এ টিকার অনুমোদন দেয়ার কথা জানিয়ে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিুয়াসুস বলেন, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস’ ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য এই টিকার দুই ডোজ সুপারিশ করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement