২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৫ দিনে ১০ হাজার শ্রমিক দেশে ফিরেছেন

নিঃস্বদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে; ৭ মাসে নতুন কর্মী বিদেশ যায়নি
-

বিদেশে কর্মক্ষেত্রে বেকার হওয়ার পর অনেকটা মানবেতর জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরত আসা নিঃস্ব কর্মীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন শ্রমবান্ধব দেশ থেকে ফেরত এসেছেন ১০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। সব মিলিয়ে গত সাত মাসে (৭ অক্টোবর পর্যন্ত) দেশে ফেরত এসেছেন এক লাখ ৮১ হাজার ৪৩০ জন। অপর দিকে একই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি প্রেরণকার্যক্রম স্থবির অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের সাথে সম্পৃক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক, কর্মচারী ও তাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা মধ্যস্বত্বভোগী মিলিয়ে কয়েক লাখ মানুষের জীবনে এখন নেমে এসেছে চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ইতোমধ্যে অনেক জনশক্তি প্রেরণকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ারও চিন্তাভাবনা করছেন। অনেকে অফিস ভাড়া দিতে না পেরে তাদের অ্যাডভান্স থেকে বাড়ির মালিককে কেটে নিতে বলছেন। অনেকে কর্মচারীদের অর্ধেক বেতন দিয়ে কোনো রকমে ধরে রাখা চেষ্টা করছেন। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় তাহলে অনেক ব্যবসায়ী এই সেক্টর থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবেন বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের পাঠানো বিদেশফেরত আসা কর্মীর পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, ১ এপ্রিল থেকে ৭ অক্টোবর-২০২০ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৮১ হাজার ৪৩০ জন কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে বৈধ পাসপোর্টে ফিরেছেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৬ জন।
এর আগে ৩ অক্টোবর তার পাঠানো অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ১ এপ্রিল থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ফেরত আসা শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৩ জন। অর্থাৎ মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে দেশে ফেরত এসেছেন ১০ হাজার ৮৫৭ জন। এদের বেশির ভাগ কাজ হারিয়ে, জেল খেটে (অনেকটা নিঃস্ব হয়ে ফিরেছেন) বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তারা বিদেশফেরত যাত্রীদের সাথে আলাপ করে এ তালিকা তৈরি করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
জনশক্তি ব্যবসায়ী ও বায়রার সাবেক একজন নেতা গতকাল নয়া দিগন্তকে আক্ষেপ করে বলেন, করোনার কারণে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য সব লাটে উঠেছে। কী করব বুঝতে পারছি না। গত সাত মাস ধরে কোনো লোক বিদেশে যাচ্ছে না। এ কারণে অফিস বন্ধ করে দিয়েছি। ভবন মালিক বাড়িভাড়ার জন্য প্রতিনিয়ত তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু দিতে পারছি না। উপায় না পেয়ে বলে দিয়েছি, অ্যাডভান্সের টাকা থেকে প্রতি মাসের ভাড়া অ্যাডজাস্ট করে নিতে। কর্মচারীরা কোথায় যাবে? তাই তাদের বলেছি, ব্যবসা যত দিন চালু না হবে তত দিন তোমরা অর্ধেক বেতন পাবে। এভাবে এখন সময় পার করছি আমরা। দেখি কতক্ষণ টেকা যায়? এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুনছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ইতোমধ্যে সৌদি সরকার যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের ভিসা রি-ইস্যু করার জন্য নতুন করে আবার মেডিক্যাল টেস্ট করাতে বলেছে। এর জন্য কর্মীদের নামে মেডিক্যাল স্লিপ ইস্যু করা হচ্ছে।
গতকাল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখার একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, জুন মাস থেকে অফিস খোলার পর টুকটাক বহির্গমন ছাড়পত্র হচ্ছে। এর মধ্যে পোল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার নামে দু’-চারটা বহির্গমন ছাড়পত্র আমরা দিয়েছি। গতকাল একজন জনশক্তি ব্যবসায়ী নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, শ্রমবাজারের শ্রমবান্ধব দেশগুলোর পরিস্থিতি দিন দিন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এখন আমাদের দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কতটুকু উন্নতি হয় তার ওপরই নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ শ্রমবাজার। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কাতারে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগ যাতে বাংলাদেশের হাতছাড়া না হয়ে যায় সেদিকে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে। একইভাবে সৌদি আরবেও প্রচুর লোকের চাহিদা রয়েছে বলে তিনি জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement