২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতের সাথে সম্পর্ক অবনতির দিকে : ইকোনমিস্ট

-

যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন ‘অ্যাজ বাংলাদেশ’স রিলেশন্স উইথ ইন্ডিয়া উইকেন, টাইজ উইথ চায়না স্ট্রেংথেন’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিলেট ভারত সীমান্ত থেকে কমবেশি ৫০ কিলোমিটার দূরে। এপ্রিলে সিলেট বিমানবন্দরের নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণের ২৫ কোটি ডলারের চুক্তির দরপত্রে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান হেরে যায় চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এ দিকে জুনে বাংলাদেশ থেকে রফতানিতব্য পণ্যের ৯৭ শতাংশের ওপর শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয় চীন। এ ছাড়া তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের সাথে এক দশক ধরে চলা দরকষাকষিতে ত্যক্ত বিরক্ত বাংলাদেশ এই মাসেই ওই নদীর পানি ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের কাছে ১০০ কোটি ডলার চেয়েছে। শীর্ষ নিউজ।
ইকোনমিস্টের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে কিছুটা ভারতের কারণে। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সাথে লড়াইরত মুক্তিকামী যোদ্ধাদের পক্ষে হস্তক্ষেপ করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠই ছিল। তবে অনেক বাংলাদেশীই ভারতকে অহঙ্কারী মিত্র হিসেবে দেখে। বর্তমান ভারত সরকারের বিভিন্ন মুসলিমবিরোধী নীতিও বাংলাদেশে এই মনোভাবকে উসকে দিয়েছে।
অন্য দিকে চীন বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে ৭টি ‘মৈত্রী সেতু’ স্থাপন করেছে। ২০১৮ সালে ভারতকে টপকে চীন হয়ে উঠে বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস। দেশটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদারও। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২৭টি অবকাঠামো প্রকল্পে ২০০০ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন।
বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো অবকাঠামো উন্নয়ন, জ্বালানি ও টেলিকম খাতে ঝেঁকে বসেছে।’ ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, চীনের পকেট যে শুধু গভীর তা-ই নয়; বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশের তুলনায় চীনের দ্বিধাদ্বন্দ্বও কম। ২০১৩ সালে পদ্মা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলারের ঋণ প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ। ওই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বিশ্বব্যাংক সক্রিয় হয়ে ওঠার পরই এই পদক্ষেপ নেয় দেশটি। এরপর সেখানে ঢুকে পড়ে চীন।
আলী রিয়াজ আরো বলেন, গত কয়েক বছরে চীনে পড়াশোনা করতে যাওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বহুগুণ বেড়েছে। মিডিয়াও পক্ষে চলে আসছে। একটি আর্থিক পত্রিকার প্রতিবেদক জানান, ‘আমার পত্রিকার ৭০ শতাংশ সাংবাদিক চীনে গেছেন।’ তিনি নিজেও ২০১৮ সালে একটি ফেলোশিপের অংশ হিসেবে চীনে ১০ মাস ছিলেন। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আসার পরপরই চীনা ডাক্তারদের একটি দল বাংলাদেশে আসে মহামারী মোকাবেলায় সহায়তা দেয়ার উদ্দেশ্যে।
আকৃষ্টকরণের চীনা এই চেষ্টা বেশ কাজে দিচ্ছে। বাংলাদেশী পণ্যকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রেও চীন (ভারতের তুলনায়) পিছিয়েই ছিল। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশী মিডিয়ায় চীন খুব কম সমালোচনারই লক্ষ্যবস্তু।
তবে বাংলাদেশ সরকার কিছুটা সতর্ক। চীনের কাছে অত্যধিক ঋণী হয়ে পড়া নিয়ে সতর্ক সরকার। এ ছাড়া ভারত যেন রুষ্ট না হয়, সেই ব্যাপারেও চোখ কান খোলা রেখেছে বাংলাদেশ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্চে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। অবশ্য করোনাভাইরাসের কারণে ওই সফর স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু এত বড় ও শক্তিশালী প্রতিবেশী থাকার যন্ত্রণাও কম নয়। আলী রিয়াজ বলেন, ভারতের নীতিনির্ধারকগণ ও সংবাদমাধ্যম সার্বক্ষণিক বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশ অনেক ছোট ও দেশটির গুরুত্বও অত বেশি নয়। কিন্তু চীন সেটা করে না।


আরো সংবাদ



premium cement