২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উত্তরের জেলাগুলোতে পানিবন্দী লাখো মানুষ

শুরু হয়েছে নদীভাঙন; প্লাবিত ফসলের মাঠ ও মৎস্য ঘের; সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
সুনামগঞ্জ সদরের রাধানগর এলাকায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে পাকা রাস্তা। স্থানীয় শিশুদের রাস্তার ওপরেই জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা যাচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ভারী বৃষ্টিপাত এবং যমুনা, বাঙালি, আত্রাইসহ অন্যান্য নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব জেলায় মানুষজন দুর্ভোগে পড়েছে। লাখ লাখ লোক পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। কোথাও কোথাও নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এসব জেলায় ফসলের মাঠ ও মৎস্য ঘের প্লাবিত হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে যোগাযোগব্যবস্থা। তবে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রথম দফার বন্যার চেয়ে দ্বিতীয় দফার বন্যায় কৃষি ও মৎস্য খাতে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ছে এা লাখেরও অধিক পানিবন্দী মানুষ। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালীপদ রায় জানান, জেলায় এক হাজার ১৫১ জন মৎস্যচাষির দুই হাজার ১৭৯টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার টাকার মাছ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মো: মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, প্রথম দফা বন্যায় ৬৮ হাজার কৃষকের ১০ হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত ছিল। এর মধ্যে সাত হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়। এতে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি টাকা। এবারে দ্বিতীয় দফার বন্যায় নতুন করে দেড় হাজার হেক্টরের বেশি ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে।
জামালপুরে পানিবন্দী ৪ লাখ মানুষ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে যমুনার পানি। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় চার লাখ মানুষ। গতকাল বুধবার সকালে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১৯৮৮ সালে বন্যায় পানির স্তর ছিল ১২১ সেন্টিমিটার। দ্বিতীয় দফার বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ১৫ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যায় মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্যসঙ্কট। পানিবন্দী এসব মানুষকে আশ্রয় দিতে খোলা হয়েছে ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র।
জামালপুর সিভিল সার্জন ডা: প্রণয় কান্তি দাশ জানান, এ পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকায় ৮০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এ দিকে পানি বৃদ্ধির বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং এ বন্যা দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বকশীগঞ্জে বন্যার পানি বাড়ছে
বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের বকশীগঞ্জে কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যায় পরিণত হয়েছে। বন্যার পানি বাড়ছে হু হু করে। বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া, মেরুরচর, বগারচর, নিলক্ষিয়া ও বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত চার দিন ধরে বকশীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দ্রুত গতিতে বন্যার পানি বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ১৫টি গ্রামের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট, ফসল, বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মানুষ। বিশেষ করে গোখাদ্যের সঙ্কট ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হাসান মাহবুব খান জানান, বন্যার বিষয়টি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
দেওয়ানগঞ্জে বিপদসীমার অনেক উপরে পানি
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ১০৬ সেন্টিমিটার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। হু হু করে বাড়ছে পানি। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, প্রবল বর্ষণ এবং নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয় দফায় বন্যা শুরু হয়েছে। নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। দেওয়ানগঞ্জ বাজার-বেলতলী বাজার-মলমগঞ্জ বাজার- জিলবাংলা সুগার মিলস্-উপজেলা পরিষদ-সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-রেলস্টেশন সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ দিকে দেওয়াজনগঞ্জ রেলস্টেশন এলাকায় বন্যার পানিতে লাইন ডুবে যাওয়ায় রেল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে দেওয়ানগঞ্জ-ইসলামপুর লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। পৌরসভাসহ উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ, চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, হাতিভাঙা, পাররামপুর, চর আমখাওয়া ও ডাংধরা ইউনিয়নের বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চল প্লøাবিত হয়েছে। এতে নদীপাড় ও নিম্নাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে রয়েছে। আখ, পাট, ধান, বীজতলা, সবজিবাগানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে নদ-নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। উপজেলার বেশ ক’টি আশ্রয়কেন্দ্র ও গুচ্ছগ্রাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলস্টেশন, সরকারি বাঁধ-রাস্তা, পরিত্যক্ত বাসাবাড়ি ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে।
সারিয়াকান্দিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
বগুড়া অফিস ও সারিয়াকান্দি সংবাদদাতা জানান, বগুড়ায় যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এর ফলে জেলার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার চরাঞ্চলে ফসলের মাঠ ও বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। গতকাল বুধবার যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটার এবং বাঙালি নদীর পানি বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে জেলার তিন উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের প্রায় সোয়া এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, গুচ্ছগ্রাম ও উঁচু জায়গায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে কয়েক হাজার পরিবার। অনেকেই নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করছে। বানভাসি মানুষ খাদ্য ও খাবার পানির সঙ্কটে পড়েছে। যমুনায় প্রবল স্রোতের সাথে ভাঙছে চরের পর চর।
দুই সপ্তাহ আগে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। দুই দিন পর পানি কমে গেলেও গত কয়েক দিনে অতিবর্ষণে সারিয়াকান্দি উপজেলার পাখিমারা চর, চালুয়াবাড়ি, হাটশেরপুর, কাজলা কর্নিবাড়ি, বোহাইল ও ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়নের সব গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। পানিতে ডুবে গেছে চরের উর্বর জমিতে চাষ করা পাট, কাউন, আউশ ধান, মরিচসহ বিভিন্ন ফসল। সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, বন্যায় এ পর্যন্ত ৬৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে প্লাবিত নতুন নতুন এলাকা
যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে। এতে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কাজিপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সাথে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতি ও বড়াল নদীর পানিও। এসব নদীর অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ মানুষ ইতোমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত মানুষগুলো বাড়িঘর ছেড়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে।
নওগাঁয় বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত
নওগাঁ ও আত্রাই সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর মান্দায় আত্রাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে দুই গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার পারনুরুল্লাবাদ, নুরুল্লাবাদ মণ্ডলপাড়া, জোকাহাট, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, বাইবোল্যা ও পাঁজরভাঙা পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে পানি। ফলে এসব এলাকার বেশকয়েক জায়গা বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে বসতবাড়িতে। অন্য দিকে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আত্রাই উপজেলার মালিপুর, সধুপুর রসুলপুরসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। এরই মধ্যে রসুলপুর এবং মালিপুর এলাকায় রাস্তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। ফলে আত্রাই উপজেলার সাথে নওগাঁ জেলার যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক।
সিংড়ায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা
সিংড়া (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, বন্যার পানির তোড়ে সিংড়া-টু-তেমুক সড়ক ভেঙে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। এ ছাড়াও অন্তত ছয়টি জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ১০ গ্রামের মানুষ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে তাদের এই সড়কের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। কিন্তু রাতে হঠাৎ বন্যার তোড়ে দু’টি স্থানে অন্তত ১০ মিটার করে ভেঙে গেছে এবং ক্রমেই ভাঙন বৃষ্টি পাচ্ছে। এ ছাড়াও ভাগনাগরকান্দি এলাকায় আরো অন্তত ছয়টি পয়েন্টে পাকা সড়কে পানি উপচে পড়েছে। এই সড়ক ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় ইউনিয়নের চরতাজপুর, তাজপুর, ভাদুরীপাড়া, চকনওগাঁ, কমরপুর, বজরাহার, রাখালগাছা গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার লোক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু বলেন, অনেক আগেই এলজিইডিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল এবং এ রাস্তা রক্ষায় আমি নিজে উপজেলা পরিষদ খেকে অর্থ বরাদ্দ দিতে চেয়েছি। কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হয়নি।
বন্যার পানিতে ডুবে যুবকের মৃত্যু
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বন্যার পানিতে ডুবে রাকু (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এলাকাবাসী জানান বুধবার সকালে সবুজপাড়া ব্রিজ থেকে সরকার পাড়া সড়কের মধ্যে ব্রিজের পাশে বন্যার পানিতে ভাসতে দেখে হামিদুল ইসলামের ছেলে রাকুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে এলাকাবাসী। তার পরিবারের লোকজন জানায়, মৃগী রোগী রাকু হয়তো মাছ ধরার সময় পানিতে পড়ে গিয়ে মারা গেছে।
ধসে গেল ঠাকুরগাঁওয়ের জমিদারবাড়ি
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে সীমান্তবর্তী উপজেলা হরিপুরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী রাঘবেন্দ্র জমিদারবাড়ি। গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে ধসে গেছে ভবনের একটি অংশ।
জানাগেছে, ১৪০০ সাথে মুসলিম শাসনামলে হরিপুর ছিল তৎকালীন খোলড়া পরগনার অন্তর্গত। মেহেরুন্নেছা ওরফে কামরুন নাহার নামে এক বিধবা মুসলিম নারীর ওপর ন্যস্ত ছিল এ পরগনার জমিদারি। খাজনা অনাদায়ে এ জমিদারির অংশ বিশেষ নিলামে উঠলে তা কিনে নেন ঘনশ্যাম। ঘনশ্যাম কুণ্ডুর পরবর্তী বংশধর রাঘবেন্দ্র রায় ১৮৯৩ সালে জমিদারবাড়ির সম্প্রসারণ নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তার ছেলে জগেন্দ্র নারায়ণ রায় উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ করেন। মূল ভবনটির পূর্ব পাশে শিব মন্দির ও মন্দিরের সামনে ছিল নাট্যশালা। ১৯০০ সালের দিকে ঘনশ্যামের উত্তরাধিকারীরা বিভক্ত হয়ে গেলে হরিপুর রাজবাড়ীও দু’টি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। এ বাড়ির পশ্চিমে নগেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ও গিরিজা নারায়ণ চৌধুরী ১৯১৩ সালে আরেকটি বাড়ি নির্মাণ করেন।
স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, হরিপুর জমিদার বাড়ি দু’টি এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন ছিল। একটি ইতঃপূর্বে বিলীন হয়ে গেছে, অপরটিও ধ্বংসের পথে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে আগেই এটি সংস্কার করা উচিত ছিল; কিন্তু প্রশাসনের অবহেলা কারণে আজ তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এবারের বর্ষায় টানা ভারী বর্ষণে বাড়িটির বড় একটি অংশ ভেঙে পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবদুল করিম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রতœতাত্ত্বিক বিভাগের অধীনে থাকার কারণে আমরা ইচ্ছে থাকলেও এর সংস্কার করতে পারিনি।
সুনামগঞ্জে কমেছে সুরমার পানি
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি দ্রুত কমতে শুরু করেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ষোলঘর পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ শহরের বেশির ভাগ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে শহরের কিছু কিছু স্থানে এখানো পানি রয়ে গেছে।
জেলার প্লাবিত উপজেলাগুলোতেও পানি নামছে। তবে হাওরে পানি টইটুম্বুর থাকায় বন্যার পানি নামছে ধীর গতিতে। এ ছাড়া পানি কমার সাথে সাথে দুর্ভোগও বাড়ছে। গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলা শহরের সাথে দোয়ারা বাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
নেত্রকোনায় পাহাড়ি ঢলে অর্ধলক্ষাধিক পানিবন্দী : ১ জনের মৃত্যু
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনায় প্রবল বর্ষণ ও মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অর্ধলক্ষাধিক লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সীমান্তবর্তী পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী, কংশ, ধনু, উব্ধাখালী, মগড়াসহ অন্যান্য নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নি¤œাঞ্চল ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় জেলার কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও সদর উপজেলাসহ নদীতীরবর্তী এলাকার এসব মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কলমাকান্দা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ২ শতাধিক গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার ও জেলার সদর বারহাট্টা, সুসংদুর্গাপুরসহ হাওর উপজেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকায় ২০ হাজারের মতো নারী-পুরুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় ওষুধ ও খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে।
এ দিকে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দায় গণেশ্বর নদী সাঁতরে পার হওয়ার সময় ডুবে পুতুল ঘাগ্রা (৪৫) নামে এক উপজাতী নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজের ২১ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নদীর হাজাংপাড়া এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাজার থেকে ফেরার পথে সাঁতরে গণেশ্বরী নদী পারাপারের সময় ঢলের প্রবল স্রোতের টানে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement