২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আজো কিছুটা বৃষ্টি হবে

আমফানে বিস্তর ক্ষতি ১০ জনের মৃত্যু

উপকূলীয় জেলাগুলোয় বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত; ফসলের ব্যাপক ক্ষতি; বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ : নয়া দিগন্ত -

ঘূর্ণিঝড় আমফান চলে গেলে সারা দেশেই এর প্রভাব রয়ে গেছে। আজ শুক্রবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আজ সারা দেশের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাব পড়লেও দেশের অন্যত্র বৃষ্টির সাথে তীব্র বাতাস প্রবাহিত হয় কেবল।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার আগে পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের অবশিষ্টাংশ রাজশাহী-পাবনা অঞ্চলে স্থল গভীর নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করার পর এটা সামান্য উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও আরো দুর্বল হয়ে বেলা ৩টার দিকে রাজশাহী অঞ্চলে স্থল নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমেই দুর্বল হতে থাকে। গভীর নিম্নচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া গবেষক মো: মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দেখা গেছে গত বুধবার রাত ২টার পর আকাশে মেঘের তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। তপমাত্রা কমার সাথে ঘূর্ণিঝড় আমফান অনেক শক্তি হারিয়ে ফেলে। রাতেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট মেঘ পুরো বাংলাদেশে ছেয়ে গিয়েছিল। চার দিকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘের বিস্তৃতি ছিল।
বুধবার রাত ১টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র কুষ্টিয়া জেলায় উপরে ছিল। পর্যায়ক্রমে তা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর গেছে। পরবর্তী ৬ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র গতিবেগে বাতাস বয়ে যায় ও ভারী বৃষ্টি হয়। তবে ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাস এত বড় ছিল যে এটি প্রায় পুরো বাংলাদেশই এর বৃত্তের ভেতরে ছিল। ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোকে ছুঁতে পারেনি বলে এ বিভাগের জেলাগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি হয়েছে।
এ দিকে আমফানের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মানুষজন ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে, চিংড়ি ও মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কোথাও কোথাও পুরো একদিন পর বিদ্যুতের দেখা পায় এলাকাবাসী।
সিরাজগঞ্জে কৃষিতে ক্ষতির আশঙ্কা : একজনের মৃত্যু
কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, আমফানের প্রভাবে দমকা বাতাস ও বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জে আম লিচুসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ১৫২৫ হেক্টর জমির সবজি বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। অনেক জায়গায় গাছপালা ভেঙে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটেছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ শহর, কাজিপুরে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত ছিল না। এতে গ্রাহকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
চুয়াডাঙ্গায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি : দু’জনের মৃত্যু
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, আমফানে চুয়াডাঙ্গার পান বরজ, ভুট্টা ক্ষেত, আম বাগানসহ উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি। ভেঙে গেছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। এ দিকে ঝড়ের কারণে শহরের জাফরপুরে সাব গ্রিড স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বুধবার বিকেল থেকে জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় মোবাইলসহ ইন্টারনেট সংযোগ। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে কিছু কিছু ফিডারে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
এ দিকে জেলায় দেয়ালচাপা ও গাছচাপা পড়ে দু’জনের মৃত্যু ঘটেছে।
রংপুরে শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু : ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
রংপুর অফিস জানায়, রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ গাছপালা উপড়ে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে ঘরবাড়ি এবং উঠতি বোরো ধানের আবাদ। মারা গেছে এক শিশুসহ দুইজন। বদরগঞ্জের মাদাই খামার এলাকায় গাছের ডাল পড়ে মারা গেছেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লাইলী বেগম। অন্যদিকে রংপুরের মিঠাপুকুরে ভাংনি এলাকায় গাছের ডালের আঘাতে মারা গেছে নাহিদ নামের এক শিশু। আমফানের তাণ্ডবে উঠতি বোরো, ভুট্টা ও সবজি আবাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বগুড়া ১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন
বগুড়া অফিস জানায়, প্রচণ্ড ঝড় ও বৃষ্টিতে বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে বোরো ধান, গাছপালা ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ঝড়ের কারণে ১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল বগুড়াবাসী। বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় বগুড়া শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়। এরপর সারারাত অন্ধকারের মধ্যে শবেকদরের ইবাদত বন্দেগি, রোজার জন্য সাহরি খান শহরবাসী ও জেলাবাসী। এ সময় পানির অভাবে মানুষকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়।
পটুয়াখালীতে ২ জন নিহত : ব্যাপক ক্ষতি
পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় উদ্ধার প্রচারণা কাজ চালাতে গিয়ে পানিতে ডুবে সিপিপির টিম লিডার শাহ আলম ও গাছের চাপায় রাশেদ নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসের ফলে পটুয়াখালীর নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অরক্ষিত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৫০টি বসতঘরের। পানিতে তলিয়ে বাদাম, রবিশস্য, শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়িসহ গাছ এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
রাঙ্গাবালীতে শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত
রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, আমফানের তাণ্ডবে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় শতাধিক বাড়িঘর ও টুঙ্গীবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিধ্বস্ত হয়েছে। এর আগে বুধবার দুপুরে অরক্ষিত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়নের চরকাশেম, মাঝের চর, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআণ্ডা, চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের বিবির হাওলা, গরুভাঙ্গা, মধ্য চালিতাবুনিয়া, উত্তর চালিতাবুনিয়া ও লতার চরসহ ৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ১২৪০টি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪০টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও ৯০০টি বাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া চরাঞ্চলের অর্ধশতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।
ঝালকাঠিতে পানিবন্দী ৫০ গ্রামের মানুষ, ফসলের ক্ষতি
ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, আমফানে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার চার উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫০টি গ্রামের বাসিন্দারা। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ ও মাছের ঘের। টানা বৃষ্টি ও প্রচণ্ড বাতাসে অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এতে বিভিন্ন স্থানের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, রাতে স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত
বরগুনা সংবাদদাতা জানান, উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের পানিতে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধশত গ্রাম ও নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি ডুবে গেছে, হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে গেছে। এছাড়া এ নদীর পানিতে ভেসে গেছে মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন সবজির ক্ষেতও।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৗশলী কাওছার আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাতে বরগুনায় সাড়ে ১১ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীর পানিতে এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
মির্জাগঞ্জে বেড়িবাঁধ ও বসতঘর বিধ্বস্ত : ১৫ গ্রাম প্লাবিত
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বেড়িবাঁধসহ পায়রা পাড়ের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পায়রা ও শ্রীমন্ত নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঁধ ভেঙে প্রায় ১৫টি গ্রামসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন কাঁচা-পাকা রাস্তা। পানির নিচে তলিয়ে আছে রবি ফসলের ক্ষেত ও বীজতলা। মনোহরখালী লঞ্চঘাটের নবনির্মিত রাস্তাটি পানির তোড়ে ভেঙে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। উপজেলার পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামের বেগমপুর বাঁধঘাটের সøুইসগেট শ্রীমন্ত নদীর পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় বেতাগী উপজেলার সাথে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ। উপজেলার বিভিন্ন স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে গতকাল বৃহস্পতিবার জোয়ারের প্রভাবে ভাঙাবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে উপজেলায় প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও ৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে। প্রায় ১৫ হাজার লোক পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। এছাড়া ৩০ বসতঘর সম্পূর্ণ ও ৩০০টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বেনাপোল ও শার্শা লণ্ডভণ্ড : নিহত ১
বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা জানান, যশোরের বেনাপোল ও শার্শায় আমফানের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় শার্শা জামতলা নামক স্থানে ঘরের উপরে উপড়ে পড়া গাছের চাপায় মোক্তার নামে একজন নিহত হয়েছেন। ঝড়ে শার্শা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার ঘরবাড়ির চাল উড়ে গেছে। আর কাঁচা ঘরগুলো ধসে পড়ে গেছে। বেনাপোল কাস্টমস হাউজ, বিজিবি ক্যাম্প ও বন্দরের শেডগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেনাপোল-যশোর সড়কে বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
ভাণ্ডারিয়ায় দুই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত
ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় দুই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্তসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শত শত গাছপালা উপড়ে পড়ে দুই শতাধিক বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। জলোচ্ছ্বাসে বেশ কয়েকটি মাছের ঘের পানিতে ভেসে যায়। এছাড়া পানির তীব্র স্রোতে কয়েকটি সড়ক, উপজেলার ধাওয়া ও তেলিখালি ইউনিয়নের দুই বেড়িবাঁধ ধসে গেছে এবং পানের বরজ ও সবজির খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়। উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আওলাদ হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১৩ কিমি গ্রামীণ ও ইউপি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া দুই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে।

পোরশায় দমকা ঝরে গেছে গাছের আম
পোরশা (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট দমকা ঝড়ো হাওয়ায় নওগাঁর পোরশায় আমচাষিদের বাগানের আম ঝরে গেছে। ফলে তাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এতে আমচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম জানান, ঝড়ে উপজেলায় গড়ে ৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে বলে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
মনপুরায় ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত
ভোলা সংবাদদাতা জানান, ভোলার মনপুরায় ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধসহ ১৩ কিলোমিটার মাটির রাস্তা বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই সমস্ত বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধে জিও ব্যাগের ড্যাম্পিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমফানের তাণ্ডবে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ৩৫১টি বসতঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ৫০ হেক্টর সবজি ক্ষেতের ক্ষতিসহ ১৭৭টি পুকুর ও ১টি চিংড়ি ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অন্য দিকে কৃষকের ৯৬টি গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া ও হাঁস-মুরগি জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। এ ছাড়াও মূল ভূূ-খণ্ডের বেড়িবাঁধের বাইরে জোয়ারের প্লাবিত হয়েছে। ওই সব এলাকার ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরা লণ্ডভণ্ড : ২ জনের মৃত্যু
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, আমফানের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে গোটা সাতক্ষীরা জেলা। উপকূলীয় চারটি উপজেলার কমপক্ষে ২৩টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্যঘের ও ফসলি জমির ফসল। বিধ্বস্ত হয়েছে সহস্রাধিক কাঁচাঘর বাড়ি। গাছপালা উপড়ে অনেক রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। সারা সাতক্ষীরা জেলাতে গত মঙ্গলবার রাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরার ব্র্যান্ড খ্যাত আমের। এ দিকে শহরের কামাননগরে গাছ চাপা পড়ে করিমন নেছা নামের এক নারী ও বাকাল সরদার পাড়ায় মৃত আব্বাস আলীর ছেলে শামসুর রহমান (৬৫) মারা গেছেন।
কক্সবাজারে ২৫ গ্রাম প্লাবিত
কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আমাবস্যার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়ে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফ উপজেলার ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানির তোড়ে উপকূলীয় এলাকার অনেক বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক ক্ষেত-খামার ও মৎস্য চাষ। নষ্ট হয়ে পড়েছে পানের বরজ। বৃষ্টির পানিতে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশ কিছু এলাকা জলাবদ্ধতা হয়েছে।
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎ সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ড
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, আমফানের তাণ্ডব চলাকালে গতকাল রাত ১০টার সময় জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের কুষ্টিয়ার বটতলাস্থ সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দু’টি ট্রান্সমিশন সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। এতে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কুষ্টিয়া বর্তমানে বিদ্যুৎবিহীন। ফলে ইন্টারনেট ও ফোনের লাইন আপাতত বন্ধ রয়েছে। মেরামতকাজ চলছে।
ফরিদপুরে ৮৬ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে ঝড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ও সেমি পাকাঘর। ঝড়ের কারণে ফরিদপুর শহরের কিছু কাঁচা ও সেমিপাকা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশকিছু বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে। শহরে গত বুধবার রাত ১১টা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে শহরের কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে জেলায় ৮৬ দশমিক ৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়েছে। টাকায় এ ক্ষতির পরিমাণ তিন কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার।

 


আরো সংবাদ



premium cement