২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আইজিপি হলেন বেনজীর র্যাব প্রধান মামুন

-

র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা ড. বেনজীর আহমেদকে পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি আইজিপির দায়িত্ব নেয়া জাবেদ পাটোয়ারীর চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ এপ্রিল। অন্য দিকে র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে বেনজীরের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান আবদুল্লাহ আল মামুন।
গতকাল বুধবার দুপুরে জননিরাপত্তা বিভাগ পুলিশ-১ শাখার উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে পুলিশের ৩০তম আইজি হিসেবে ড. বেনজীর আহমেদ ও র্যাব প্রধান হিসেবে আবদুল্লাহ আল মামুনকে দায়িত্ব দেয় সরকার। এই আদেশ ১৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বেনজীর আহমেদকে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে উগ্রবাদ, সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে ভূমিকা পালন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান তিনি। দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রেও অবদান রাখেন বেনজীর।
হলি আর্টিজান হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং পরে তিনি বাংলাদেশে উগ্রবাদ নির্মূলে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ অভিযাত্রাকে একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিয়ে বেগবান রেখেছেন মাদকবিরোধী অভিযান। সুন্দরবনের জলদস্যুতার অবসান ঘটিয়ে একটি স্বস্তির উপকূলীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রেখেছেন। সাম্প্রতিক ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান তার সাফল্যের মুকুটে আরো একটি উজ্জ্বল পালক।
নতুন পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব নিতে যাওয়া বেনজীর আহমেদ মেধাবী, সৎ ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শিক্ষাজীবনে বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্ট্যাডিজ, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা চার্লস স্ট্রার্ট ইউনিভার্সিটি ও সিঙ্গাপুরের বিশ্বব্যাংক আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পড়াশোনা করেন। সপ্তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ ১৯৮৮ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। র্যাবের ডিজি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ছয় বছরের বেশি। তার আগে তিনি প্রায় সাড়ে চার বছর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার, ডিএমপিতে ডিসি নর্থ, পুলিশ একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার টাঙ্গাইলের কমান্ড্যান্ট, ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশনস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়া জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা বিভাগে চিফ অব মিশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট সার্ভিসেস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। কর্মদক্ষতায় তিনবার জাতিসঙ্ঘ শান্তিপদক অর্জন করেন।
চাকরিজীবনে সব সময় দায়িত্ববান বেনজীর আহমেদ। এজন্য অর্জন করেছেন পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পুলিশ মেডেল (বিপিএম)। ২০২০ সালে ষষ্ঠবারের মতো বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বিপিএম (সাহসিকতা) অর্জনের রেকর্ড গড়েন বেনজীর আহমেদ। এর আগে তিনি ২০১১, ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে পদক পেয়েছিলেন।
ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন-২০১৯ সালে বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ‘কনট্রিবিউশন অব বাংলাদেশ ইউএন পিস কিপিং ফোর্স টু আওয়ার ন্যাশনাল ইকোনমি’ শিরোনামে তার অভিসন্দর্ভে জাতীয় অর্থনীতিতে পুলিশ শান্তিরক্ষীদের অবদান এবং শান্তিরক্ষা মিশনে প্রায় তিন দশক দায়িত্ব পালনে লব্ধ অভিজ্ঞতা দেশের পুলিশ বাহিনী সংগঠনে ইতিবাচক পরিবর্তনে কী ধরনের ভূমিকা পালন করেছে তা তুলে আনেন বেনজীর আহমেদ। গবেষণায় জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের বিশ্বশান্তি রক্ষায় অনন্য অবদান রাখার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শান্তিরক্ষা মিশনের ভূমিকা বস্তুনিষ্ঠভাবে তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদান : গত বছরের ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ এশীয় দাবা কাউন্সিলের প্রথম নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন বেনজীর আহমেদ। সার্ক অঞ্চলের এই আট দেশের দাবা কাউন্সিলরদের সর্বসম্মত ভোটে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। এরপর শত শত দাবাড়ু তৈরি করতে কাজ শুরু করেন তিনি। তার উদ্যোগে দক্ষিণ এশীয় আট দেশ নিয়ে ঢাকায় হয় ‘ফার্স্ট সার্ক চেজ চ্যাম্পিয়ন’ প্রতিযোগিতা।
নতুন র্যাব প্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুন : এ দিকে নতুন র্যাব প্রধান আবদুল্লাহ আল মামুনকে এর আগে গত বছরের ২৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে সিআইডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের শ্রীহেলা গ্রামের মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল্লাহ আল মামুন। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইলে। ১৯৮২ সালে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট (এএসপি) হিসেবে যোগ দেন। গত বছরের মে মাসে তিনি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পান। এর আগে তিনি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ছিলেন।
কর্মজীবনে আবদুল্লাহ আল মামুন পুলিশ সদর দফতর, মেট্রোপলিটন পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া জাতিসঙ্ঘ শান্তি মিশনে কাজ করার মাধ্যমে তিনি বিশ্ব শান্তিক্ষার জন্য উজ্জ্বল অবদান রেখেছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর সার্কেল এএসপি, সিরাজগঞ্জের রাইগঞ্জ সার্কেল এএসপি, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ সার্কেল এএসপি, চাঁদপুরের অতিরিক্ত এসপি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিএমপি), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এএসপি, এডিসি (ডিএমপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া নীলফামারী জেলার সুপারিনটেনডেন্ট পুলিশ (ডিপি), ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার (ডিসি), এআইজি (এস্টাবলিশমেন্ট) এবং ঢাকা সদর দফতরের এআইজি (গোপনীয়) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ও ডিআইজি হন। অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement