৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তালুকদার মনিরুজ্জামানের স্মরণসভায় বিশিষ্টজনরা

রাষ্ট্রের অবস্থা ভয়াবহ , মুক্ত জ্ঞানচর্চায় চলছে বন্ধ্যত্ব

তালুকদার মনিরুজ্জামানের স্মরণসভায় উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা হ নয়া দিগন্ত -

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামান স্মরণে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, তালুকদার মনিরুজ্জামানের চলে যাওয়া দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। কিন্তু তার মতো মহীরুহকে সম্মান জানাতে না পারা রাষ্ট্রের চরম দীনতা। তারা আরো বলেন, দেশে জ্ঞানচর্চার বন্ধ্যত্ব চলছে। আর যেখানে জ্ঞানচর্চা হয় না সেখানে উন্নয়ন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুখশান্তি কিছুই থাকতে পারে না।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে তালুকদার মনিরুজ্জামান নাগরিক স্মরণসভা কমিটি এ সভার আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে ও ড. আবদুল লতিফ মাসুমের সঞ্চালনায় সভায় আলোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, গণফোরামের নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুলøাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উলøাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন, অধ্যাপক শামসুর রহমান, প্রফেসর এ কে এম শহিদুলøাহ, প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন মোলøা, ড. নুরুল আমিন, প্রফেসর এম সলিমুলøাহ খান, প্রফেসর সি আর আবরার, ড. মাহবুবুর রহমান, অ্যাডভোকেট নাজমুল হক নান্নু, ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন, জহির উদ্দিন স্বপন, ড. তারেক ফজল, তালুকদার মনিরুজ্জামানের ছেলে স্বাধীন মনির প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে আজ কেউ ভিন্ন মত পোষণ করলেই তাকে ¯Íব্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তালুকদার মনিরুজ্জামানের মতো মানুষরা সব সময় আসেন না। পৃথিবীতে খুব ক্ষণজন্মা পুরুষ তারা। তালুকদার মনিরুজ্জামানের চলে যাওয়া দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আজকে যে রাষ্ট্র আমরা সবাই মিলে তৈরি করেছি সেটা একটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ বিষয়টি তাকে পীড়া দিত। এজন্য শেষ বয়সে তিনি খুব একটা জনসমÿে আসতেন না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমরা যে রাষ্ট্র তৈরি করেছি সেখানে মানুষের কোনো অধিকার নেই। সাধারণ মানুষ তারা একেবারে সাধারণ হয়ে গেছে। যে চিন্তা নিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম সেই চিন্তা, চেতনা, ধারণাগুলো এখন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আজকে যারা শাসকগোষ্ঠী, তারা খুব সচেতনভাবেই দেশটাকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করছে। খুব দুঃখ হয় যখন দেখি দেশের যারা গুণী মানুষ আছেন তাদের কথা বলার কারণে কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও তারা কোনো রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন না। তার এমন একটি উদাহরণ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তাকে শুধু ভিন্ন মত পোষণ করার কারণে কারাগারে নিয়ে নিদারুণভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমার দেশ বন্ধ করে মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। যারা লিখেন, কথা বলেন ও শুভ চিন্তার কাজ করতে চান আজকে তাদের পর্যদু¯Í করা হচ্ছে। দেশে আজ যারা ভিন্ন মত পোষণ করতে চায়, ভিন্ন কথা বলতে চায় তাদের বিভিন্নভাবে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে, নি¯Íব্ধ করে ফেলা হচ্ছে। যাই হোক এর মধ্যেই আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে। এর মধ্যেই আমাদের কথা বলতে হবে।
এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, তালুকদার মনিরুজ্জামান আমাদের অনেকের পথপ্রদর্শক। তার জ্ঞান রাষ্ট্র কাজে লাগালে উপকৃত হবে। আর এভাবেই তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। আমি তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।
ড. আকবর আলি খান বলেন, তালুকদার মনিরুজ্জামান দেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বর্ণানামূলক পদ্ধতির পরিবর্তে বিশেøষণমূলক পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। এতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে। তিনি লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে ছিলেন। তিনি পদ-পদবি প্রত্যাশী ছিলেন না। তিনি অধ্যাপনাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তার চিন্তাধারা রাষ্ট্র গ্রহণ করলে জাতি উপকৃত হবে।
মইনুল হোসেন বলেন, দেশে জ্ঞানী-গুণীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। দেশে জ্ঞানের মৃত্যু হয়েছে। মূর্খতার রাজনীতি চলছে। দেশে এখন যে শাসন চলছে তা কোনো স্বীকৃত সমাজে চলতে পারে না। পুলিশ দিয়ে আজ নির্বাচন করা হচ্ছে। চেতনার কথা বলা হলেও আজ বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা মানা হচ্ছে না। এ নিয়ে বুদ্ধিজীবীরা কোনো কথা বলে না। স্বাধীন দেশে মানুষ আজ সাহস হারিয়ে ফেলেছে। দেশ আমাদের, এ অবস্থা আমাদেরই পরিবর্তন করতে হবে। স্বাধীন দেশে কারো একক রাজত্ব চলতে পারে না।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, দেশে এক বৈরী সময় চলছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই। রাষ্ট্র ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। তালুকদার মনিরুজ্জামান গবেষণা করে জানিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে যে ছাত্রসহ আপামর মানুষ অংশ নিয়েছিল তারা ছিল ৭৬ শতাংশ। যুদ্ধে ধনী শ্রেণী কমই অংশ নিয়েছিল। এজন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধ বলেছিলেন। বর্তমান সঙ্কট কাটাতেও আমাদের জনগণের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। যারা একক রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।
ডা: জাফরুলøাহ চৌধুরী বলেন, দেশ এখন পাকি¯Íানের মতো চলছে। আইয়ুব খানের মতোই বর্তমানে এক ব্যক্তি শাসন করছেন। এজন্য নির্বাচন রাতে হয়ে যাচ্ছে। সামনের নির্বাচনে ভোট কখন হবে আমরা জানি না। দেশের গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই। তারা আমাদের লেখা ছাপাতে সাহস পান না। আমরা কি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পুরো পাকি¯Íান হয়ে যাব?
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যাদের সত্যি সত্যি সম্মান করা যায়, তালুকদার মনিরুজ্জামান তেমন একজন মানুষ ছিলেন। তার চিন্তাধারা সমাজ ও রাষ্ট্র উন্নয়নে প্রয়োগ করা উচিত।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তালুকদার মনিরুজ্জামান দেশে কোনো অন্যায় ঘটনা দেখলে ÿীণ গলায় হলেও প্রতিবাদ করতেন। আজ তার মতো লোকের বড় প্রয়োজন ছিল। আমি তার রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।
ড. মাহবুব উলøাহ বলেন, দেশে জ্ঞানচর্চার বন্ধ্যত্ব চলছে। যে সমাজে জ্ঞানচর্চা বন্ধ হয়ে যায় সেখানে উন্নয়ন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুখ-শান্তি কিছুই থাকে না। এ পরিস্থিতি থেকে কিভাবে উত্তরণ ঘটানো যায় তা আমাদের ভাবতে হবে। তিনি বলেন, তালুকদার মনিরুজ্জামানের মতো প্রজ্ঞাবান মানুষ আগামী এক শতাব্দীতেও আমরা পাব কি না সন্দেহ। অথচ আমরা তার সম্পর্কে নীরব। রাষ্ট্র তার যথাযথ মূল্যায়ন দিতে পারে না। জ্ঞানহীন মৃত সমাজকে বাঁচাতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, তালুকদার মনিরুজ্জামান ভয়-ভীতি ও লোভহীন জ্ঞানচর্চা করতেন। তিনি কোনো প্রলোভনের শিকার হননি। কিন্তু তাকে রাষ্ট্র যথাযথ সম্মান জানায়নি। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমরা এক জ্ঞানহীন, আলোহীন সমাজে বসবাস করছি। তালুকদার মনিরুজ্জামানের মতো আনসাং হিরোর থেকে জ্ঞান নিলে প্রকৃত জাতি গঠন সম্ভব হবে।
দিলারা চৌধুরী বলেন, জ্ঞানচর্চা ছাড়া কোনো জাতি চলতে পারে না। কিন্তু দেশে জ্ঞানচর্চা হারিয়ে গেছে। এজন্য জাতি আজ দিশেহারা। এজন্য রাজনীতিও দিকনির্দেশনাহীন হয়ে গেছে। তালুকদার মনিরুজ্জামানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হয়নি। এটা রাষ্ট্রের চরম দীনতা ছাড়া আর কিছুই না।
ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বহুমাত্রিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। নিরাপত্তা বিশেøষক, সামরিক, রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশের রাজনীতির নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাকারী ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে দেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চায় অপূরণীয় ÿতি হয়েছে। এই ÿতি সহজে পূরণ হয়ার নয়। 

 


আরো সংবাদ



premium cement
কালবৈশাখীর তাণ্ডবের ২৪ ঘণ্টা পরেও মৌলভীবাজারে মিলছে না বিদ্যুৎ দেশে ৭০ শতাংশ মৃত্যু ঘটছে অসংক্রামক রোগে টিপু-প্রীতি হত্যা মামলায় ৩৩ আসামির বিচার শুরু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জন্মদিন ও পতাকা অবমাননা মামলার শুনানি ২১ জুলাই মুন্সীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শ্রমিক নিহত বেনাপোলে সাড়ে ৪ লাখ টাকার ফেনসিডিল উদ্ধার চট্টগ্রামে হুমায়ূন হত্যার প্রধান আসামি হাসান গ্রেফতার ঢাবি ভিসির সাথে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কাউন্সিলরের সাক্ষাৎ চকরিয়ায় জমির বিরোধ কেন্দ্র করে এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ আজ জেলের ছদ্মবেশে পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হলো সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা

সকল