প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে কোনো শিশু ও নারী নির্যাতনের শিকার না হয়। তিনি বলেন, ‘কেবল আমাদের দেশে নয়, আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও দেখেছি যে, শিশু ও নারীদের ওপর নির্যাতন মানসিক রোগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তাই নারী-পুরুষ প্রত্যেককেই সচেতন থাকতে হবে, যাতে কোনো শিশু ও নারী নির্যাতিত না হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে যাতে শিশু ও নারীরা সুরক্ষিত থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন। তিনি গতকাল সকালে রাজধানীতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া পদক-২০১৯ বিতরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মূলত পুরুষরাই নারীদের ওপর নির্যাতন চালায়। তাই তাদের চিন্তা করা উচিত যে, তাদেরও মেয়ে শিশু রয়েছে এবং তাদের সন্তান যদি অন্য কারো দ্বারা নির্যাতিত হয় তাহলে তারা কী করবে। সে কারণেই এ ব্যাপারে সচেতনতা খুবই জরুরি।
নারী পুনর্জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৯তম জন্ম এবং ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সারা দেশে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হচ্ছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা।
মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার স্বাগত বক্তৃতা এবং রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
রোকেয়া পদক গ্রহণকারীদের পক্ষে বেগম সেলিনা খালেক পদক গ্রহণের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নারী ও সামাজিক উন্নয়নে তাদের অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিতে পাঁচজন নারীকে রোকেয়া পদক-২০১৯ প্রদান করেন।
পদকপ্রাপ্তরা হচ্ছেন বেগম সেলিনা খালেক, অধ্যক্ষ শামসুন নাহার, ড. নূরুন নাহার ফয়জুন্নেছা (মরণোত্তর), মিস পাপড়ি বসু এবং বেগম আখতার জাহান।
শিশু ও নারী নির্যাতন রোধে সরকারের বিভিন্ন আইন প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, এ জন্য সচেতনতা আবশ্যক। তিনি বলেন, আমরা আইন করেছি। কিন্তু আইন করলেই সবকিছু হয়ে যায় না। এ জন্য শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে সচেতনতাও প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, শিশু ও নারী সমাজের কল্যাণে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, যৌতুক প্রতিরোধ আইন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন এবং নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও জাতীয় শিশু উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইন প্রণয়নের ফলে সাধারণ মানুষ ও মেয়েদের মাঝে সচেতনতা গড়ে উঠছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সব কিছুই করছে। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া চেয়েছিলেন একজন নারী যে কোনো রাষ্ট্রের প্রধান হবেন এবং তিনি পুরুষ ও পরিবার ও সমাজের সাথে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাবেন এবং সমান অধিকার ভোগ করবেন। তিনি বলেন, আমরা অন্তত এটা বাস্তবায়ন করেছি এবং আমাদের নারীসমাজ এখন বিজয়ীনীর বেশে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এগিয়ে চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ নারী উন্নয়নে বেগম রোকেয়ার সারথী হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছেÑ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অগ্রগতি আমাদের ধরে রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যার অর্ধেককে বাদ দিয়ে দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা বলেন, পুরুষ-নারীর সম্মিলিত প্রয়াসে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেশকে আরো এগিয়ে নিতে তার সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
শিক্ষায় নারীদের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেয়েরা এখন পরীক্ষায় ছেলেদের তুলনায় ভালো করছে। কারণ তারা (মেয়েরা) তাদের লেখাপড়ায় মনোযোগী। তিনি বলেন, মেয়েদের মধ্যে সৃষ্ট আত্মবিশ্বাস এবং তাদের অভিভাবকরা তাদের আরো লেখাপড়ায় উৎসাহ জোগাচ্ছে। এটা সমাজের বিবর্তন ও পরিবর্তনের জন্য হয়েছে। এটা দেশের জন্য একটা খুব ভালো দিক।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্রীড়াঙ্গনেও মেয়েরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। এ প্রসঙ্গে তিনি নেপালে সাউথ এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট ও ভারোত্তলনে মেয়েদের স্বর্ণপদক জয়ের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমরা সবাই সম্মিলিত প্রয়াসে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, নারী নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদফতরের মাধ্যমে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের আধুনিকায়নের কাজ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।
নয়াদিল্লিতে অগ্নিকাণ্ডে ৪৩ জনের প্রাণহানিতে শোক প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল এক শোকবার্তায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৩ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী এই দুর্ঘটনাকে মর্মান্তিক হিসেবে অভিহত করে নিহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা জানিয়েছেন। তিনি বিপর্যয়কবলিত পরিবারগুলোকে ধৈর্যের সাথে এই দৈবদুর্বিপাক মোকাবেলা করা এবং আহতদের আশু রোগমুক্তির মাধ্যমে তাদের দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা জানান।
শেখ হাসিনা দুর্ঘটনায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর উদ্ধার ও পুনর্বাসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতীয় নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা এ কথা পুনর্ব্যক্ত করেন, এ ধরনের হৃদয়বিদারক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সব সময় ভারতের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ মানসিকতায় প্রস্তুত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা