২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অর্থনীতি ভালো, সিপিডির চেয়ে আমরা বড় সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী

-

দেশের অর্থনীতি ভালো বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আরো বলেছেন, সিপিডি তাদের কাজ করছে, আমরা আমাদের কাজ করছি। সিপিডির চেয়ে আমরা বড়। গতকাল বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় সরকারের ১০০ দিন নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির মূল্যায়ন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বেশ কিছু সূচক বাস্তবসম্মত নয় এমন মন্তব্য করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ ( সিপিডি)। এসব বিষয়ে সাংবাদিকেরা অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে যা আছে এগুলো আগে আমাকে দিতে বলেন। তাদের থেকে আমরা বড়। তাদের কাছে কি আছে সেগুলো আমাদের দিক।’ দেশের অর্থনীতি কেমন- প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি ভালো রয়েছে। শেয়ারবাজার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আবার শেয়ারবাজার নিয়ে প্রশ?
গত মঙ্গলবার সিপিডির এক সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সরকারের ১০০ দিনের কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে যেয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সরকারের দেয়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। সিপিডি কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরে জিডিপির হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে। সিপিডি বলেছে, উৎপাদন খাতনির্ভর এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। বিবিএসের হিসাব মতে, চামড়া খাতে প্রথম প্রান্তিকে সাড়ে ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অথচ রফতানিতে নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ শতাংশ; কিন্তু চলতি মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। আবার গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১২ শতাংশ; কিন্তু গতবার একই সময়ে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৮ শতাংশ। সিপিডির মতে, বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের মানে হলো শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে।
এ বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক যে প্রবৃদ্ধি দেখি তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উঁচু, প্রশংসনীয় এবং অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়। তবে যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে তাতে ব্যক্তিখাতের বাড়তি কোনো ভূমিকা আমরা দেখিনি। এই উন্নয়নের জন্য যে ধরনের কর আহরণ দরকার তা আমরা দেখলাম না। ব্যক্তিখাতে যে ধরনের ঋণপ্রবাহ বাড়ার কথা তা আমরা দেখলাম না। পুঁজিপণ্যের আমদানি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। সেই সাথে ব্যাংক খাতে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে যে ধরনের চাঞ্চল্য থাকে তা-ও দেখলাম না। প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে ধরনের চলক থাকে, সে চলকগুলোর প্রতিফলন কিন্তু আমাদের কাছে ধরা পড়ছে না।
১১২ কোটি টাকার গম কিনছে সরকার : ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম কিনছে সরকার। এই গম কিনতে ব্যয় হবে ১১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্যকেজ-১১ এর আওতায় ৫০ হাজার টন গম ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিডেট নামে একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এ গম সরবরাহ করবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক কোটেশনে মোট চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এদের মধ্যে মেসার্স অ্যাগোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি টন গমের দাম ২৬৭ দশমিক ৯৮ ডলার, মেসার্স ফনিক্স গ্লোবাল ডিএমসিসি ২৭৪ দশমিক ৪৭ ডলার, মেসার্স সুইস সিঙ্গাপুর ওভারসিস এন্টারপ্রাইজ ২৭৫ দশমিক ৯২ ডলার এবং মেসার্স অ্যাসনটন এফএফআই ২৭৭ ডলার দামে সরবরাহ করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট কমিটি দরপত্রে বর্ণিত শর্তাবলি যাচাই বাছাই করে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের দরকে সর্বনি¤œ দর হিসেবে ঘোষণা দেয়। গম সরবরাহ করার জন্য এ প্রতিষ্ঠানটির নাম সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে সুপারিশ করলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মোট গমের ৬০ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এবং বাকি ৪০ শতাংশ মংলা বন্দর দিয়ে সরবরাহ করবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি ক্রয় প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়েছে কমিটি। প্রস্তাবটি ছিল জিওবি ও এডিবির অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বাস্তবায়নাধীন ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর এমপি-০১ এর লট-ডব্লিউপি-০৫ এর ক্রয় প্রস্তাব। কমিটি এ প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়নি।
এ ছাড়া কমিটি স্থানীয় সরকার বিভাগের আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৫টি পার্টনারশিপ এলাকার প্রাথমিক স্বাস্ব্যসেবা প্রদানকল্পে ওই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত এনজিও/সংস্থার সাথে ৯ মাস মেয়াদে (এপ্রিল-ডিসেম্বর, ২০১৮) পার্টনারশিপ চুক্তি ভূতাপেক্ষভাবে বর্ধিতকরণের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর সুপারিশ করেছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগম বলেন, প্রকল্পটি ১৯৯৮ সাল থেকে চলছে। এ প্রকল্পে নিযুক্তদের ৯ মাসের বেতন বাবদ প্রায় ৫২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেহেতু প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায় চলছে কাজেই এটি পরিকল্পনা কমিশনের দেখার দায়িত্ব। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মোট ৪টি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব এসেছিল। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এর ধারা ৬৮(১) অনুযায়ী জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য এনটিএমসি-এর ০১ (একটি) ভেহিক্যাল মাউন্টেড মোবাইল ইন্টারসেপ্টর ক্রয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) এ উল্লিখিত আর্থিক সীমা শিথিল করাসহ সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি অনুসরণের নীতিগত অনুমোদনের জন্য। কিন্তু বৈঠকের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না বিধায় প্রস্তাবটি ফেরত দেয়া হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও রাশান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা চুক্তির আওতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিউক্লিয়ার ফুয়েল সাপ্লাইয়ের জন্য একক উৎস হিসেবে রাশান ফেডারেশনের নির্ধারিত ঠিকাদার টিভিইএল, জয়েন্ট স্টক কোম্পানির কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে নিউক্লিয়ার ফুয়েল ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় ২ডি নন-এক্সক্লুসিভ মালটি ক্লায়েন্ট সেসমিক সার্ভে পরিচালনার লক্ষ্যে পুনঃদরপত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বিডে সর্বোচ্চ মূল্যায়িত বিডার কোম্পানির সাথে চুক্তি সম্পাদনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
এ ছাড়াও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরভুক্ত ‘ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পার্শ্বে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি অনুসরণে চীনা জিটুজি ভিত্তিতে অর্থায়নে বাস্তবায়নের পরিবর্তে সীমিত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement