২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ছাড়া কারাগারে বিচার করা হচ্ছে

-

সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ছাড়া কারাগারে আদালত বসিয়ে অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিচার করার বিষয়টি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছে তুলে ধরেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির সাথে তার খাস কামরায় দেখা করে সুপ্রিম কোর্টের সাথে আলোচনা না করে কারাগারে আদালত স্থাপন করে জারি করা প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি তুলে ধরেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারকাজ পরিচালনার জন্য হঠাৎ করে আইনবহির্ভূতভাবে কারাগারে আদালত স্থানান্তর করা হয়েছেÑ অভিযোগ করে তারা প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চান। জবাবে প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের বলেন, আমি বিষয়টি জুডিশিয়াল নয়, প্রশাসনিকভাবে দেখব।
আইনজীবীরা বলেন, আপনি যেহেতু বিচার বিভাগের প্রধান, তাই বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে দেখতে পারেন। তখন প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিশেষভাবে দেখার আশ্বাস দেন বলে জয়নুল আবেদীন জানান।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, এ জে মোহাম্মদ আলী, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, নিতাই রায় চৌধুরী, বদরুদ্দোজা বাদল প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করেন। গতকাল বেলা ১টা ২০ মিনিট থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা তারা প্রধান বিচারপতির সাথে কথা বলেন। আলোচনাকালে তিনি (প্রধান বিচারপতি) তার ক্ষমতাবলে এ বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জয়নুল আবেদীন জানিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতির কাছে আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো না উল্লেখ করে লিখিত আবেদনে বলেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) গুরুতর অসুস্থ, হাঁটতে পারেন না, যা সরকারও স্বীকার করেছে। তবুও সরকার তার যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
লিখিত আবেদনে আরো বলা হয়, দেশের কারাগারের তালিকা থেকে পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি এখনো বাদ দেয়া হয়নি। সে কারণে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ছাড়া পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থাপন অবৈধ ও আইনবহির্ভূত। পরিত্যক্ত কারাগারে কোনো বিচারকাজ চলতে পারে না। যদি চলে, তা হবে অবৈধ। লিখিত আবেদনে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে আরো বলা হয়েছে, আমরা আপনার কাছে অনুরোধ করছি, যারা বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে এবং যে বিচারিক কর্মকর্তা তার বিচাররিক সীমা লঙ্ঘন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশ (হাইকোর্ট বিভাগ) ১৯৭৩ বিধি অনুযায়ী তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক।
প্রধান বিচারপতির সাথে সাক্ষাৎ শেষে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মনে করেছি সংবিধানের অভিভাবক সুপ্রিম কোর্ট। আর সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবক হলেন প্রধান বিচারপতি। তাই কারাগারের ভেতরে আদালত স্থাপনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাথে আলোচনা না করে এ ধরনের কোনো প্রজ্ঞাপন সরকার জারি করতে পারে না। তাই এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সাথে সাক্ষাৎ করে আমরা বলেছি, আপনি বিচার বিভাগের অভিভাবক। আমরা মনে করি, মাসদার হোসেন মামলার মধ্য দিয়ে আপনার ও সুপ্রিম কোর্টের সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই আপনার সাথে আলোচনা ছাড়া রাতের অন্ধকারে গেজেট করে এ ধরনের আদালত স্থাপন হতে পারে না।
জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ না করেই এ আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে। তাই বিষয়টি দেখার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি। আমরা প্রধান বিচারপতির সামনে আইনগত দিকগুলো তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, সরকারের এ গেজেট, আইন ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শ না করে রাতারাতি এ প্রজ্ঞাপন করা বেআইনি হয়েছে। জেলখানার মধ্যে সরকার আদালত বসাতে পারে না। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ না করে এটা করা যায় না। অথচ হঠাৎ করে রাতের বেলা নিয়ম ও আইনবহির্ভূতভাবে জেলখানার একটি কক্ষকে অস্থায়ী আদালত বানানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শ করার বিধান থাকলেও সেটি করা হয়নি।
তিনি বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর আপনারা দেখেছেন, অসুস্থ অবস্থায় জোর করে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া বসতে পারেন না, দাঁড়াতে পারেন না, হাঁটতেও পারেন না। এ অবস্থায় তাকে হাজির করা হয়েছে। আইনজীবীদের কোনো জুডিশিয়াল নোটিশ পর্যন্ত দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে একটা জুডিশিয়াল আদেশ দিয়ে আইনজীবীদের নোটিশ করতে হয়। সেই নোটিশ করা হয়নি। যেহেতু এটা ওপেন ট্রায়ালও না, সে কারণে আমরা সেখানে উপস্থিত হতে পারিনি। পরে এ আদালত ১২ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা মনে করেছি, সংবিধানের অভিভাবক সুপ্রিম কোর্ট। আর সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবক প্রধান বিচারপতি। সুতরাং এ ধরনের গেজেট নোটিফিকেশন জারি ১৯ (বি) চ্যাপ্টার ১ সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ হাইকোর্ট রুলস ১৯৭৩ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের পাওয়ার। সুপ্রিম কোর্টের সাথে আলোচনা না করে সরকার এ ধরনের কোর্ট স্থাপন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে না।
জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধান বিচারপতিকে আমরা এও বলেছি, আপনার সাথে আলোচনা না করে রাতের অন্ধকারে এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি বিচার বিভাগের জন্য খুবই দুঃখজনক। কোনো বিচারালয় এভাবে স্থানান্তর করা যায় না। আমরা বিশ্বাস করি, রাতের অন্ধকারে এ রকম একটি আদালত বসানোর গেজেট করার আপনি অনুমতি দেননি।

 


আরো সংবাদ



premium cement