২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজধানী কিয়েভে ড্রোন ও মিসাইল হামলা

ছবির ক্যাপশান, রাশিয়ার অত্যাধুনিক কিনঝাল মিসাইল যা শব্দের চেয়েও পাঁচ গুণ দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে। - ছবি : বিবিসি

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আবারো বড় ধরনের মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া, ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা যাকে ‘নজিরবিহীন ব্যাপক’ আক্রমণ বলে বর্ণনা করেছেন। তারা বলছেন রাজধানী কিয়েভের ওপর এত ঘন ঘন মিসাইল আক্রমণের ঘটনা অভূতপূর্ব।

ইউক্রেন বলছে, কিয়েভ লক্ষ্য করে রাশিয়ার ছোড়া ১৮টি মিসাইলই গুলি করে মাটিতে নামানো হয়েছে এবং ভিডিও ফুটেজেও দেখা যাচ্ছে বিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থা দিয়ে সেগুলোকে শহরের আকাশে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।

রাজধানী কিয়েভ লক্ষ্য করে সবশেষ এই আক্রমণ এ মাসেই রাশিয়ার অষ্টম হামলা।

ইউক্রেন বলছে এ সময় তারা রাশিয়ার ছয়টি সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ধ্বংস করেছে।

কিনঝাল মিসাইল
রাশিয়ার এই ‘কিনঝাল’ হাইপারসনিক মিসাইল শব্দের চেয়েও পাঁচ গুণ দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে। এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছিলেন এসব মিসাইল অপ্রতিরোধ্য।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর দেয়া বিবৃতিতে এসব মিসাইল কিভাবে ধ্বংস করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে তারা দাবি করছে এতে ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী ‘অবিশ্বাস্য সাফল্য’ অর্জন করেছে।

এর আগেও রাশিয়া তাদের কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণ চালিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থা প্যাট্রিয়ট দিয়ে সেই হামলা প্রতিহত করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র গত এপ্রিল মাসে ইউক্রেনের কাছে প্যাট্রিয়ট সরবরাহ করেছে।

ইউক্রেন থেকে পাওয়া খবরে বলা হচ্ছে মঙ্গলবার ভোরে চালানো এসব হামলায় অন্তত তিনজন আহত হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন তীব্র এই হামলায় ড্রোন এবং মিসাইল দুটোই ব্যবহার করা হয়েছে।

কিয়েভে কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা এর সবগুলোই ধ্বংস করেছে।

রুশ বাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালানোর ইউক্রেনীয় পরিকল্পনার মধ্যেই রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তাদের হামলা জোরদার করেছে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোরে এসব হামলা চালানো হয়।

কিয়েভে ঘন ঘন বিস্ফোরণ
শহরের কেন্দ্রে প্রচুর সংখ্যক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় শহর কর্তৃপক্ষের তরফে বাসিন্দাদের জানানো হয় বিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। তাদের ঘরের জানালা এবং আকাশ থেকে পড়া মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ থেকেও দূরে থাকতে বলা হয়।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো বলেছেন শহরের চিড়িয়াখানাসহ কিয়েভের মাঝখানে মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ পড়েছে।

কিয়েভের একজন বাসিন্দা কেসেনিয়া বলেন তারা যখন ‘একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ’ শুনতে পান ওই সময় তিনি ও তার স্বামী ঘুমিয়ে ছিলেন। হামলার তীব্রতাকে তিনি স্টার ওয়ার্স সিনেমা অথবা অ্যাকশনধর্মী ভিডিও গেমের সাথে তুলনা করেন।

আরেকজন বাসিন্দা ইয়েভেন পেত্রোভ বলে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম তাদের বাড়ি রুশ আক্রমণের তীব্রতায় কেঁপে ওঠেছে।

বলা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি হামলা চালানো হয় কিয়েভের সলোমায়ানস্কি এলাকায় যেখানে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত।

উত্তর দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে আক্রমণ
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভালেরি জালুঝনি বলেছেন রাশিয়া রাজধানী কিয়েভের উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক থেকে শহরের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে এবং এসব হামলায় আকাশ, নৌ এবং স্থলভিত্তিক মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে।

কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান শেরি পপকো বলছেন, ‘স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে।’

তিনি বলেন,‘প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, শত্রুদের এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগই কিয়েভের আকাশে শনাক্ত করে সেগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে।’

জেনারেল জালুঝনি বলেছেন সর্বশেষ এ হামলায় রাশিয়া যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে তার মধ্যে রয়েছে ছয়টি কিনঝাল হাইপারসনিক মিসাইল।

এর আগে রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল বিশ্বের কোনো বিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থা দিয়েই এই ক্ষেপণাস্ত্রকে থামানো সম্ভব নয়।

এসব মিসাইল শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে। এবং এই গতির কারণে এগুলোকে শনাক্ত করা কঠিন। এছাড়াও এগুলো অল্প উচ্চতায় ওড়ার কারণে রাডারের চোখকে ফাঁকি দিতে পারে।

এই কিনঝাল মিসাইল মাঝপথে তার গতিপথও পরিবর্তন করতে সক্ষম।

ইউক্রেন বলছে গত সপ্তাহে তারা প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ছোড়া এরকম কিনঝাল মিসাইল গুলি করে ধ্বংস করেছে।

সূত্র ; বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement