২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পপ গান অসাধারণভাবে ধারণ করতেন জানে আলম

-

বাংলাদেশে পপ গানকে যারা পরিচিত করিয়েছেন তাদের অন্যতম জানে আলম। বিভিন্ন ধরনের গান করলেও পপ গান তাকে আলাদাভাবে পরিচিতি দিয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর তার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ কথা বলেছেন ফকির আলমগীর।
তিনি বলেন, জানে আলম পপ গানটাকে অসাধারণভাবে ধারণ করতেন। আবার মাইজভাণ্ডারীসহ লালন, শাহ আব্দুল করিম এবং অন্যান্য লোকগানগুলোকেও তিনি তুলে আনতেন নিজস্ব স্টাইলে, যা তাকে সে সময় খ্যাতি এনে দেয়। গানের পাশাপাশি তার ভালো দিক ছিল, মানুষের সঙ্গে সুন্দর যোগাযোগ স্থাপন করা। এ জন্য সাংগঠনিকভাবেও অন্য শিল্পীদের থেকে তিনি এগিয়ে থাকতেন। যে কারণে তার অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দোয়েল প্রোডাক্টস সঙ্গীত বাজারে ভালো অবদান রাখতে পেরেছে। কুমার বিশ্বজিৎ, শুভ্রদেবসহ অনেক ভালো ভালো শিল্পীর কাজ এই প্রতিষ্ঠান থেকে বের হতো। তিনি বলেন, অনেকে মনে করছেন বাংলাদেশের পপ সঙ্গীতের শুরুটা যাদের হাত ধরে হয়েছিল তাদের মধ্যে জানে আলম একজন। এখানে একটি বিষয় ভুল হচ্ছে, অসাধারণ গায়কীর এই শিল্পীকে আমরা অরো একটু পরে পেয়েছি। মূলত ষাটের দশকের শেষে পপ সঙ্গীত নিয়ে কাজ শুরু করি আমরা। আমরা বলতে আজম খানের নেতৃত্বেই এটি হয়েছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর সেটা আরো প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর দিকে আজম খান, ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহিদ ও আমি ছিলাম। এর কিছ ুদিন পর যুক্ত হন নাজমা জামান ও পিলু মমতাজ। তারপরে পপ সঙ্গীতে আসেন জানে আলম। জানে আলমের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, সদ্য স্বাধীন বিধ্বস্ত বাংলাদেশে যখন যে যার মতো গাইবার চেষ্টা করছিলাম, ১৯৭২ সালের তেমনই এক ঘোরলাগা সন্ধ্যায় আমাদের পরিচয়। কারণ, আমরা তো মূলত একই পথের পথিক। আমাদের রক্তে বইছিল তখন পপ গানের স্রোত। অথচ ‘আমাদের’ জন্ম, গ্রাম, শিক্ষা, বেড়ে ওঠা- পুরো আলাদা আলাদা আবহে। এখানে আমি ‘আমাদের’ বলতে বোঝাচ্ছিÑ ফিরোজ সাঁই, আজম খান, আমি (ফেরদৌস ওয়াহিদ), জানে আলম আর ফকির আলমগীরের কথা। বলতে চাইছি, এই পাঁচ পপ শিল্পীর মধ্যে জনপ্রিয়তা, যোগ্যতা ও ভাগ্যÑ কারো কম কারো বেশি। এটা তো স্বাভাবিক নয়? ফিরোজ সাঁই তো গাইতে গাইতে সেই কবে মারাই গেলো। গানের ফসল আর ঘুরে তুলতে পারলো না। আজম খানকে আমরা পপ গানের মুকুট বলি। এটাও একদম সত্যি। কিন্তু জানে আলমকে তো নাকোচ করার সুযোগ নেই। সেও কম জনপ্রিয় ও যোগ্য নন। শুরু থেকেই নিজে যেমন গাইতেন তেমনি অন্যদের গাওয়ানোর জন্য হাসিমুখে জীবন দিয়ে দিতেন।
উল্লেখ্য মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বুধবার সকাল ১০টায় মগবাজারে জানে আলমের বাসভবন এলাকায় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে জন্মস্থান মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে চিরশায়িত হয়েছে নন্দিত এই শিল্পী।


আরো সংবাদ



premium cement