চলে গেলেন সুরকার আলী হোসেন
- আলমগীর কবির
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:১৩
শাবানা আলমগীর পরিচালিত কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘ব্যথার দান’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সুরস্রষ্টা সঙ্গীত পরিচালক আলী হোসেন আর আমাদের মাঝে নেই। বুধবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮১। আমাদের দেশে আজো গ্রাম-গঞ্জে বিয়ে বাড়িতে ‘হলুদ বাটো মেহেদি বাটো’ গানটি বিয়ের সময় শোনা যায়। যেন এই গান ছাড়া বিয়ের আয়োজনই যেন জমে উঠে না। অন্য দিকে উপমহাদেশের গজল সম্রট মেহেদী হাসানের কণ্ঠের ‘ডাকো যতো না নয়নও দু’হাতে কাজলও মেঘ ঘুমাতে দেবে না’সহ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অসংখ্য শ্রোতা দর্শকপ্রিয় গানের সুরস্রষ্টা তিনি। আলী হোসেনের বাবার বাড়ি কুষ্টিয়া। কিন্তু তার জন্ম হয়েছে ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ নানার বাড়ি কুমিল্লায়। বাবার চাকরির সুবাদে পাকিস্তানে করাচিতে তাকে পড়াশোনা করতে হয়েছিল। সেখানেই একসময় নজরুল একাডেমিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে তার চাকরি হয়। বাবা মোহাম্মদ ইয়াকুবের গানের প্রতি দুর্বলতা ছিল বিধায় বাবার কাছেই তার গানে হাতেখড়ি। তবে নজরুল একাডেমিতে চাকরি করার একই প্রতিষ্ঠানের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিক্ষক পিয়ারে খানের কাছেও তিনি গান শিখেছেন। এভাবেই ধীরে ধীরে গানের সাথে তার সম্পৃক্ততা। ১৯৬৪ সালে আলী হোসেন দেশে আসেন। দেশে আসার পর নানানভাবে গানের কাজেই সময় কেটে যায় তার। ১৯৬৬ সালে তার সুর সঙ্গীতে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র মোস্তাফিজ পরিচালিত ‘ডাক বাবু’ মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রেই তিনি শাহনাজ রহমতুল্লাহকে দিয়ে ‘হলুদ বাটো মেহেদী বাটো’ গানটি করান। একই চলচ্চিত্রে গান করেন সৈয়দ আব্দুল হাদীও। আলী হোসেনের কথা থেকে জানা যায় শাহনাজ রহমতুল্লাহ ও সৈয়দ আব্দুল হাদী তার হাত ধরেই চলচ্চিত্রের গানে তাদের অভিষেক ঘটে। একই চলচ্চিত্রে আব্দুল হাদীর কণ্ঠে ছিল ‘চাতুরী জানে না মোর বধূয়া’। ‘ডাক বাবু’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন আজিম সুজাতা। চলচ্চিত্রটি সে সময় বেশ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। গানগুলো জনপ্রিয় হওয়ার কারণে একজন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আলী হোসেনকে। এরপর ঢাকায় বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রের কাজ করার পাশাপাশি উর্দু ‘ছোট সাহেব’, ‘দাগ’, ‘আনাড়ি’, ‘কুলি’ ইত্যাদি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করেন আলী হোসেন। সেই সময় উর্দু থেকে বাংলায় যেসব চলচ্চিত্র হয়েছে সেসব চলচ্চিত্রের বাংলা গান বেশির ভাগই আলী হোসেনই করতেন। সেই সময়ে আলী হোসেনের হাত দিয়ে সৃষ্টি হয় ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেওনা’, ‘আরে ও প্রাণের রাজা তুমি যে আমার’, ‘এ আকাশ কে সাক্ষী রেখে এ বাতাসকে সাক্ষী রেখে’, ‘ও দুটি নয়নে স্বপনে চয়নে নিজেরে যে ভুলে যায় তুলনা খুঁজে না পায়’, ‘কে তুমি এলেগো আমার এ জীবনে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান। এসব গানের অনবদ্য সুর সঙ্গীত পরিচালনার জন্য সে সময় আলী হোসেনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। তারই হাত ধরে সঙ্গীতে সম্পৃক্ততা ঘটে প্রবাল চৌধুরী ও উমা খানের। গজল স¤্রাট মেহেদী হাসান যখন খুব ব্যস্ত সেই ব্যস্ত সময়ে তিনি ‘রাজা সাহেব’ চলচ্চিত্রের জন্য মেহেদী হাসানকে দিয়ে একটি গান করান। গানটি ছিল ‘ঢাকো যতো না নয়নও দু’হাতে, বাদলও মেঘ ঘুমাতে দেবে না’। চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর এই গানটি সেই সময় ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। এই গানের কারণেই চলচ্চিত্রটি দেখতে দর্শকের উপচেপড়া ভিড় ছিল। খসরু নোমান পরিচালিত ‘রাজা সাহেব’ চলচ্চিত্রের এই গানে লিপসিং করার সৌভাগ্য হয়েছিল চিত্রনায়ক আলমগীরের। এতে আলমগীরের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন রোজিনা। তারপরও যত সময় যায় এই গান যেন ইতিহাস হয়ে যায়। মেহেদী হাসানের নিজেরও এই গান খুব প্রিয় ছিল। মৃত্যুর এক মাস আগে কথা হয় আলী হোসেনের সাথে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যারা এক সাথে কাজ করতাম যেমন খান আতাউর রহমান, সত্য সাহা আমরা গান সম্পর্কে জেনে বুঝে গানের পৃথিবীতে বিচরণ করতাম। যে কারণে এমন কালজয়ী গান সৃষ্টি হয়েছে। আমরা গান করেছি ঠিকই কিন্তু গোটা পৃথিবীর গানের জগৎ সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা করতাম। গানের গভীরে গিয়ে গানকে বুঝার চেষ্টা করতাম। সত্যিকারের সুরকার সঙ্গীত পরিচালক হতে হলে গানকে বুঝতে হবে, সুর কী তা বুঝতে হবে তা না হলে কোনোভাবেই ভালো গান করা সম্ভব নয়। আমরা যে সময় গান করেছি তখন পাশের দেশের অনেক গানই এখানে বাজার সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা আমাদের গান দিয়ে সেই বাজারকে বিতাড়িত করে আমাদের গানই প্রতিষ্ঠিত করেছি। আলী হোসেন এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। আলী হোসেনের স্ত্রী সালেহা খাতুন। একমাত্র ছেলে আসিফ হোসেন আমেরিকায় থাকেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা