২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সমঝোতা করেও আ'লীগের স্বতন্ত্রের কাছে কুপোকাত লাঙ্গল

সমঝোতা করেও আ'লীগের স্বতন্ত্রের কাছে কুপোকাত লাঙ্গল - প্রতীকী ছবি

বিএনপি-জামায়াতবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতায় আসন বরাদ্দ নিয়েও সুবিধা করতে পারেনি জাতীয় পার্টি (জাপা)। আওয়ামী লীগের সাথে ভাগাভাগি করে পাওয়া ২৬টি আসনের মধ্যে মাত্র ১১টিতে জিতেছে জাপার প্রার্থীরা। বাকি আসনগুলোতে হেরেছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে।

আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া ২৬টি আসনের মধ্যে নৌকাবিহীন রংপুর-৩ আসনে জিতেছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এছাড়া, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, কুড়িগ্রাম-১ আসনে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, বগুড়া-২ আসনে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এ কে এম সেলিম ওসমান, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মুজিবুল হক চুন্নু,পটুয়াখালী-১ আসনে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, বরিশাল-৩ আসনে গোলাম কিবরিয়া টিপু, ফেনী-৩ আসনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আসনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং সাতক্ষীরা-২ আসনে মো: আশরাফুজ্জামান আশু বিজয়ী হয়েছেন।

অন্যদিকে, ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগের সাথে আসন ভাগাভাগি করেও হারতে হয়েছে লাঙ্গলের প্রার্থী জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরকে। এ আসনে জিতেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: খসরু চৌধুরী। নিকটতম আওয়ামী লীগেরই আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী। শেরিফা কাদের এখানে প্রতিযোগীতাতেই আসতে পারেননি।

রংপুর-১ আসনে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মো: আসাদুজ্জামান বাবলু। এখানে দ্বিতীয় হয়েছেন জাপার সাবেক মহাসচিব স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙা। এখানেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি লাঙ্গলের প্রার্থী জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। হবিগঞ্জ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর কাছে হেরেছেন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী।

অনেক নাটকীয়তা ও দেনদরবারের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছিল জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। সব মিলে এবার ২৬৫টি আসনে দলটির প্রার্থী ছিল। শেষ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া ২৬ আসনের ১১টিতে জিততে পেরেছেন জাপার প্রার্থীরা। সমঝোতার বাইরে কোনো আসনে দলের প্রার্থী জিততে পারেননি।

বর্তমানে দলটির ২৩ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। আর সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য রয়েছেন চারজন।

একাদশ সংসদের ২৩ জন সদস্যের মধ্যে ঢাকায় সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, গাইবান্ধায় শামীম হায়দার পাটোয়ারি, ময়মনসিংহে ফখরুল ইমাম, সুনামগঞ্জে পীর ফজলুর রহমান, কুড়িগ্রামে পনির উদ্দিন আহমেদ, নীলফামারীতে আহসান আদেলুর রহমান ও রানা মোহাম্মদ মো: সোহেল, নারায়ণগঞ্জে লিয়াকত হোসেন খোকা, বরিশালে নাসরিন জাহান রত্মা, বগুড়ায় নুরুল ইসলাম তালুকদারসহ ১৪ জন সংসদ সদস্য হতে পারেননি।

বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ ও তার ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ এবার নির্বাচন করেননি।

আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতায় আসন না পেয়ে কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ঢাকা-৬ আসন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এর বাইরে রংপুরে মসিউর রহমান রাঙা ও পিরোজপুরে রুস্তম আলী ফরাজী দল থেকে বাদ পড়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছেন। তারাও হেরেছেন।

২০১৪ ও ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতা করে জাপা নির্বাচন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাপাকে ৩৩টি আসন দেয়া হয়েছিল। সেবার তারা আওয়ামী লীগের সাথে মিলে মন্ত্রীসভায় থাকে, আবার বিরোধী দলেরও ভূমিকা পালন করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সমঝোতার মাধ্যমে জাপা ২৩টি আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দল হয়।

এবার দলটি গতবারের অর্ধেকের কম আসন পেল।

রোববার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর-৩ আসনের ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণের সময় জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘সবসময় আমাদের আশঙ্কা ছিল যে নির্বাচনে নিয়ে এসে আমাদের কোরবানি করা হবে। কোরবানি করে নির্ভেজাল, একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হবে। এসব আশঙ্কা সত্যি হয় কি-না তা বিকেল হলেই বোঝা যাবে।’


আরো সংবাদ



premium cement